দোহা জলবায়ু সম্মেলন-২০১২
ক্ষুদ্র দ্বীপগুলো যেন বিপন্ন পৃথিবী
অরণ্য তাপস
প্রশান্ত মহাসাগরের দক্ষিণে অবস্থিত ছবির মতো একটি দ্বীপ পৃথিবীর ক্ষুদ্রতম প্রজাতন্ত্র—নাম নাউরু। দ্বীপটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী চল্লিশ বছর বয়সি কাইরেন কেকে শোনালেন এক বিপন্ন পৃথিবীর কথা। বড় হয়ে ওঠার সে সব দিন এখনো বেশ মনে আছে তার।
কাইরেন কেকে বলেন, 'নিয়মে বাঁধা ছিল জলবায়ু। গ্রীষ্ম, বর্ষা—সবই আসত পরপর। কখনো খরা হলেও সামলে নেয়া যেত। কিন্তু এখন? এখন কেমন যেন অবাধ্য হয়ে উঠেছে দ্বীপটা।' কেকের গভীর উত্কণ্ঠা, 'এখন সব পাল্টে গেছে। জলবায়ুর মতিগতি বোঝাই দায়। এক নাগাড়ে সাত-আট বছর ধরে চলে খরা। ঝড়ের গতিও আগের চেয়ে অনেক বেশি। উপকূল ক্ষয়ে যাচ্ছে। সমুদ্র প্রায় ঘরের দরজায়!'
আরও একটা পরিচয় আছে কেকে-র। আটলান্টিক, প্রশান্ত এবং ভারত মহাসাগরে নাউরুসহ মোট ৪২টি ক্ষুদ্র দ্বীপ-রাষ্ট্র নিয়ে গঠিত অ্যালায়েন্স অব স্মল আইল্যান্ড স্টেটস (এওএসআইএস) নামের একটি জোটের প্রধান তিনি। জলবায়ু পরিবর্তন, বিশেষত গ্লোবাল ওয়ার্মিং নিয়ে এই ক্ষুদ্রাতি ক্ষুদ্র দ্বীপগুলোর দুশ্চিন্তা আন্তর্জাতিক মঞ্চে পেশ করার কাজ করে যাচ্ছে এই জোট। বর্তমানে ডেভিড আর গোলিয়াথের মতো একটা অসম যুদ্ধে সামিল এওএসআইএস। কাতারের রাজধানী দোহায় চলমান জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তন সম্মেলনে হাজির বিশ্বের সব থেকে বেশি দূষণ সৃষ্টিকারী দেশগুলোও। সেই দূষণের জেরে যে গ্লোবাল ওয়ার্মিং এবং সমুদ্রের জলস্তর বৃদ্ধি, তার প্রথম 'শিকার' নাউরুর মতো অসংখ্য ক্ষুদ্র দ্বীপ। গ্রিন হাউস গ্যাসের নিঃসরণ কমানোর জন্য বিশ্বের উন্নত দেশগুলোকে 'রাজি' করাতে তাই মরিয়া এওএসআইএস।
