দেশে আর্থিক খাতে জালিয়াতি
লেখক: প্রফেসর ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী | বৃহস্পতিবার, ১৮ অক্টোবর ২০১২, ৩ কার্তিক ১৪১৯
দেশে সাম্প্রতিককালে আর্থিক খাতে জালিয়াতি চরম আকার ধারণ করেছে। কেবল ব্যাংকিং সেক্টর নয়, ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতেও চরম জালিয়াতির ঘটনা ঘটছে। গ্রাহকদের সেবার মান নিম্ন পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। অবশ্য এ ধরনের আর্থিক খাতে জালিয়াতির ঘটনা নতুন নয়। আবার এ ধরনের অপতত্পরতা কেবল যে বাংলাদেশে ঘটে তা কিন্তু নয়, বরং আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও ঘটে থাকে। আর আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ঘটে বলেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ২০০৭ সালে শুরু হওয়া বিশ্বব্যাপী আর্থিক অনিয়ম এখন ধীরে ধীরে সম্প্রসারিত হচ্ছে ইউরোপে। অন্যদিকে এদেশে স্বাধীনতা উত্তরকালে যে ধরনের আর্থিক অনিয়ম ঘটেছে তার সিংহভাগের ষড়যন্ত্রকারী ও হোতারা ধরা-ছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছেন। এক ধরনের ব্লেইম গেইম চলতে থাকে, বড় বড় করে সংবাদ প্রচারিত হয়। কিন্তু ভেতরে ভেতরে আর্থিক অনিয়মের সাথে জড়িত ষড়যন্ত্রকারীরা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন দলমত নির্বিশেষে ক্ষমতাবানদের পৃষ্ঠপোষকতা পেয়ে আসছেন। এমনকি, সামরিক-বেসামরিক শাসনামলে প্রতিষ্ঠিত দুর্নীতিপরায়ণরা একটি মাফিয়া চক্র তৈরি করে রাখে। বড়জোর গুটিকয়েক ব্যক্তি অপকর্মের জন্যে শাস্তি পান। আর অন্যরা সাধুর বেশে নিজেদের সমাজে শক্তিশালী অবস্থান তৈরি করে নেন। তাইতো ক্ষমতার পালাবদল হয়, কিন্তু দুর্নীতির ধরন ও অপকর্ম সংকুচিত না হয়ে বরং পরিধি ক্রমশ প্রশস্ত হতে থাকে।
ব্যাংকিং সেক্টরে বহুল আলোচিত ঘটনা হচ্ছে সোনালী ব্যাংক থেকে হলমার্কের লুটপাট। এই লুটপাটে কেবল সোনালী ব্যাংক নয়, আরো ২৬টি ব্যাংকও জড়িত। প্রথমদিকে রাজনৈতিক প্রভাবের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো কেবল রাজনৈতিক প্রভাবে দেশের এতগুলো ব্যাংক একযোগে জড়িত হয়ে পড়ল কেমন করে? ব্যাংকিং সেক্টরে কি আর তাহলে প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তি নেই? না কি ইচ্ছেমত নিজস্ব মনগড়া ব্যাখ্যা দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে? ইনল্যাণ্ড বিল পার্চেজের সিস্টেমকে অপব্যবহার করার কথা বলা হচ্ছে। অথচ সুস্পষ্ট আইন-কানুনের মধ্যদিয়ে ইনল্যান্ড বিল পার্চেজের সামগ্রিক প্রক্রিয়া সম্পাদনের নিয়ম রয়েছে। নিয়ম বহির্ভূত ঘটনা ঘটার জন্যে এখন চলছে ব্যাংকিং সেক্টরে ধামাচাপা দেয়ার পালা। এই ধামাচাপা দেয়ার প্রয়াস কিন্তু মোটেই শোভন নয়। কেননা এ পর্যন্ত দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী বিভিন্ন ব্যাংক বিভিন্ন সময়ে যথাযথভাবে মামলা দায়ের করেনি। ফলে মামলাগুলো যেমন পরিচালনা করা সঠিকভাবে সম্ভব