বর্তমান সরকারের চার বছর পূর্তি উপলক্ষে গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যা সাতটায় জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন। তাঁর এই ভাষণ টেলিভিশন ও বেতারে একযোগে সম্প্রচার করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী সংঘাতের পথ পরিহার করতে বিরোধী দলের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচানোর চেষ্টা করবেন না। তাহলে জাতি আপনাদের কখনোই ক্ষমা করবে না।’
প্রধানমন্ত্রী ৩০ মিনিটের ভাষণে প্রায় তিন হাজার শব্দের একটি লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন। বক্তব্যের বেশির ভাগজুড়েই ছিল তাঁর সরকারের চার বছরের বিভিন্ন সফলতার কথা; বিশেষ করে অর্থনীতি, বিদ্যুৎ, কৃষি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, যোগাযোগ, তথ্যপ্রযুক্তি খাতের উন্নয়নের চিত্র। বক্তব্যে বিরোধী দলের সমালোচনাও করেন তিনি। তিনি জাতিসংঘে তাঁর উপস্থাপন করা বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় ‘জনগণের ক্ষমতায়ন ও উন্নয়ন মডেল’ প্রস্তাব পাস হওয়া এবং তাঁর মেয়ে সায়মা ওয়াজেদের অটিজম সচেতনতার বিষয়টিও সাধারণ পরিষদে গৃহীত হওয়ার কথা উল্লেখ করেন।
শেখ হাসিনা ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি সেনা-সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ক্ষমতা গ্রহণ, দেশের প্রধান দুই নেত্রীকে রাজনীতি থেকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টার ষড়যন্ত্রের কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, তিন মাসের তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রায় দুই বছর ক্ষমতা আঁকড়ে রাখে এবং চিরস্থায়ীভাবে ক্ষমতায় থাকার চেষ্টা চালায়। ‘মাইনাস টু ফর্মুলা’ বাস্তবায়ন করতে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি শুরু করে। গোয়েন্দা সংস্থা দিয়ে নির্যাতন চালাতে থাকে। তিনি বলেন, ‘সেদিন যারা মাইনাস টু ফর্মুলা প্রবর্তন করতে চেয়েছিল, তারা এখনো সক্রিয়। মাঝেমধ্যেই মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে চাইছে।’
ভবিষ্যতে জনগণের সাংবিধানিক অধিকার যেন কোনো মহল কেড়ে নিতে না পারে, সে জন্য দেশবাসীকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, যুদ্ধাপরাধী-স্বাধীনতাবিরোধীদের বিচার গণদাবিতে পরিণত হয়েছে। এ দাবিকে অগ্রাহ্য করে বিএনপি যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচানোর জন্য মাঠে নেমেছে। নৈরাজ্য সৃষ্টি করছে। জামায়াত ধ্বংসাত্মক পথ বেছে নিয়েছে। তিনি বলেন, বিএনপি-জামায়াত যত ষড়যন্ত্র করুক, যত অপচেষ্টা করুক, যুদ্ধাপরাধী, মা-বোনদের সম্ভ্রম হরণকারী, বুদ্ধিজীবী হত্যাকারী, ঘরে ঘরে লুটপাট-অগ্নিসংযোগ-নির্যাতনকারীদের বিচার বাংলার মাটিতে হবেই।
প্রধানমন্ত্রী দাবি করেন, নির্বাচনের আগে তাঁর দল যেসব অঙ্গীকার করেছিল, নানামুখী প্রতিবন্ধকতা ও সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই লক্ষ্য পূরণ করছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে লক্ষ্যের চেয়েও বেশি অর্জিত হয়েছে। এই অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকবে। তিনি বলেন, অর্থনীতি খুব দৃঢ় অবস্থানে আছে।
বিশ্বে বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের ‘রোল মডেল’। এ সময় তিনি চার বছর আগে তাঁর সরকার দায়িত্ব নেওয়ার প্রাক্কালে দেশের সার্বিক পরিস্থিতি তুলে ধরেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে তাঁর সরকার কঠোর অবস্থান নিয়েছে। দুর্নীতি দমন কমিশনকে শক্তিশালী করা হয়েছে। দুদক স্বাধীনভাবে কাজ করছে। তদন্তের স্বার্থে দুদক মন্ত্রী, উপদেষ্টা, সাংসদ ও সচিবকে তলব করছে। বারবার জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারছে। মামলা দিচ্ছে। তিনি প্রশ্ন করেন, বিএনপি-জামায়াত জোটের সময় কি এমনটা কল্পনাও করা যেত?
