Thursday, June 07, 2012

টেলিযোগাযোগ বলতে মূলত: বোঝায় যোগাযোগের উদ্দেশ্যে দূরবর্তী কোনো স্থানে তারের মাধ্যমে সংকেত তথা বার্তা পাঠানোকে। শুরুতে টেলিফোনই ছিল একমাত্র টেলিযোগাযোগ যন্ত্র। পরবর্তীতে তারহীন বার্তা প্রেরণ বা বেতার টেলিযোগাযোগ আবিষ্কার হয়েছে রেডিও যার প্রকৃষ্ট উদাহরণ। বর্তমানে ইলেক্ট্রনিক ট্রান্সমিটারের ব্যবহার করে তড়িৎ চুম্বক তরঙ্গের সাহায্যে সংকেত পাঠান হলেও আগেকার যুগে ধোঁয়ার সংকেত, ঢোল অথবা পতাকার মাধ্যমে সংকেত পাঠান হতো। বর্তমানে টেলিযোগাযোগ বিশ্বাব্যাপী বিস্তৃত এবং এ পদ্ধতিতে ব্যবহৃত যন্ত্র যেমন টেলিফোন, রেডিও, টেলিভিশন এবং ওয়াকিটকি সর্বত্র দেখতে পাওয়া যায়। এ সকল যন্ত্রকে পরস্পরের সাথে সংযুক্ত করার জন্য বিভিন্ন ধরনের নেটওয়ার্ক রয়েছে। যেমনঃ পাবলিক টেলিফোন নেটওয়ার্ক, রেডিও নেটওয়ার্ক, কম্পিউটার নেটওয়ার্ক এবং টেলিভিশন নেটওয়ার্ক। ইন্টারনেট এর মাধ্যমে একটি কম্পিউটারের সাথে আরেকটি কম্পিউটটারের সংযোগ স্থাপনও একপ্রকার টেলিযোগাযোগ।


টেলিযোগাযোগে ব্যবহৃত প্রযুক্তি


টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থার মূল অংশগুলো হলো তিনটি:


  • ট্রান্সমিটার বা প্রচারযন্ত্রঃ এটি বার্তাকে প্রচার উপযোগী সংকেতে পরিণত করে।
  • ট্রান্সমিশন মিডিয়াম বা প্রচার মাধ্যমঃ যার মধ্য দিয়ে সংকেত বা সিগনাল পাঠানো হয়। যেমনঃ বায়ু।
  • রিসিভার বা গ্রাহকযন্ত্রঃ এটি সংকেত গ্রহণ করে এবং সংকেতকে ব্যাবহারযোগ্য বার্তায় পরিবর্তন করে।

উদাহারণস্বরূপ বেতার সম্প্রচারের কথা বলা যায়। এই ক্ষেত্রে, সম্প্রচার টাওয়ারটি হলো ট্রান্সমিটার, রেডিও হলো রিসিভার এবং প্রচার মাধ্যম হলো শূন্যস্থান। অনেক ক্ষেত্রেই টেলিযোগাযোগ ব্যাবস্থা উভমুখী যোগাযোগ রক্ষা করে এবং একই যন্ত্র ট্রান্সমিটার ও রিসিভার হিসেবে কাজ করে। এগুলোকে বলা হয় ট্রান্সিভার। যেমনঃ মোবাইল ফোন একটি ট্রান্সিভার। ফোনের মাধ্যমে টেলিযোগাযোগকে বলা হয় পয়েন্ট-টু-পয়েন্ট যোগাযোগ, কারণ এ ক্ষেত্রে একটি মাত্র ট্রান্সমিটার ও রিসিভারের মধ্যে সংযোগ স্থাপিত হচ্ছে। বেতার সম্প্রচারের মাধ্যমে টেলিযোয়াযোগকে বলা হয় ব্রডকাস্ট(সম্প্রচার) যোগাযোগ, কারণ এ ক্ষেত্রে একটি শক্তিশালী ট্রান্সমিটার ও অসংখ্য রিসিভার এর মধ্যে সংযোগ ঘটছে।

সিগনাল এনালগ ও ডিজিটাল দু’ধরনের হতে পারে। এনালগ সিগনালের ক্ষেত্রে তথ্যের পরিবরতনের উপর ভিত্তি করে সংকেতের শক্তি ক্রমাগত পরিবর্তন করা হয়। ডিজিটাল সিগনালের বেলায় তথ্যকে কিছু নির্দিষ্ট মানের (যেমন, ০ এবং ১) সমন্বয়ে সংকেত এ পরিণত করা হয়।