হয় না, তেমনি বিজ্ঞ বিচারকের কাছেও সঠিক তথ্য সম্বলিত জোরালো কাগজপত্র উপস্থাপন ব্যাংকিং-এ সংশ্লিষ্ট পক্ষ থেকে পেশ করা হয় না। আজ যারা টিভি টক শো-তে গলা ফাটাচ্ছেন আর্থিক জালিয়াতি রোধ করার জন্যে, তারা ভুলে যাচ্ছেন-দেশের প্রচলিত ফৌজদারী আইনের আওতায় ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব। দুভার্গ্য যে, কোন ঘটনা ঘটলেই আমরা নতুন কিছু করা দরকার বলে ঝাঁপিয়ে পড়ি-উদ্দেশ্য হচ্ছে নিজেদের চেনা মুখগুলোকে শানিয়ে নেয়া, প্রকান্তরে দুর্নীতিগ্রস্তদের সুযোগ করে দেয়া তদ্বির এবং সময়ের অসত্ ব্যবহারের জন্যে। সেদিন একজন প্রাক্তন ব্যাংকার, বর্তমানে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, যিনি প্রায়শই ব্যাংকিং সেক্টরে সংস্কার, সংস্কার করে চিত্কার করেন, তত্ত্বাবধায়কের সময়ে খুব গলা ফাটিয়েছেন একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলে, এক রাশ বললেন রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকসমূহের বিপক্ষে। আসলে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক তো সমস্যা নয়, সমস্যা হচ্ছে যারা দুর্নীতি করছে তাদের বিচারের আওতায় আনা। দীর্ঘদিন ধরে ব্যাংকিং সেক্টরে থেকে স্বচ্ছতার সাথে কাজ করলে নিশ্চয়ই কোন সমস্যা হওয়ার কথা নয়। প্রশ্ন থেকে যায়, হলমার্ক ছাড়াও আরো যে কয়টি কোম্পানি লুটপাট করে সহস্রাধিক কোটি টাকার উপরে আত্মসাত্ করছে তাদের বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে? কেনইবা নেয়া হচ্ছে না? অন্যদিকে সোনালী ব্যাংকের আত্মসাত্কৃত টাকার হলমার্ক কোম্পানির একটি বড় অংশ বিভিন্ন রাষ্ট্রায়ত্ত এবং বেসরকারি ব্যাংকে রয়ে গেছে বলে ১৫ই অক্টোবরের দৈনিক ইত্তেফাকে প্রকাশিত রিপোর্টে বেরিয়েছে। এই রিপোর্ট অনুযায়ী প্রশ্ন থেকে যায় টাকাগুলো যারা আমানত হিসাবে নিয়েছেন এবং যারা রেখেছেন যেমন তানভীরের স্ত্রী, তাকে কত দ্রুত আইনের আওতায় নেয়া হবে? অন্যদিকে আরো যে ২৬টি ব্যাংক হলমার্কের সাথে লেনদেনে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে? কেনইবা এ সমস্ত ব্যাংকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে তাদের কাগজপত্র ঠিক করার জন্যে সময় দেয়া হচ্ছে? আসলে বেসরকারি কিংবা মাল্টিন্যাশনাল ব্যাংক হোক, তারা অনেক সময় সত্য ঘটনা চাপা দেয়ার ক্ষমতা রাখে। ফলে জনগণের টাকা নিয়ে বর্তমানে যেভাবে ব্যাংকিং চ্যানেল সামগ্রিক অর্থে ছিনিমিনি খেলছে সে তুলনায় কোন ধরনের শাস্তি পাচ্ছে না। আজ যতই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের বিপক্ষে বলা হোক, কিন্তু আমাদের দেশের মূল ব্যাংকিং-এর উন্নয়ন শুরু হয় রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের হাত ধরে। এমনকি পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের সঞ্চয় বিনিয়োগ কাঠামো গড়ে তোলায় রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি। আসলে বর্তমান অর্থমন্ত্রী এরশাদ সরকারের