এই ক্ষুদ্র দ্বীপগুলোর অস্তিত্ব-সংকটের কারণ ব্যাখ্যায় কেকে নিজের দেশ নাউরুকে উপগ্রহ-চিত্রে প্রশান্ত মহাসাগরের মধ্যে একখানা নুড়ির মতো বলে উল্লেখ করেন। দ্বীপটির আয়তন মাত্র ২১ বর্গকিলোমিটার, জনসংখ্যা খুব বেশি হলে ১০ হাজার। দ্বীপের উচ্চতম জায়গাটা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে মাত্র ২০০ ফুট উপরে। দেশের ভেতরটা আবার ছিন্নভিন্ন হয়ে গিয়েছে ফসফেট উত্তোলনের কারণে। বিজ্ঞানীদের মতে—এই শতাব্দীতে অন্তত তিন ফুট বাড়বে সমুদ্রের জলস্তর। সে কথা ভেবে শিউরে ওঠেন কেকে বলেন, 'প্রশান্ত মহাসাগরের নিচু দ্বীপগুলোর দিকে ক্রমশ এগোচ্ছে মহাসাগর।' আবহাওয়া পরিবর্তনের জেরে পাল্টে যাচ্ছে সমুদ্রের জলের চরিত্রও। তাই সম্প্রতি নাউরু দ্বীপের ওই এলাকায় কমে যাচ্ছে টুনা মাছের সংখ্যা। টান পড়ছে খাবার এবং জীবিকায়।
আক্ষরিক অর্থেই ডুবে মরার আগে তাই বাঁচার আবেদন নিয়ে দোহা সম্মেলনে হাজির কেকেরা। অংশগ্রহণকারী ১৯০টি দেশের কাছে তাঁদের আর্জি, 'তাড়াতাড়িই কিছু একটা করা হোক।' আরও সমস্যা, আর চার সপ্তাহের মধ্যেই শেষ হয়ে যাচ্ছে কিয়োটো প্রোটোকলের মেয়াদ। এওএসআইএস-এর আশঙ্কা—এর পর গ্রিন হাউস গ্যাস নিঃসরণের ব্যাপারে আর কোনো বাধা-নিষেধ থাকবে না। ফলে বেপরোয়া হয়ে উঠবে উন্নত দেশগুলো।
'কিছু কিছু দেশ কিয়োটো প্রোটোকলকে দ্বিতীয় দফার জন্য এগিয়ে নিয়ে যেতে রাজি।' বললেন কেকে। কিন্তু এই প্রস্তাব এরই মধ্যে খারিজ করেছে কানাডা, রাশিয়া এবং জাপান। এতে ভীষণ হতাশ কেকে। এওএসআইএস-এর প্রার্থনা—যেন বিফলে না যায় দোহার সম্মেলন। নাউরুর মতো দ্বীপ-রাষ্ট্রের প্রাণে বাঁচার একটা কিছু ব্যবস্থা করুক শক্তিশালী দেশগুলো। এখন পর্যন্ত অবশ্য সে রাস্তায় খুব একটা আশার আলো নেই। তবু জোটবদ্ধ খুদেদের আর্জি, 'ক্ষুদ্র আমরা, তুচ্ছ নই। বাঁচতে দাও আমাদের।'
কাইরেন কেকে বলেন, 'নিয়মে বাঁধা ছিল জলবায়ু। গ্রীষ্ম, বর্ষা—সবই আসত পরপর। কখনো খরা হলেও সামলে নেয়া যেত। কিন্তু এখন? এখন কেমন যেন অবাধ্য হয়ে উঠেছে দ্বীপটা।' কেকের গভীর উত্কণ্ঠা, 'এখন সব পাল্টে গেছে। জলবায়ুর মতিগতি বোঝাই দায়। এক নাগাড়ে সাত-আট বছর ধরে চলে খরা। ঝড়ের গতিও আগের চেয়ে অনেক বেশি। উপকূল ক্ষয়ে যাচ্ছে। সমুদ্র প্রায় ঘরের দরজায়!'