শেখ হাসিনা বলেন, সব অনিয়ম দূর করার স্বার্থে হল-মার্ক ও ডেসটিনির অর্থ আত্মসাতের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত আছে এবং থাকবে। অর্থ পাচার রোধে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ও পুঁজিবাজারকে চাঙা করতে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন পুনর্গঠন করা হয়েছে। তিনি বলেন, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য বিচার বিভাগ সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে কাজ করছে। জনপ্রশাসনকে দক্ষ ও জবাবদিহিমূলক করা হয়েছে। নারীর অধিকার সুরক্ষায় পারিবারিক সহিংসতা প্রতিরোধ ও সুরক্ষা আইন করা হয়েছে। দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে।
নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী বর্তমান সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, গত চার বছরে ব্যাংকিংসহ সব অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড, সেবা প্রদান, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি—প্রতিটি ক্ষেত্রে তথ্যপ্রযুক্তির প্রয়োগ নিশ্চিত করা হয়েছে। সব বয়সী জনগণ এই প্রযুক্তিকে গ্রহণ করেছেন। প্রতিটি ইউনিয়নে ইন্টারনেট সার্ভিস ও তথ্যসেবাকেন্দ্র থেকে প্রতি মাসে ৪০ লাখ গ্রামীণ মানুষ ই-সেবা নিচ্ছেন। থ্রিজি মোবাইল ফোন চালু, ইন্টারনেটের গতি বাড়ানো ও ব্যয় কমানো হয়েছে। ইন্টারনেট গ্রাহকসংখ্যা সাত গুণ বেড়ে প্রায় চার কোটিতে উন্নীত হয়েছে।
বিদ্যুৎ খাত সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, চার বছরে তিন হাজার ৮৪৫ মেগাওয়াট ক্ষমতার ৫৪টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে। এখন সর্বোচ্চ ছয় হাজার ৩৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করা যাচ্ছে। বিদ্যুৎ উৎপাদনক্ষমতা আট হাজার ৫২৫ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। পাঁচ হাজার ২৮৭ মেগাওয়াট ক্ষমতার আরও ২৬টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণাধীন। এক হাজার মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের লক্ষ্যে রাশিয়ার সঙ্গে চুক্তি করা হয়েছে। ভারত থেকে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি শিগগিরই শুরু হবে। তিনি বলেন, গত চার বছরে সরকারি খাতে পাঁচ লাখ ও বেসরকারি খাত মিলিয়ে ৭৫ লাখের অধিক মানুষের কর্মসংস্থান করা হয়েছে। এই সময়ে দারিদ্র্যের হার ১০ শতাংশ কমেছে। বাংলাদেশ খাদ্যে প্রায় স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। ডাল, মসলা, তেলবীজ, ফল ও সবজি উৎপাদনে কৃষকদের বিশেষ সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে কোনো নির্বাচনই সুষ্ঠুভাবে করতে পারেনি। তারা ঢাকার মিরপুর ও মাগুরার উপনির্বাচনে ব্যাপক কারচুপি ও সন্ত্রাস করে। তাঁর সরকার ক্ষমতায় এসে নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী করছে। নির্বাচন কমিশনকে সম্পূর্ণ স্বাধীন ও নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে দেওয়ার পরিবেশ তৈরি করা হয়েছে।