আমলেও অর্থ-উপদেষ্টা হিসাবে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংককে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করেছিলেন। যদিও তার পূর্বেই ব্যাংকিং সেক্টরে ঋণ গ্রহীতারা একটি শক্তিশালী নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছিল সত্তরের দশকের শেষে, যাতে সহযোগিতা করেছিলেন তদানীন্তন উপ-প্রধানমন্ত্রী ও শিল্পমন্ত্রী জামাল উদ্দীন আহমেদ। এই প্রক্রিয়া সেখানে থেমে থাকেনি, বরং ক্রমশ বিকশিত ও পরিব্যাপ্ত হয়েছে। দুর্বৃত্তায়নের আকার ও পরিধি ক্রমশ এত বেড়েছে যে, আমাদের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির প্রায় দশ ভাগ এবারের সুনামীতে ব্যাংকিং সেক্টর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভাবতে অবাক লাগে, একই কুমীর ছানাকে শিয়াল বার বার দেখিয়ে যেমন কুমীরকে ধোঁকা দিয়েছে তেমনি জনগণকে ধোঁকা দেয়ার অপপ্রয়াস সবসময়ে চলেছে। বাংলাদেশে এ মুহূর্তে অর্থমন্ত্রী জনগণের কাছে সবচেয়ে বেশি অপছন্দের মানুষ। মাঝখান থেকে ব্যাংকিং সেক্টরে তারল্য সংকটের সৃষ্টি হয়েছে। পত্রিকান্তরে রিপোর্টে দেখলাম যে, আসন্ন ঈদুল আযহাকে কেন্দ্র করে চামড়া ব্যবসায়ীরা চামড়ার জন্যে ব্যাংকিং ঋণ পাবেন কিনা সে ব্যাপারে চিন্তায় আছেন। অন্যদিকে দেশের সত্ ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিরা ঋণ পাচ্ছেন না। ফলে দেশের শিল্প উন্নয়ন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এদিকে মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্সের প্রেসিডেন্ট মন্তব্য করেছেন যে, দেশে কর্মসংস্থান সংকটের মুখোমুখি হওয়ায় সামাজিক ভারসাম্যহীনতা নষ্টের সম্মুখীন। তার এই মন্তব্যের সাথে দ্বিমতের কোন সুযোগ নেই। বরং প্রশ্ন থেকে যায়, ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা কি শেষ পর্যন্ত অন্ধকারের তিমিরে থেকে যাবে? দেশের শিল্প উন্নয়নের জন্যে ঘোষিত শিল্পনীতি ২০১০ কি আর কার্যকর হবে না? শুধু-ই কি আশ্বাসের উপর আমাদের দাঁড়িয়ে থাকতে হবে? অথচ বিশ্বাস করি, বর্তমান সরকার গুরুত্বের সাথে কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্যে বিনিয়োগ উপযোগী পরিবেশের উপর জোর দিবেন। রাষ্ট্রায়ত্ত এবং বেসরকারির মত মাল্টিন্যাশনাল ব্যাংকগুলোও দীর্ঘমেয়াদী ঋণ বিতরণ করবেন। যতক্ষণ না নতুন আইন হচ্ছে, বর্তমানে প্রচলিত আইনের আওতায় দুষ্কৃতকারী ও অর্থ পাচারকারীদের বিরুদ্ধে দলীয় আনুগত্য, দূর সম্পর্কের ক্ষমতালোভী আত্মীয়দের ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করে বিচারের ব্যবস্থা নেয়া হোক। এক্ষেত্রে ব্যাংকিং সেক্টরের জন্য সার্বিক দিকনির্দেশনা আরো উন্নত হওয়া উচিত। ব্যাংকারদের নৈতিকতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে কেবল নৈতিকতা শিক্ষা দিলেই হবে না, বরং একদিকে যেমন প্রেষণার প্রয়োজন, তেমনি দুর্নীতির সাথে সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের