অনভিপ্রেত উক্তি এবং বাস্তবতার যুক্তি
লেখক: ড. আব্দুল লতিফ মাসুম | বৃহস্পতিবার, ১৮ অক্টোবর ২০১২, ৩ কার্তিক ১৪১৯
বেফাস কথা বলা আমাদের রাজনীতিকদের অভ্যাস। বেশি বেশি কথা বলার বদনাম রয়েছে আমাদের লোকদের। তর্কযুদ্ধ নয় বরং গায়ের জোরে, কথার তোড়ে জিততে চায় সবাই। বাংলাদেশে যারা নিয়মতান্ত্রিক, সাংবিধানিক নন্দন তাত্ত্বিক রাজনীতির রূপকার তারা হালে পানি পায় না। অথচ যাদের সত্য-মিথ্যা মিশিয়ে লম্বা-লম্বা কথা বলার জোর আছে তারাই পার পেয়ে যায়। নির্বাচনে অসম্ভব অসম্ভব প্রতিশ্রুতি দিয়ে জনগণকে বাক চাতুর্যে মোহিত করে। এদেরকেই রাষ্ট্রবিজ্ঞানের পরিভাষায় বলে ‘ড্যামাগগ’। এভাবে অস্বাভাবিক উক্তি করে জনগণকে বিভ্রান্ত করতে চায় তারা। কিন্তু জনগণকে অতটা বোকা ভাবা ঠিক নয়। তারা এধরনের অনভিপ্রেত, অস্বাভাবিক এবং অযৌক্তিক উক্তিকে আদৌ অনুমোদন করে না বরং যে ব্যক্তি, দল বা পদাধিকারী এসব উক্তি করেন তারাই অবশেষে অবমূল্যায়িত হন গেল দু’-এক সপ্তাহে এধরনের কিছু উক্তি এবং প্রতি উক্তি নিয়ে বাংলাদেশে সুশীল সমাজে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।
খ. গত সোমবার ১৫ অক্টোবার মন্ত্রী পরিষদের নিয়মিত সাপ্তাহিক বৈঠকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কিছু মন্তব্য-পরামর্শ এবং পর্যবেক্ষণ রীতিমত উদ্বেগজনক। যার ফলে একটি জাতীয় দৈনিক তাদের শীর্ষ প্রতিবেদনে লাল অক্ষরে “ভয়াবহ ষড়যন্ত্র” শিরোনামে সংবাদটি প্রকাশ করে। প্রধানমন্ত্রী এ বৈঠকে দেশকে নিয়ে গভীর ষড়যন্ত্রের কথা বলেন এবং মন্ত্রী পরিষদের সদস্যদের সতর্ক থাকার জন্য বলেন।
গ. এর আগে ১৩ অক্টোবার আওয়ামী লীগের জাতীয় কমিটির বৈঠকে প্রারম্ভিক বক্তব্যে বলেন যে, ১/১১ সরকারের মত অনির্বাচিতদের ক্ষমতায় আনার ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। আবারো ১/১১ সৃষ্টির চেষ্টা চলছে। তিনি বলেন, কিছু মানুষ আছে যাদের ক্ষমতায় যাওয়ার খায়েশ থাকলেও নির্বাচন করার সাহস নেই। জনগণের সামনে দাঁড়াতে পারে না। জনগণের উপর তাদের ভরসা নেই। ভরসা অসাংবিধানিক পথে। অসাংবিধানিক ধারায় তারা ক্ষমতায় যেতে চান। তাদের খায়েশের কারণেই দেশ বারবার বিপদে পড়ে। তারা এখন আবার খেলা শুরু করেছেন। তিনি আরো বলেন, ক্ষমতার খায়েশধারীদের কারণে বারবার দেশে গণতন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তারা বারবার অসাংবিধানিক ব্যবস্থাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে।
ঘ. বাংলাদেশের একটি মর্যাদাপূর্ণ নিরপেক্ষ গবেষণা প্রতিষ্ঠান ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল অব বাংলাদেশ। প্রতিষ্ঠানটি ইতোমধ্যে জাতীয় স্বার্থে অনেকগুলো গবেষণামূলক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। সরকার বা বিরোধীদলের তোয়াক্কা না করে তারা বস্তুনিষ্ঠ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এতে প্রধান দু’টি দলই তাদের উপর ক্ষুব্ধ । গত ১৫ অক্টোবর টি.