পাঠকের মন্তব্য
পাঠকদের নির্বাচিত মন্তব্য প্রতি সোমবার প্রথম আলোর সম্পাদকীয় পাতায় প্রকাশিত হচ্ছে।
- Tanvir Ahmed২০১৩.০১.১২ ০২:০১
- Engr. Golam Robbani Nayan২০১৩.০১.১২ ০২:০৬
- Tanvir২০১৩.০১.১২ ০৩:৩০
- Reza২০১৩.০১.১২ ০৪:৩৬
- Reza২০১৩.০১.১২ ০৪:৩৯
- Reza২০১৩.০১.১২ ০৪:৪৩
- shahed২০১৩.০১.১২ ০৫:০৪
- shofiqur rahman২০১৩.০১.১২ ০৫:০৬
- Shuvo২০১৩.০১.১২ ০৬:৩১
- Sezan২০১৩.০১.১২ ০৭:০১
- Muzahid২০১৩.০১.১২ ০৭:২৬
- Bappy২০১৩.০১.১২ ০৭:২৮
- maruf khan২০১৩.০১.১২ ০৭:৩২
- ২০১৩.০১.১২ ০৭:৪১
- Aataur Rahman২০১৩.০১.১২ ০৭:৪৫
- Sezan২০১৩.০১.১২ ০৭:৫৯
- Tajerul islam sadhin২০১৩.০১.১২ ০৮:১৪
- Md. Mahbubur Rab২০১৩.০১.১২ ০৮:১৭
- Abul Abdullah২০১৩.০১.১২ ০৮:৩০
- kabir ahmed bahar২০১৩.০১.১২ ০৮:৩৩
- Mohammad Shah Alam২০১৩.০১.১২ ০৯:১২
- Beauty২০১৩.০১.১২ ০৯:১৬
- জায়েদ কোরেশী, মস্কো২০১৩.০১.১২ ০৯:২৫
- mahamud২০১৩.০১.১২ ০৯:৩০
- mahamud২০১৩.০১.১২ ০৯:৩৪
- Beauty২০১৩.০১.১২ ০৯:৩৭
- ২০১৩.০১.১২ ০৯:৪০
- sayed Ahmed২০১৩.০১.১২ ০৯:৪২
- Albert Khan২০১৩.০১.১২ ১০:০৫
- mahamud২০১৩.০১.১২ ১০:০৫
- ২০১৩.০১.১২ ১০:১০
- Md. Farid২০১৩.০১.১২ ১০:১৩
- mahamud২০১৩.০১.১২ ১০:১৩
- Faruq hossain২০১৩.০১.১২ ১০:১৯
- নয়ন ১৭২০১৩.০১.১২ ১০:২৪
- নয়ন ১৭২০১৩.০১.১২ ১০:২৭
- Saidur Rahman২০১৩.০১.১২ ১০:৩৬
- Pappu (Canada)২০১৩.০১.১২ ১০:৪০
- mishu২০১৩.০১.১২ ১০:৪৩
- sajib২০১৩.০১.১২ ১০:৪৭
- mamun bhuyan২০১৩.০১.১২ ১০:৫৬
- Himu২০১৩.০১.১২ ১১:২১
- mahmudul hasan২০১৩.০১.১২ ১১:২২
- ২০১৩.০১.১২ ১১:৩০
- ২০১৩.০১.১২ ১২:১৪
- Foyezur Rahaman২০১৩.০১.১২ ১২:১৮
- টুটুল, ফিরোজশাহ, চট্টগ্রাম২০১৩.০১.১২ ১২:৩৫
- Md.Syful Islam২০১৩.০১.১২ ১২:৩৮
- Tutul২০১৩.০১.১২ ১২:৪২
- ২০১৩.০১.১২ ১২:৪৮
- angel২০১৩.০১.১২ ১৩:২০
- মনিরুজ্জামান২০১৩.০১.১২ ১৩:২০
- মনিরুজ্জামান২০১৩.০১.১২ ১৩:২৯
- Shafiq Islam২০১৩.০১.১২ ১৩:৩৯
- Md. Matiur Rahman Palash২০১৩.০১.১২ ১৩:৪০
- Muktar২০১৩.০১.১২ ১৩:৪৫
- Anisur২০১৩.০১.১২ ১৪:১৭
- mohammad mijanur rahman bhuiyan২০১৩.০১.১২ ১৪:২০
- রিহান্নুম রুবাইয়াত২০১৩.০১.১২ ১৪:৪০
- Faisal২০১৩.০১.১২ ১৪:৪৯
- ২০১৩.০১.১২ ১৫:০৩
- Imran২০১৩.০১.১২ ১৫:১৩
- kabir২০১৩.০১.১২ ১৫:৩১
- Tutul২০১৩.০১.১২ ১৫:৩৭
- Sharif Hossain Sumon২০১৩.০১.১২ ১৫:৫৮
- Prodip২০১৩.০১.১২ ১৬:০৮
- Rukon২০১৩.০১.১২ ১৬:১৪
- Azaharul islam২০১৩.০১.১২ ১৬:৫৩
- Raihan২০১৩.০১.১২ ১৭:২৮
- muhammad jasim uddin২০১৩.০১.১২ ১৭:৩৮
- Sharif Hossain Sumon২০১৩.০১.১২ ১৮:২৮
- ২০১৩.০১.১২ ১৮:৩৫
- Aminul Islam২০১৩.০১.১২ ১৮:৪৮
- ২০১৩.০১.১২ ১৯:০৯
- Faruk Alam২০১৩.০১.১২ ২০:০৮
- Russell২০১৩.০১.১২ ২০:৫৩
- VASKAR HALDER২০১৩.০১.১২ ২১:০৮
- giasuddin২০১৩.০১.১২ ২২:৩২
- Ethen২০১৩.০১.১২ ২৩:০৮
- আহমদ ময়েজ২০১৩.০১.১৩ ০০:৪৭
No comments:
Post a Comment
Thanks for visiting.