আরও একটা পরিচয় আছে কেকে-র। আটলান্টিক, প্রশান্ত এবং ভারত মহাসাগরে নাউরুসহ মোট ৪২টি ক্ষুদ্র দ্বীপ-রাষ্ট্র নিয়ে গঠিত অ্যালায়েন্স অব স্মল আইল্যান্ড স্টেটস (এওএসআইএস) নামের একটি জোটের প্রধান তিনি। জলবায়ু পরিবর্তন, বিশেষত গ্লোবাল ওয়ার্মিং নিয়ে এই ক্ষুদ্রাতি ক্ষুদ্র দ্বীপগুলোর দুশ্চিন্তা আন্তর্জাতিক মঞ্চে পেশ করার কাজ করে যাচ্ছে এই জোট। বর্তমানে ডেভিড আর গোলিয়াথের মতো একটা অসম যুদ্ধে সামিল এওএসআইএস। কাতারের রাজধানী দোহায় চলমান জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তন সম্মেলনে হাজির বিশ্বের সব থেকে বেশি দূষণ সৃষ্টিকারী দেশগুলোও। সেই দূষণের জেরে যে গ্লোবাল ওয়ার্মিং এবং সমুদ্রের জলস্তর বৃদ্ধি, তার প্রথম 'শিকার' নাউরুর মতো অসংখ্য ক্ষুদ্র দ্বীপ। গ্রিন হাউস গ্যাসের নিঃসরণ কমানোর জন্য বিশ্বের উন্নত দেশগুলোকে 'রাজি' করাতে তাই মরিয়া এওএসআইএস।
এই ক্ষুদ্র দ্বীপগুলোর অস্তিত্ব-সংকটের কারণ ব্যাখ্যায় কেকে নিজের দেশ নাউরুকে উপগ্রহ-চিত্রে প্রশান্ত মহাসাগরের মধ্যে একখানা নুড়ির মতো বলে উল্লেখ করেন। দ্বীপটির আয়তন মাত্র ২১ বর্গকিলোমিটার, জনসংখ্যা খুব বেশি হলে ১০ হাজার। দ্বীপের উচ্চতম জায়গাটা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে মাত্র ২০০ ফুট উপরে। দেশের ভেতরটা আবার ছিন্নভিন্ন হয়ে গিয়েছে ফসফেট উত্তোলনের কারণে। বিজ্ঞানীদের মতে—এই শতাব্দীতে অন্তত তিন ফুট বাড়বে সমুদ্রের জলস্তর। সে কথা ভেবে শিউরে ওঠেন কেকে বলেন, 'প্রশান্ত মহাসাগরের নিচু দ্বীপগুলোর দিকে ক্রমশ এগোচ্ছে মহাসাগর।' আবহাওয়া পরিবর্তনের জেরে পাল্টে যাচ্ছে সমুদ্রের জলের চরিত্রও। তাই সম্প্রতি নাউরু দ্বীপের ওই এলাকায় কমে যাচ্ছে টুনা মাছের সংখ্যা। টান পড়ছে খাবার এবং জীবিকায়।
আক্ষরিক অর্থেই ডুবে মরার আগে তাই বাঁচার আবেদন নিয়ে দোহা সম্মেলনে হাজির কেকেরা। অংশগ্রহণকারী ১৯০টি দেশের কাছে তাঁদের আর্জি, 'তাড়াতাড়িই কিছু একটা করা হোক।' আরও সমস্যা, আর চার সপ্তাহের মধ্যেই শেষ হয়ে যাচ্ছে কিয়োটো প্রোটোকলের মেয়াদ। এওএসআইএস-এর আশঙ্কা—এর পর গ্রিন হাউস গ্যাস নিঃসরণের ব্যাপারে আর কোনো বাধা-নিষেধ থাকবে না। ফলে বেপরোয়া হয়ে উঠবে উন্নত দেশগুলো।
'কিছু কিছু দেশ কিয়োটো প্রোটোকলকে দ্বিতীয় দফার জন্য এগিয়ে নিয়ে যেতে রাজি।' বললেন কেকে। কিন্তু এই প্রস্তাব এরই মধ্যে খারিজ করেছে কানাডা, রাশিয়া এবং জাপান। এতে ভীষণ হতাশ কেকে। এওএসআইএস-এর প্রার্থনা—যেন বিফলে না যায় দোহার সম্মেলন। নাউরুর মতো দ্বীপ-রাষ্ট্রের প্রাণে বাঁচার একটা কিছু ব্যবস্থা করুক শক্তিশালী দেশগুলো। এখন পর্যন্ত অবশ্য সে রাস্তায় খুব একটা আশার আলো নেই। তবু জোটবদ্ধ খুদেদের আর্জি, 'ক্ষুদ্র আমরা, তুচ্ছ নই। বাঁচতে দাও আমাদের।'
No comments:
Post a Comment
Thanks for visiting.