আই.বি একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করে। তাতে দেখা যায় অধিকাংশ এমপি দখল, টেন্ডার ও চাঁদাবাজিতে জড়িত। প্রতিবেদনে দেখা যায়, বর্তমান জাতীয় সংসদের ৯৭ ভাগ সংসদ সদস্য নেতিবাচক কাজে জড়িত। এদের মধ্যে ৫৩ দশমিক পাঁচ ভাগ অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত। ২৪ দশমিক এক ভাগের বিরুদ্ধে ফৌজদারী মামলা রয়েছে। এছাড়া প্রায় সব ক্ষেত্রেই দলীয় নেতা-কর্মীদের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের সাথে সংসদ সদস্যদের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে।
টি.আই.বি’র এই প্রতিবেদন প্রকাশের পরপরই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তার ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। মন্ত্রী পরিষদের বৈঠকের পরপর তিনি এসব মন্তব্য করেন। তিনি প্রকাশিত প্রতিবেদনকে উদ্দেশ্যমূলক বলে অভিহিত করেন। তিনি প্রকাশিত রিপোর্টের সময়কাল নিয়ে প্রশ্ন করেন। তিনি মনে করিয়ে দেন যে, ২০০১ সালে নির্বাচনের আগে টি.আই.বি আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে এরকম নেতিবাচক প্রতিবেদন প্রকাশ করে। তিনি প্রতিবেদনটি সঠিক নয় বলে মন্তব্য করেন। তিনি প্রশ্ন করেন, যখন বিশ্ব ব্যাংকের একটি বিশেষজ্ঞ দল বাংলাদেশ পরিদর্শন করছেন তখনই এই রিপোর্টটি প্রকাশিত হল। এর উদ্দেশ্য কি? তিনি ড. কামাল হোসেন এবং অন্যদের সাথে বিশ্ব ব্যাংক বিশেষজ্ঞদের বৈঠক নিয়েও প্রশ্ন তোলেন। আওয়ামী লীগের অন্য একজন শীর্ষ নেতা বিদেশের টাকায় দেশের সর্বনাশ করার জন্য টি.আই.বি.কে দায়ি করেন। বলার অপেক্ষা রাখে না যে, বিএনপি ক্ষমতায় থাকার সময় তখনকার প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াও টিআইবির বিরুদ্ধে এরকম ক্ষুভ প্রকাশ করেছিলেন।
ঙ. বহুল আলোচিত রামু সহিংসতা সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী কোন রকম রাগ-ঢাক না করেই বলেছেন, ঐ ঘটনায় বিএনপি সরাসরি জড়িত। বিএনপির এমপির উস্কানিতেই রামুতে হামলা হয়েছে। বিগত ৮ অক্টোবর রামুর সহিংসতায় ক্ষতিগ্রস্ত বৌদ্ধ বসতি ঘুরে দেখার পর তিনি বলেন, স্থানীয় সংসদ সদস্য এসে সেদিন কি বলে গেল তার যাওয়ার পর হামলা হল। প্রধানমন্ত্রী রামুর বৌদ্ধ বিহার ও বসত বাড়িতে হামলার ঘটনায় বিরোধীদলের প্রতিবেদনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি বিএনপির তদন্ত কমিটির প্রধান ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদের সততা নিয়েও প্রশ্ন তুলেন। ১২ অক্টোবর শ্রমিক লীগ নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যে ব্যক্তি মৃত ব্যক্তিকে জীবিত বানিয়ে বিদেশিনীর বাড়ি ভাইয়ের নামে দখল করেন, যিনি গুলশানের একটি বাড়ির লোভ সামলাতে পারেন না, যিনি দুর্নীতির দায়ে সাজাপ্রাপ্ত আর রাষ্ট্রপতির ক্ষমাপ্রাপ্ত তার তদন্ত