Tuesday, October 16, 2012

পর্যটন ও পঞ্চম টি-২০ বিশ্বকাপ


পর্যটন ও পঞ্চম টি-২০ বিশ্বকাপ

লেখক: মোতাসিম বিল্লাহ  |  মঙ্গলবার, ১৬ অক্টোবর ২০১২, ১ কার্তিক ১৪১৯
১৫৫ কিলোমিটারের পৃথিবীর সবচেয়ে দীর্ঘ সমুদ্রসৈকত, বিশ্বের সর্ববৃহত্ ম্যানগ্রোভ বন, চা বাগানের নয়নাভিরাম দৃশ্য আর অসংখ্য ছড়ানো ছিটানো প্রাচীন নিদর্শনের বাংলাদেশে পর্যটনের বিশাল সম্ভাবনা থাকলেও তা ঠিকমত কাজে লাগানো হচ্ছে না। অথচ সেই প্রাচীন যুগ ও মধ্যযুগের বিখ্যাত পর্যটক মেগাস্থিনিস, হিউয়েন সাং, আর ইবনে বতুতা কর্তৃক স্বীকৃত সৌন্দর্যের ভূমিকে দিন দিন রুক্ষ, গোঁড়া, জঙ্গিবাদ আর সাম্প্রদায়িক সংঘাতের দেশে পরিণত করা হচ্ছে।
১৯৭২ সালে বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশন গঠিত হলেও মূলত নব্বই দশকের শেষ দিকে এসে পর্যটনের অর্থনৈতিক দিক বিচার বিবেচনা করে এখাতকে আরো সমৃদ্ধ ও আকর্ষণীয় করে তোলা হয়। কিন্তু ১৯৯৯ সালে যখন পর্যটনকে অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে দেখা হয় তখন দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আরেক দেশ কম্বোডিয়া ছিল পর্যটনে খুবই অনুন্নত। ১৯৯৯ সালে বাংলাদেশে যেখানে ১,৭১,৯৬১ জন পর্যটকের আগমন ঘটেছিল তখন কম্বোডিয়ায় ছিল মাত্র ৯৬,০০০ জন পর্যটক। কিন্তু ২০১০ সালে বাংলাদেশে যেখানে ২,৭১,০০০ জন পর্যটকের আগমন ঘটেছিল সেখানে কম্বোডিয়ায় এসেছিল ২০ লাখের অধিক। সাম্প্রতিক তুলনামূলক চিত্রও একই রকম। অর্থাত্ কম্বোডিয়া পর্যটন খাতকে ব্যবহার করে যেখানে প্রভূত উন্নতি সাধিত করেছে বাংলাদেশ সেখানে খুবই কম উন্নতি লাভ করতে পেরেছে। অথচ কম্বোডিয়ার চেয়ে আমাদের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও অন্যান্য দিক যা পর্যটকদের আকর্ষণ করে তা অনেক বেশি আছে। শুধু কম্বোডিয়া নয়, আমাদের প্রতিবেশী মালদ্বীপ, শ্রীলংকা ও নেপালও এ ক্ষেত্রে আমাদের জন্য উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
সচেতনভাবে যদি পর্যটন খাতকে ব্যবহার করা যায় তবে বাংলাদেশও অর্থনৈতিক দিক দিয়ে তৈরি পোশাকের মতো বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের আরেকটি খাত পাবে।
কিন্তু পর্যটকদের কাছে যদি বাংলাদেশকে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ হিসাবে পরিচিত করানো না যায় তবে তারা এখানে আসবে না। এক্ষেত্রে আরো যে বিষয়গুলো দেখা যায় তা হলো-পর্যটকদের কাছ থেকে আমাদের যথেচ্ছাভাবে টাকা আদায়ের মনোভাব, চুরি-ডাকাতির হাত থেকে পর্যটকদের সঠিক নিরাপত্তা দিতে না পারা, অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা, ভিসা পাওয়ার দীর্ঘসূত্রতা ও জটিলতা পর্যটকদের এদেশে আসার ক্ষেত্রে নেগেটিভ মনোভাবের সৃষ্টি করে।
এ সমস্যাগুলো কাটিয়ে যদি সঠিকভাবে কূটনৈতিক তত্পরতার মাধ্যমে পর্যটকদের এ দেশে আকর্ষণ করা যায়, তবে শুধু পর্যটন খাতই লাভবান হবে না সাথে সাথে এ দেশে বিদেশি বিনিয়োগেরও বিরাট সম্ভাবনা দেখা দিবে।
এক্ষেত্রে ২০১৪ সালের পঞ্চম টি-২০ বিশ্বকাপ আমাদের জন্য একটি বিরাট সুযোগ। কেননা বাংলাদেশ এই প্রথম এককভাবে এতোবড় একটা আয়োজন করতে যাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে কক্সবাজারের আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামসহ আরো কিছু স্টেডিয়াম যদি আমাদের প্রাচীন নিদর্শন কেন্দ্রিক বা পর্যটনস্থান কেন্দ্রিক গড়ে তোলা যায় অথবা স্টেডিয়াম গড়া না গেলেও যদি প্রাচীন নিদর্শনসমূহ কেন্দ্রিক আরো কিছু আকর্ষণীয় কৃত্রিম পর্যটনস্থান গড়ে তোলা যায় তবে টি-২০ বিশ্বকাপে আমাদের একটি বিরাট বিজ্ঞাপন করার সুযোগ থাকবে। এজন্য প্রাচীন নিদর্শনগুলোতে যাতায়াত ও হোটেলের সুব্যবস্থা করা দরকার, সাথে সাথে নেপাল, শ্রীলংকার মতো ‘‘অন অ্যারাইভাল’’ ভিসা চালু করতে পারলে পর্যটকদের আরো বেশি আকর্ষণ করা সম্ভব হবে। এছাড়া ইপিজেড এর মতো ‘‘এক্সক্লুসিভ পর্যটক জোনের’’ পরিকল্পনা দ্রুত বাস্তবায়ন করতে পারলে অচিরেই পর্যটনকে আরো বেশি শক্তিশালী করা সম্ভব হবে।
তবে তার পূর্বে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় বা কলেজগুলোতে হোটেল ব্যবস্থাপনা ও পর্যটন বিভাগকে আরো সমৃদ্ধ ও আধুনিক করার দরকার। এছাড়া পর্যটকদের সার্বিক নিরাপত্তার জন্য পর্যটন পুলিশ বিভাগ চালু করা যায়। যারা পর্যটকদের নিরাপত্তার সাথে সাথে গাইড হিসাবেও কাজ করতে পারবে।
অতিথি সেবায় বাঙালিদের খ্যাতি থাকলেও বর্তমানে এ খ্যাতি নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে। কেননা আমাদের পর্যটন খাতসমূহের সাথে যারা যুক্ত তাদের অনেকেই বিভিন্ন কৌশলে বিদেশি পর্যটকদের কাছ থেকে টাকা আদায়ে ব্যস্ত থাকে। আমাদের মনে রাখা উচিত পর্যটকরা টাকা নিয়ে আসে ব্যয় করার জন্যই ফিরিয়ে নেয়ার জন্য নয়। তবে তা থেকে তারা সর্বোচ্চ আনন্দ পেতে চায়। তাই সস্তা টাকা আদায়ের ধান্দা বাদ দিয়ে যদি সঠিকভাবে তাদের সেবা দেয়া যায় তবেই আমরা প্রকৃত পক্ষে লাভবান হব। 
n  লেখক : শিক্ষার্থী (এম.এ) দর্শন বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
e-mail-motasimbilla88@gmail.com

No comments:

Post a Comment

Thanks for visiting.