পরস্পরের সাথে সংযুক্ত এক গুচ্ছ ট্রান্সমিটার, রিসিভার বা ট্রান্সিভারের সমন্বয়ে গঠিত হয় নেটওয়র্ক। ডিজিটাল নেটওয়র্ক এ এ বা একাধিক রাউটার থাকে যার কাজ হল একটি নির্দিষ্ট বাবহারকারীর কাছে তথ্য পাঠানো। এনালগ নেটওয়র্ক এ এক বা একাধিক সুইচ থাকে যা দুই বা অতোধিক বাবহারকারীর মধ্যে সংযোগ স্থাপন করে। দুই ধরনের নেটওয়র্ক এর ক্ষেত্রেই বহু দূরে সিগনাল পাঠাতে রিপিটার প্রয়োজন হয় যাতে দুর্বল এনালগ সিগনালকে এম্পলিফাই করে শক্তিশালী এবং বিকৃত ডিজিটাল সিগনালকে পুনর্গঠন করা যায়। অনাকাঙ্খিত কোন শব্দ যাতে সিগনালকে বিকৃত করতে না পারে সেজন্য এ ব্যবস্থা নেয়া হয়।

চ্যানেল হলো এক ধরনের প্রচার মাধ্যম যার মধ্য দিয়ে একই সময়ে একাধিক তথ্য প্রবাহ পাঠানো যায়। যেমন, একটি বেতার কেন্দ্র ৯৬মেগাহার্টজ বেতার তরঙ্গে, আবার আরেকটি বেতার কেন্দ্র একই সময়ে ৯৪.৫মেগাহার্টজ বেতার তরঙ্গে অনুষ্ঠান সম্প্রচার করতে পারে। এ ক্ষেত্রে মাধ্যম কে তরঙ্গ কম্পাঙ্ক বা ফ্রিকোয়েন্সি অনুসারে বিভক্ত করা হয়েছে এবং এক একটি বেতার কেন্দ্রের অনুষ্ঠান সম্প্রচারের জন্য এক একটি ফ্রিকোয়েন্সি নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়েছে। আবার সম্প্রচারের জন্য একটি নির্দিষ্ট সময় দৈর্ঘ্য নির্ধারণ করেও একটি চ্যানেল নির্দিষ্ট করা যায়।


মডুলেশন


তথ্য বা ইনফরমেশন পাঠানোর উদ্দেশ্যে সিগনালের আকার পরিবর্তন করার পদ্ধতিকে বলা হয় মডুলেশন (উপযোজন)। মডুলেশন হলো টেলিযোগাযোগ ব্যাবস্থার প্রান। একটি সিগনালে উপস্থিত তথ্য আরেকটি সিগনালের উপর চাপিয়ে দেয়ার জন্য সর্বদাই মডুলেশন পদ্ধতি বাবহৃত হয়। মডুলেশন ব্যবহার করা হয় সিগনালের ফ্রিকোয়েন্সি বাড়ানোর জন্য। কারণ বায়ু মাধ্যমে নিম্ন কম্পাঙ্কর সিগনাল খুব বেশি দূরে পাঠানো সম্ভব নয়। তাই সিগনাল পাঠানোর পুর্বে একে উচ্চ কম্পাঙ্কের আরেকটি সিগনালের উপর স্থাপন করা হয়। এটি করা হয় মূল সিগনালে বা ইনফরমেশন সিগনালে অবস্থিত তথ্য অনুসারে উচ্চ কম্পাঙ্কের সিগনালের কম্পাঙ্ক, বিস্তার(amplitude) অথবা দশা (phase) পরিবর্তনের মাধ্যমে। সাধারণত মূল সিগনালের বিস্তারের পরিবরতনের মধ্যে তথ্য উপস্থিত থাকে। উচ্চ কম্পাঙ্কের সিগনালটিকে বলা হয় বাহক সিগনাল বা ক্যারিয়ার সিগনাল। মিশ্র সিগনালটিকে বলে মডুলেটেড সিগনাল।

মডুলেশন এনালগ ও ডিজিটাল দুই প্রকার হতে পারে। ইনফরমেশন সিগনাল অনুসারে বাহক সিগনালের কোন বৈশিষ্ট্যটি পরিবর্তিত হচ্ছে তার উপর নির্ভর করে এনালগ মডুলেশন ৩ প্রকার হতে পারে।

১।  বিস্তার উপযোজন পদ্ধতি(amplitude modulation ): এ পদ্ধতিতে মূল সিগনালের বিস্তারের পরিবরতনের সাথে সাথে যদি বাহক সিগনালের বিস্তার পরিবরতিত হয়।