প্রতিবেদন জনগণ গ্রহণ করবে না। মওদুদ আহমেদকে প্রতারক আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, বিএনপির এই নেতার বিশটি নামে বিশটি এ্যাকাউন্ট আছে। এত বড় ফ্রড! বিশটি নামে এ্যাকাউন্ট করে যে প্রতারণা করে সে করবে তদন্ত? উল্লেখ্য, এর আগে বিএনপির তদন্ত কমিটির রিপোর্ট প্রকাশ করতে গিয়ে মওদুদ আহমেদ বলেছিলেন যে, আওয়ামী লীগ বাংলাদেশকে জঙ্গি প্রমাণ করতেই রামুর ঘটনা ঘটিয়েছে। এর প্রতি উত্তরে মওদুদ আহমেদ ১৩ অক্টোবর এক আলোচনা সভায় বলেন, ক্ষমতায় এসে নিজের দুর্নীতির ১৪টি মামলা প্রত্যাহার না করলে এবং দেশের প্রচলিত আইনের বিচার হলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ১০৮ বছরের জেল হত। আপাদ-মস্তক দুর্নীতিতে নিমজ্জিত তার সরকারকে বিশ্বচোর হিসাবে আখ্যা দিয়েছে বিশ্ব ব্যাংক। তার মুখে দুর্নীতির কথা শোভা পায় না। দুর্নীতির মামলায় তিনিও জেল খেটেছেন। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যকে কুরুচিপূর্ণ ও বিভ্রান্তিকর উল্লেখ করে বিএনপির তদন্ত প্রতিবেদনের সত্যতা তুলে ধরে মওদুদ বলেন, ‘সরকারের মদদেই ওই ধ্বংসযজ্ঞ ঘটেছে। প্রধানমন্ত্রী এই সত্য যুক্তি দিয়ে খণ্ডন করতে না পেরে ব্যক্তিগতভাবে আক্রমণ করেছেন। যুক্তিতে না পারলে ব্যক্তিগত আক্রমণ করা আওয়ামী লীগের পুরনো সংস্কৃতি। প্রতিবেদনে আমরা বৌদ্ধদের ওপর বর্বরোচিত হামলার ঘটনার সত্যতা তুলে ধরেছি। বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের ওপর সরকারই হামলা করে জঙ্গি কার্ড ব্যবহারের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করছে।
বাস্তবতার যুক্তি
এই সময় বাংলাদেশ একটি কঠিন বাস্তবতার মধ্যদিয়ে অগ্রসর হচ্ছে। চলমান সংঘাতের রাজনীতি বংলাদেশকে কোন দিকে ঠেলে দেয় তা নিয়ে সচেতন নাগরিক সমাজ উদ্বিগ্ন। উপরে সন্নিবেশিত অনভিপ্রেত উক্তিসমূহ কোন সাধারণ মানুষের পক্ষ থেকে আসেনি। যারা রাষ্ট্রের সর্ব্বোচ্চ আসনে অধিষ্ঠিত তাদের পক্ষ থেকে উচ্চারিত। কথিত উক্তিসমূহ বাংলাদেশের গণমাধ্যমকে কিভাবে প্রভাবিত করেছে তা ইতিমধ্যে প্রকাশিত সম্পাদকীয়, উপ-সম্পাদকীয়, প্রবন্ধ-নিবন্ধ ইত্যাদিতে প্রমাণিত। টিভি চ্যানেলসমূহে উপস্থাপিত উষ্ণ উচ্চারণ থেকে প্রমাণিত হয় কতটা গভীরভাবে উক্ত উচ্চারণসমূহ সচেতন মানুষকে ভাবিয়ে তুলেছে। সাধারণ মানুষ চিঠি-পত্রে, ফেসবুকে তাদের কথা-বার্তায় এসবের তীব্র প্রতিবাদ করছে। কার মুখে কি মানায় এসব মানদণ্ড নিয়ে কথা বলছে।
প্রথমত:যে ‘ভয়াবহ ষড়যন্ত্রের’ কথা বলা হয়েছে তার কি কোন অস্তিত্ব আছে? বাংলাদেশ কি অন্যদের শক্তি বা দেশ দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে? বাংলাদেশে কি অভ্যন্তরীণ সংঘাত এতটাই তীব্রতর হয়েছে যে শাসকগোষ্ঠী সিভিল ওয়ারের ভয় দেখাচ্ছেন? যাদের পক্ষ থেকে জাতীয় নিরাপত্তা এবং নাগরিক সাধারণের জীবন সম্পদ ও সম্মানের নিশ্চয়তা দেয়ার কথা তারা কি অনিশ্চয়তায় ভুগছেন?