অবস্থা হয়েছে ঠুঁটো জগন্নাথের মত। বিশেষ করে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর আবার ব্যাংকিং ডিভিশন চালু করে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাথে কর্ম পরিধি নিয়ে নীরবে এক ধরনের দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েছেন। ক্ষমতার ভাগাভাগিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের অবস্থা হয়েছে যত দোষ আছে, সব মুখ বুঁজে সহ্য করতে হয় আর ব্যাংকিং ডিভিশন যেন ধোয়া তুলসী পাতা। বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্তৃত্ব খাটো করতে করতে স্বাভাবিক মুদ্রানীতির অভিভাবক হিসাবে তাদের কোন ভূমিকা নেই বললেই চলে— কেবল মুদ্রানীতি ঘোষণার মত কিছু কাজ ছাড়া। অন্যদিকে ব্যাংকিং ডিভিশন সুস্পষ্টভাবে ব্যাকিং কোম্পানির আইনের ধারাকে নিষ্ক্রিয় করে ক্ষমতার অপব্যবহার করছেন। এতে ব্যাংকিং সেক্টরে বিশেষত রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকসমূহের দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তারা সুযোগের অসত্ ব্যবহার করছেন। বাংলাদেশ ব্যাংক এখন উগান্ডা, জাম্বিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের চেয়েও কম ক্ষমতার অধিকারী। অবশ্যই বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্তৃত্ব ফিরিয়ে দেয়া দরকার, নচেত্ এর দায়-দায়িত্ব কিন্তু শেষ পর্যন্ত সুযোগ সন্ধানীরা সরকারের ঘাড়েই চাপাবে।
এদিকে দেশে ডেসটিনি যেভাবে জনগণের টাকা হাতিয়ে নিয়েছে তা সত্যি এক তাজ্জব ব্যাপার। ডেসটিনির বিরুদ্ধে বর্তমানে সরকার কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছেন। কিন্তু সাধারণ যে সমস্ত মানুষ লোভের বশবর্তী হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, সে ক্ষেত্রে বেইল আউটের জন্য উপযুক্ত পদক্ষেপ নিতে হবে। ইতোপূর্বে কাজল সিন্ডিকেট, যুবকসহ বিভিন্ন কোম্পানি কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। কয়েক বত্সর ৩/৪ জন ঊর্ধ্বতন কর্তাব্যক্তি জেল খেটে বেরিয়ে এসেছেন। অথচ কখনো শক্ত শাস্তি দেয়ার জন্য যে ধরনের কঠোরতার সাথে মামলা দায়ের করা দরকার সে ব্যাপারে সব সময়ে নেতিবাচক ভূমিকা পালন করা হয়েছে। আর তাই অন্যরা যখন দেখে যে, কিছুদিন কষ্ট করে সহজেই ছাড়া পাওয়া যায়, তখন তারা উত্সাহিত হয়। আবেদন থাকবে সাধারণ মানুষের কাছে, খুব দ্রুত বড়লোক হওয়ার জন্য শর্টকাট পদ্ধতি ব্যবহার না করার জন্য। ইউনিপে-২ এর মাধ্যমেও যারা প্রতারিত হয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন তাদের সান্ত্বনা জানানোর ভাষা আমার নেই। আইনের ফাঁক গলে যাতে আসল দোষী ব্যক্তি বেরিয়ে আসতে না পারে সে জন্য উপযুক্ত পদক্ষেপ নেয়া দরকার। দুর্ভাগ্য হলো, বাংলাদেশে আর্থিক অনিয়মের ক্ষেত্রে উপযুক্ত সাজা দেয়া হয় না। আর সাজা না হওয়ার মূল কারণ হচ্ছে মামলা রুজু করার সময়ে মামলাকে দুর্বলভাবে উপস্থাপন করা হয়। এজন্য মামলা রুজু করার সময়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অধিকতর সচেতন হওয়া বাঞ্ছনীয়। কেউ কর্তব্যকর্মে গাফিলতি করলে তার বিরুদ্ধেও আইনগত ব্যবস্থা নেয়া দরকার। কোন বিশেষ জেলার অধিবাসী হলেই সে ঐ সময়ে বিশেষ সুবিধা পাবে এ ধারণা থেকে যখন যে সরকার ক্ষমতায় থাকে, তা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।