২।  কম্পাঙ্ক উপযোজন পদ্ধতি(frequency modulation): এ পদ্ধতিতে মূল সিগনালের বিস্তার পরিবর্তনের সাথে সাথে বাহক সিগনালের কম্পাঙ্ক পরিবর্তিত হয়ে যায়।

৩। দশা উপযোজন পদ্ধতি(phase modulation):এ পদ্ধতিতে মূল সিগনালের বিস্তারের সাথে সাথে বাহক সিগনালের দশা পরিবর্তিত হয়। এটিও এক প্রকার কম্পাঙ্ক উপযোজন পদ্ধতি।

উপরোল্লিখিত তিনটি মডূলেশন প্রক্রিয়াই এনালগ সিগনালের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। যদি একটি মূল এনালগ সিগনাল থেকে নির্দিষ্ট সময় পর পর নমুনা সংগ্রহ করা হয় এবং সেই নমুনায় সিগনালের বিস্তারের মান্তিকে ডিজিটাল সংখ্যায় রুপান্তর করা হয় তবে তাকে ডিজিটাল সিগনাল বলা হয়।

ডিজিটাল তথ্যকে এনালগ তরঙ্গ আকারে উপস্থাপন করতে মডুলেশন করা হয়। একে বলা হয় “কীয়িং”। বিভিন্ন ধরনের কীয়িং প্রযুক্তি বাবহৃত হয়, যেমন- ফেজ শিফ্‌ট কীয়িং, এম্পলিচ্যুড শিফ্‌ট কীয়িং, মিনিমাম শিফ্‌ট কীয়িং। ব্লুটুথ প্রযুক্তিতে দু’টি যন্ত্রের মধ্যে সংযোগ স্থাপনে ফেজ শিফ্‌ট কীয়িং প্রযুক্তি ব্যবহৃত হয়।

মডুলেশনের উদাহারণঃ মানুষের কণ্ঠস্বরের উপর উপযোজন করা হয়কম্পাঙ্ক সাধারণত ৩০০-৩৪০০ Hz এর মাঝে। এই কম্পাঙ্কের শব্দ খুব বেশি দূরে থেকে শুনতে পাওয়া সম্ভব নয়। কিন্তু যদি মানুষের এই কম্পাঙ্কের কথা একটি ৯৬ মেগাহার্টজ কম্পাঙ্কের বাহক সিগনালের তবে তা দূরে প্রেরণ করা সম্ভব হয়। এভাবেই বেতার সম্প্রচার করা হয়ে থাকে।