দ্বিতীয়ত: তার কথিত ১/১১-এর পুনরাবৃত্তির হওয়ার প্রসঙ্গ। দেশের রাষ্ট্র ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত প্রধান ব্যক্তি যখন এরকম আশংকা করেন তখন উদ্বিগ্ন না হয়ে পারা যায় না। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে তার ঐ আশংকার উত্স কী? তিনি কি তার গোয়েন্দা সংস্থা থেকে অনুরূপ কোন সংবাদ পেয়েছেন? যদি তার হাতে এরকম তথ্য-প্রমাণ থাকে তাহলে তার উচিত জনসন্মুখে তা প্রকাশ করা। তার মনে রাখতে হবে তিনি বাংলাদেশ রাষ্ট্রের দায়িত্বশীল অবিভাবক। তাকে মনে রাখতে হবে ব্যক্তির চেয়ে দল বড়, দলের চেয়ে রাষ্ট্র বড়। জাতীকে বিতর্কিত এবং ভীতগ্রস্ত করার কোন অধিকার তার নেই।
সবচেয়ে বিস্ময়ের বিষয় তিনি এ ধরনের আপদ-বিপদ থেকে জাতীকে রক্ষা করার জন্য সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী ঘটিয়েছেন। তিনি বারংবার বলেছেন, অসাংবিধানিকভাবে যাতে কেউ ক্ষমতা দখল করতে না পারে সেসব ফাঁক-ফোকর বন্ধ করে দিয়েছেন। তাহলে তিনি শংকিত কেন? তিনি কি বুঝতে পেরেছেন যে, কেবল কাগজী বিধি-বিধান এ ধরনের অসাংবিধানিক পথকে রুদ্ধ করার জন্য যথেষ্ট নয়!
তৃতীয়ত:মধ্য রাতের টকশো প্রসঙ্গ। এটা সত্যিই দুর্ভাগ্যজনক যে, প্রধানমন্ত্রীর আসন থেকে তিনি দেশের নামি-দামি ব্যক্তিবর্গকে সিঁধেল চোরের সাথে তুলনা করেছেন। এই বক্তব্য তার মর্যাদা, ক্ষমতা এবং ব্যক্তিত্বের সাথে বেমানান এবং অসঙ্গতিপূর্ণ। এর আগেও তিনি সন্মানীয় ব্যক্তিদের সম্পর্কে অসম্মানজনক উক্তি করেছেন। তিনি যদি কাউকে চোর-ডাকাত-চাঁদাবাজ বলতেই চান তাহলে তারতো অসংখ্য লোক রয়েছে যে কোন একজনকে দিয়ে তা বলাতে পারেন। নিজে কেন নিজকে অসন্মান করবেন? তার এ উক্তি প্রকারান্তরে তাদের বাক স্বাধীনতার প্রতি হুমকি স্বরূপ। ইতিমধ্যে তার বাকপটু তথ্যমন্ত্রী প্রাইভেট টিভি চ্যানেলগুলোর সাথে রুদ্ধদার বৈঠক করেছেন। তাহলে ম্যাসেজটি কি এই যে, তিনি তাদেরকে শাসিয়েছেন?