ব্যবসা করতে গেলে কিছু আর্থিক অনিয়ম হতে পারে। কিন্তু আর্থিক অনিয়ম যখন হিমালয়ের এভারেস্ট শৃঙ্গের মত উচ্চতায় আসীন হয় তখন তা দেশ এবং জাতির জন্য অমঙ্গলজনক। বারবার এ অমঙ্গল বার্তা আমাদের দেশের সামষ্টিক অর্থনীতিকে দুর্বল করে তুলেছে। আবার সামষ্টিক অর্থনীতি যে সমস্ত ব্যাষ্টিক ভিত্তির উপর দাঁড়িয়ে আছে সেগুলোকে ভঙ্গুর করে তুলছে। জিডিপি গ্রোথ রেইট আমরা ৭% এর উপরে অনায়াসে উন্নীত করতে পারতাম, যদি দুর্নীতি আর দুর্বৃত্তায়ন না থাকত। এদেশের উন্নয়নের জন্য অবশ্যই একটি শক্তিশালী আমলাতন্ত্র থাকা দরকার। কিন্তু তাই বলে বাংলাদেশ ব্যাংককে দুর্বল করে ব্যাংকিং ডিভিশন প্রতিষ্ঠা করে যে ভুল করা হয়েছে তার বৃত্ত থেকে বেরিয়ে আসা উচিত। জনদরদী সরকার আজ আর্থিক খাতে নানা অনিয়মের মারপ্যাঁচে আবদ্ধ। কৌশলগত নেতৃত্ব প্রদানের মাধ্যমে অর্থ মন্ত্রণালয় এ অব্যবস্থা দূর করতে পারেন। তারা বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্তৃত্ব ফিরিয়ে দিতে পারেন, বাণিজ্যিক ব্যাংকিং-এ অভিজ্ঞ দীর্ঘ ত্রিশ বছরের অধিককাল কাজ করেছেন এমন কাউকে, অতীতের ট্র্যাক রেকর্ড ভাল এবং এমডি হিসাবে কখনো ঋণ খেলাপীদের পক্ষে কাজ করেননি এমন কাউকে ডেপুটি গভর্নর পদ সৃষ্টি করে নিয়োগ করা দরকার। আবার বাংলাদেশ ব্যাংকের ইন্সপেকশান টীমকে ঢেলে সাজানো দরকার। এ জন্য দক্ষ ও সত্ বাণিজ্যিক ব্যাংকারকে সরাসরি মহাব্যবস্থাপক পদে নিয়োগ দেয়া উচিত। যারা এখনো ব্যাংকিং সেক্টর এবং নন ব্যাংকিং সেক্টরে নানাবিধ দুর্নীতিকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিচ্ছেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া উচিত। দুর্ভাগ্য হলো, শেয়ার মার্কেটের কেলেংকারির বিচার না হওয়ায় ব্যাংকিং খাতে ক্রাইম বেড়ে গেছে। আসলে শেয়ার মার্কেটের ক্ষতিগ্রস্তরা আজ নিঃস্ব হয়ে গেছে। শেয়ার মার্কেটের জালিয়াতির সাথে সংশ্লিষ্টদের উপযুক্ত বিচার করা দরকার, নচেত্ ক্ষতিগ্রস্তরা দুঃখের সাগরে ভাসতেই থাকবে। আর্থিক অনিয়মের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হলে ভবিষ্যতে আরো মারাত্মক অনিয়ম হতে পারে—এক্ষেত্রে লোক দেখানো ব্যবস্থা না নিয়ে সোনালী ব্যাংকের বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ সংশ্লিষ্ট সবার বিরুদ্ধেই কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে—শীঘ্রই শুভাসম।
n লেখক :ম্যাক্রো ও ফিন্যান্সিয়াল ইকনোমিস্ট, বিভাগীয় প্রধান ও অধ্যাপক, ব্যবসা বিভাগ, প্রেসিডেন্সী বিশ্ববিদ্যালয়
ই-মেইল:pipulbd@gmail.com
No comments:
Post a Comment
Thanks for visiting.