ইতিহাস

প্রাচীন যুগের যোগাযোগ ব্যবস্থা

প্রাচীন যুগে মানুষ দুরে অবস্থানকারী কোন মানুষের সাথে ধোঁয়ার সংকেত দিয়ে বা ঢোল বাজিয়ে যোগাযোগ করত। আফ্রিকানিউ গিনি এবং দক্ষিণ আমেরিকার স্থানীয় উপজাতিরা ঢোল বাজিয়ে পরস্পরের সাথে যোগাযোগ করত। চায়না ও উত্তর আমেরিকার অধিবাসীরা ধোঁয়ার সংকেত দিয়ে দুরে খবর পাঠাও। ঢোলের শব্দ বা ধোঁয়া কোন একটি গোত্রের উপস্থিতি ঘোষণা করা ছাড়াও বিভিন্ন সংকেতের মাধ্যমে অন্যান্য তথ্যও বহন করত।
১৭৯২ সালে ক্লদ শাপে(Claude Chappe) নামে একজন ফরাসি প্রকৌশলী প্রথম দৃশ্যমান টেলিগ্রাফ যন্ত্র তৈরি করেন যা লিল ও প্যারিস এর মাঝে সংযোগ স্থাপন করে। এ ক্ষেত্রে সেমাফোর পদ্ধতি ব্যবহৃত হত। সেমাফোর পদ্ধতিতে দুটি পতাকার বিভিন্ন অবস্থানের মাধ্যমে বিভিন্ন বর্ণ নির্দেশ করে সংকেত পাঠানো হয়। লিল থেকে প্যারিস পর্যন্ত স্থাপিত প্রথম সংযোগটি পরে স্ট্রাসবুর্গ পর্যন্ত বর্ধিত হয়। ১৭৯৪ সালে সুইডিশ প্রকৌশলী আব্রাহাম এডেলক্রান্টজ সামান্য ভিন্ন একটি প্রযুক্তি ব্যবহার করে স্টকহোম থেকে ড্রটিংহোম পর্যন্ত সংযোগ স্থাপন করেন। শাপে এর যন্ত্রে কপিকলের মাধ্যমে কাঠের তক্তা ঘওরার ব্যাবস্থা ছিল। অপরদিকে ক্রান্টজ এর যন্ত্রে কেবলমাত্র হালকা শাটার ব্যবহৃত হওয়ায় এর গতি ছিল বেশি। কিন্তু সেমাফোর পদ্ধতি ব্যবহার করে যোগাযোগ করা অভিজ্ঞ ব্যক্তি ছাড়া অসম্ভব ছিল। এছাড়াও অল্প দূরত্ব(১০-৩০ কি.মি.) পরপর টাওয়ার নির্মানের বিশাল খরচের কারণে ১৮৮০ সালের পর থেকে বাণিজ্যিকভাবে এ যোগাযোগ ব্যবস্থা সম্পুর্ণ বন্ধ হয়ে যায়।
টেলিগ্রাফ ও টেলিফোন
স্যার চার্লস হুইটস্টোন এবং স্যার উইলিয়াম ফদারগিল কুক সর্বপ্রথম বাণিজ্যিকভাবে বৈদ্যুতিক টেলিগ্রাফ যন্ত্র তৈরি করেন। এতে একটি নির্দেশক কাঁটার বিক্ষেপের মাধমে বার্তা পাঠানো হতো। ১৮৩৯ সালের ৯ই এপ্রিল তারিখে গ্রেট ওয়েস্টার্ন রেলওয়ের ২১ কি.মি. দূরত্বে যোগাযোগ স্থাপন করতে এর ব্যবহার শুরু হয়। একই সময়ে আটলান্টিকের অপর পারে স্যামুয়েল মোর্স আলাদাভাবে একটি বৈদ্যুতিক টেলিগ্রাফ যন্ত্র তৈরি করেন এবং ১৮৩৭ সালের ২রা সেপ্টেম্বর জনসমক্ষে উপস্থাপন করেন। কিন্তু যন্ত্রটি সফলভাবে কাজ করতে ব্যর্থ হয়। এরপর তিনি আলফ্রেড় ভেইল নামে একজন বিজ্ঞানীর সঙ্গে সম্মিলিতভাবে আরেকটি যন্ত্র আবিষ্কার করেন যেটি টেলিগ্রাফ বার্তাকে কাগজের ফিতায় সংরক্ষণ করতে পারে। ১৮৩৮ সালের ৬ই জানুয়ারী তাদের এই যন্ত্রটি প্রথমে ৫ কিলোমিটার ও পরে ২৪মে,১৮৪৪ তারিখে ওয়াশিংটন ও বাল্টিমোরের মাঝে ৬৪ কি.মি. দূরত্বে সফলভাবে কাজ করে। তারা তাদের এই যন্ত্রটি পেটেন্ট করেন। ১৮৫১ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে ২০,০০০ মাইল দীর্ঘ টেলিগ্রাফ লাইন স্থাপিত হয়। ১৮৬৬ সালে প্রথম সফলভাবে অতলান্তিকের দু'প্রান্তের মাঝে টেলিগ্রাফ সংযোগ স্থাপিত হয়। এর পুর্বে ১৮৫৭ ও ১৮৫৭ সালেও এ সনযোগ স্থাপন করা হয়েছিল, কিন্তু কয়েকদিন বা কয়েক সপ্তাহ পরেই তা অচল হয়ে পড়ে।

১৮৫৭ সালে আলেক্সান্ডার গ্রাহাম বেল টেলিফোন আবিষ্কার করেন। অবশ্য এর আগে ১৮৪৯ সামে অ্যান্টোনিও মেউচ্চি একটি যন্ত্র আবিষাক্র করেন যার মাধ্যমে লাইনের মধ্য দিয়ে বৈদ্যুতিকভাবে কন্ঠ প্রেরণ করা যেত। এই যন্ত্রটি শব্দবৈদ্যুতিক প্রভাবের উপর নির্ভর করত। কিন্তু এই যন্ত্রটি ব্যবহার করা অসম্ভব ছিল কারণ ব্যবহারকারীকে গ্রাহক যন্ত্রটি মুখে ঢুকিয়ে কথা শুনতে হত।