চতুর্থত: রামুর ঘটনার জন্য প্রধানমন্ত্রী কোন রকম তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পূর্বেই সরাসরি ঐ ঘটনার জন্য বিএনপি-জামায়াত তথা স্থানীয় সংসদ সদস্যকে দায়ী করেছেন তা হতাশাজনক। একটি সংবেদনশীল ধর্মীয় ইস্যুকে যেভাবে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের বহন করা হয়েছে তা নিন্দনীয়। সুচতুর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরো এক ধাপ এগিয়ে কখন চারদলীয় জোট আবার কখন রহিঙ্গা মুসলমান আবার কখন বা আন্তর্জাতিক এনজিও চক্রকে দায়ী করছেন। বিরোধীদল তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করে সরকারি দলকে দায়ী করেছে। এরকম পরস্পর দোষারোপের কারণে মূল অপরাধীরা পার পেয়ে যেতে পারে। সুতরাং সকলের উচিত স্থায়ী শান্তির স্বার্থে আস্থা ও বিশ্বাস ফিরিয়ে আনার জন্য সর্বোতভাবে চেষ্টা করা।
পঞ্চমত: টি.আই.বি’র প্রতিবেদন প্রসঙ্গে। টি.আই.বি’র মত মর্যাদাপূর্ণ এবং নিরপেক্ষ গবেষণা ফলাফলকে প্রধানমন্ত্রী যে ভাষায় আক্রমণ করেছেন তা জনগণকে হতাশ করেছে। যে কোন বস্তুনিষ্ঠ গবেষণা জাতীয় সংসদকে সমৃদ্ধ করবে। জাতীয় সংসদ সদস্যদের ভুল-ত্রুটি নির্ণয়, আচরণ সমীক্ষা এবং জনগণের প্রতি তাদের কর্তব্য সমাপনে এ ধরনের গবেষণা সহায়ক ভূমিকা রাখবে। সর্বোচ্চ কর্তৃত্ব বিষয়টিকে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে না দেখে নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে দেখেছেন। এটি গণতন্ত্র এবং জাতীয় সংসদ সদস্যদের পেশাদারিত্ব উন্নয়নে সহায়ক নয়। উল্লেখ্য, টি.আই.বি. বিএনপি আমলেও বিরূপ আচরণের সম্মুখীন হয়েছিল। প্রধান দু’দলের বিরূপতা, এর স্বচ্ছতা, নিরপেক্ষতা ও গ্রহণযোগ্যতাকে প্রমাণ করে।
উপসংহার
পঞ্চদশ সংশোধনী পরবর্তী রাজনৈতিক পরিস্থিতি গোটা জাতীকে একটি অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। নাগরিক সাধারণ নিয়মতন্ত্র, গণতন্ত্র এবং শান্তিপূর্ণ উপায়ে ক্ষমতা হস্তান্তর বিশ্বাসী। ইতিমধ্যে নির্দলীয় নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য যে জাতীয় ঐকমত্য সৃষ্টি হয়েছে তা দিনে দিনে অভিষ্ট লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। উচ্চারিত অনভিপ্রেত উক্তিসমূহ উদ্দিষ্ট অভিষ্ট লক্ষ্যের পরিপন্থী। বিশ্লেষকরা মনে করেন ঐসব উক্তিসমূহ প্রত্যাশিত রাজনীতিক সংস্কৃতির পরিপূরক নয়। বরং এর মধ্যদিয়ে একটি নেতিবাচক নীল নকশার আভাস পাওয়া যায়। রাজনীতির কঠিন আবর্তন এবং রণকৌশল নির্ণয় করে বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রকারান্তরে প্রধানমন্ত্রী নিজেই কি আর একটি ১/১১ চাচ্ছেন? যার জন্যই তিনি গ্রাউন্ড ওয়ার্ক করে যাচ্ছেন বলে অনেকের ধারণা। কারণ তিনি হয়তো তার দল এবং ক্ষমতার জন্য অনুরূপ কার্য ব্যবস্থাকে অপরিহার্য মনে করেন।
n লেখক : অধ্যাপক, সরকার ও রাজনীতি বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যাল
No comments:
Post a Comment
Thanks for visiting.