১৮৭৮ ও ১৮৭৯ সালে আটলান্টিকের উভয় পারে নিউ হ্যাভেন ও লন্ডোন শহরে বানিজ্যিক টেলিফোন ব্যবস্থা চালু হয়। এই ব্যবস্থা চালু করার জন্য আলেক্সান্ডার বেল উভয় দেশেই পেটেন্ট লাভ করেন। এরপর অতি দ্রুত প্রযুক্তির প্রসারণ হয়। ১৮৮০ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান শহরগুলোতে এক্সচেঞ্জ এবং আন্তঃশহর টেলিফোন লাইন স্থাপিত হয়। সংযোগ স্থাপন করার জন্য সুইচিং প্রযুক্তিও উন্নত হয়। তা সত্বেও আটলান্টিকের দু'পারের মাঝে কন্ঠ আদান প্রদান করা সম্ভব ছিল না। ১৯২৭ সালের ৭ই জানুয়ারী প্রথম বেতার সংযোগের মাধ্যমে কন্ঠ যোগাযোগ স্থাপিত হয়। ১৯৫৬ সালের ২৫শে সেপ্টেম্বর ট্রান্স-আটলান্টিক-টেলিফোন লাইন স্থাপিত হওয়ার আগ পর্যন্ত দুই ভুখন্ডের মাঝে কোন তার সংযোগ ছিল না। এই টেলিফোন লাইন্টিতে ৩৬টি টেলিফোন সার্কিট ছিল।
বেতার ও টেলিভিশন
১৮৩২ সালে জেমস লিন্ডসে শ্রেনীকক্ষে তার ছাত্রদের সামনে তারবিহীন টেলিগ্রাফ সংযোগ উপস্থাপন করেন। ১৮৫৪ সালে তিনি পানিকে মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করে ডান্ডি থেকে উঢ্যাভেন পরযন্ত দুই মাইল দূরত্বে তার বিহীন সংযোগ স্থপন করে দেখান। ১৮৯৩ সালে ফ্রাঙ্কলিন ইন্সটিটিউটে এক বক্তৃতায় নিকোলা টেসলা উদাহারণসহ তারবিহীন টেলিগ্রাফি প্রযুক্তির বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দেন। ভ্যাকুয়াম টিউব আবিষ্কারের পুর্বে বেতার ব্যবস্থায় যে সকল যন্ত্রপাতি ব্যবহৃত হত সে সব উপকরণ ব্যবহার করেই তিনি এ উদাহারণ উপস্থাপন করেন। ১৯০০ সালে রেগিনাল্ড ফেসেন্ডেন প্রথম তার ছাড়া মানুষের কন্ঠস্বর প্রেরণ করতে সক্ষম হন। ১৯০১ সালে গুগলিয়েলমো মার্কনি যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের মাঝে তার বিহীন সংযোগ স্থাপন করেন, যা তাকে ১৯০৯ সালে নোবেল পুরস্কার এনে দেয় (তিনি কার্ল ব্রাউন এর এর সাথে যুগ্মভাবে এ পুরস্কার পান) ।

১৯২৫ সালের ২৫শে মার্চ, লন্ডনের সেলফ্রিজ নামের একটি মনিহারী দোকানে জন লগি বেয়ার্ড চলন্ত ছবি প্রেরণ করে দেখান। অবশ্য তার যন্ত্রটি সম্পুর্ণ ছবি দেখাবার বদলে ধারণকৃত ছবির একটি অস্পষ্ট ছায়া প্রদর্শন করেছিল কিন্তু অবিলম্বে অক্টোবর মাসেই তিনি এ সমস্যার সমাধান করেন এবং ১৯২৬ সালের ২৬শে জানুয়ারী পুনরায় ঐ সেলফ্রিজ দোকানেই আবার টেলিভিশন উপস্থাপন করেন। বেয়ার্ডের তৈরি টেলিভিশন নিপকও চাকতি(nipkow disk) ব্যবহার করে ছবি গ্রহণ ও প্রদর্শন করা হতো, তাই একে বলা হয় যান্ত্রিক টেলিভিশন। এই যন্ত্রের উপর নির্ভর করেই ১৯২৯ সালের ৩০শে সেপ্টেম্বর ব্রিটিশ ব্রডকাস্টিং করপোরেশন বা বিবিসি এর পরীক্ষামুলক সম্প্রচার চালু হয়। বিংশ শতকের অধিকাংশ টেলিভিশনে ব্যবহৃত হয় কার্ল ব্রাউন এর আবিষ্কৃত ক্যাথোড রে টিউব প্রযুক্তি। এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে ফিলো ফার্ন্সওয়র্থ প্রথম একটি কার্যকরী মডেল তৈরি করে তার পরিবারের সদস্যদের দেখান ১৯২৭ সালের ৭ই সেপ্টেম্বর। একই সময়ে ভলাদিমির যোরিকিনও এই রযুতিতে ব্যবহার করে বৈদ্যুতিক টেইভিশন আবিষ্কার করেন। পরে আদালতে ফয়সালা করে ফার্ন্সওয়র্থকে এই আবিষ্কারের কৃতিত্ব দেয়া হয়।



1 comment:

Thanks for visiting.