সম্প্রতি একটি আমেরিকান ম্যাগাজিনে একটি মজার প্রবন্ধ পাঠ করেছি। মজার প্রবন্ধ বলছি এজন্যে যে, এই লেখাটিতে ব্যক্ত ভবিষ্যদ্বাণী যদি সঠিক হয়, তাহলে মধ্যপ্রাচ্যেই পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদের কবর তৈরি হচ্ছে বলে যে রাজনৈতিক প্রবাদ রয়েছে তার যথার্থতা প্রমাণিত হবে। মার্কিন প্রাবন্ধিক লিখেছেন, পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদী শক্তির হাতে প্রথম মহাযুদ্ধের পর শেষ ইসলামী সাম্রাজ্য (অটোমান এমপায়ার বা ওসমানিয়া সাম্রাজ্য) ধ্বংস হয়। তাকে টুকরো টুকরো করে ভাগ করে বিভিন্ন ইউরোপিয়ান দেশের বিশেষ করে ব্রিটিশদের কলোনি স্থাপিত হয়। পরবর্তীকালে ব্রিটিশদের স্থান দখল করে আমেরিকা। এখন বিশ্ব পরিস্থিতির দ্রুত পরিবর্তনে মধ্যপ্রাচ্যে তালেবান আগ্রাসনের (পশ্চিমাদের ভাষায় টেরোরিজম) মুখে আমেরিকা পিছু হটছে। এই পিছু হটা বন্ধ হবে মনে হয় না এবং মধ্যপ্রাচ্যে অটোমান সাম্রাজ্যের বদলে কালক্রমে একটি তালেবান সাম্রাজ্য গড়ে উঠলে বিস্ময়ের কিছু নেই।
আজ লিখতে বসে আমেরিকান ম্যাগাজিনে পঠিত এই প্রবন্ধটির কথা মনে পড়লো। এটি পাঠ করেছি বেশ কিছুদিন হয়। পড়ার সময় লেখকের মন্তব্যকে খুব গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়নি। কিন্তু যতোই সময় যাচ্ছে মনে হচ্ছে, এই তেমন খ্যাত নন আমেরিকান লেখক হয়তো কোনো অত্যুক্তি করেননি। মধ্যপ্রাচ্যের সাম্প্রতিক খবর তারই ইঙ্গিত দেয়। ইরাকে প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেনকে মিথ্যা অজুহাতে হত্যা করে এবং দেশটিতে অবৈধ আগ্রাসন চালিয়ে আমেরিকা ও ব্রিটেন সেখানে ধ্বংসযজ্ঞ সৃষ্টি করেছে। বহু ঢক্কা নিনাদিত শান্তি ও গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে পারেনি।
সুন্নি বিদ্রোহীরা ইরাকে মসুল ও তিরকিত শহর কব্জা করার পর বাগদাদের দিকে এগুচ্ছে। পশ্চিমা তাঁবেদার সরকার আমেরিকার কাছে আবেদন জানিয়েছে, তারা যেন এই সরকারের পতন ঠেকানোর জন্য বিদ্রোহীদের উপর বিমান হামলা চালান। ওবামা সরকার গুরুত্বের সঙ্গে প্রস্তাবটি বিবেচনা করছেন এবং পারস্য উপসাগরে রণতরী মোতায়েন করেছেন। কিন্তু আমেরিকান জনমত আবার ইরাক যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ার ঘোর বিরোধী। তারা মনে করে, ইরাক যুদ্ধ তাদের অর্থনীতি বিপন্ন করেছে; বিশ্বে আমেরিকার নৈতিক নেতৃত্ব ধ্বংস করেছে। এই বিরুদ্ধ জনমতের মোকাবিলায় ওবামা সরকার ইরাকে বিদ্রোহীদের উপর সীমিত বিমান হামলা চালাতে গেলেও তাতে বিদ্রোহীদের অভিযান ঠেকাতে পারবে বলে কেউ মনে করেন না।
ভাগ্যের পরিহাস; যে ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানকে ধ্বংস করার জন্য আমেরিকা আট বছরব্যাপী ইরান-ইরাক যুদ্ধ বাধিয়ে সাবেক সাদ্দাম সরকারকে অস্ত্র ও অন্যান্য সাহায্য জুগিয়েছে, এখন সেই ইরাকে সুন্নি অভিযান ঠেকানোর জন্য ইরানের কাছে সাহায্য প্রার্থনা করেছে। ওয়াশিংটনের সম্ভবত ধারণা ছিলো, ইরান যেহেতু শিয়া দেশ, সেহেতু ইরাকে সুুন্নি অভিযান ঠেকানোর জন্য তারা ইরানের শিয়া সরকারকে উত্সাহিত করতে পারবেন। এই শিয়া-সুন্নিদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির খেলা খেলে আমেরিকা অতীতেও মধ্যপ্রাচ্যে মুসলিম দেশগুলোতে ভ্রাতৃঘাতী বিবাদ বাধিয়ে নিজেদের প্রভুত্ব কায়েম রেখেছে। সুন্নি সউদি আরব ও শিয়া ইরানের মধ্যে ওয়াশিংটন এমনভাবে তিক্ততা সৃষ্টি করেছে যে, সউদি বাদশাহেরা মধ্যপ্রাচ্যে আরব মুসলমানদের সবচাইতে বড় শত্রু ইসরায়েলের সঙ্গে পর্যন্ত মিতালি পাতিয়ে মুসলিম দেশ ইরানে বোমা হামলা চালানোর জন্য আমেরিকাকে অনুরোধ জানাচ্ছে।
আমেরিকা ইরানের বিরুদ্ধে চোখ রাঙানি অব্যাহত রাখলেও এখন পর্যন্ত কোনো সামরিক ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি; বরং ইরাকে সুন্নি অভিযান ঠেকানোর জন্য শিয়া ইরানের সাহায্য প্রার্থনা করেছে। শিয়া-সুন্নি যুদ্ধ বাধানোর এই আমেরিকান কৌশলের কাছে তেহরান এবার হার মানেনি। বরং তার প্রতিবেশী দেশ ইরাকে কোনো সামরিক হামলা না চালানোর জন্য আমেরিকাকে কঠোরভাবে হুঁশিয়ার করে দিয়েছে। অন্যদিকে আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সৈন্য প্রত্যাহার হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কাবুলে তালেবান অভিযান ঠেকিয়ে রাখা যাবে কিনা তা নিয়ে ওয়াশিংটনও নিঃসন্দেহ নয়।
আমেরিকা এখন নিজের প্যাঁচে নিজেই আটকে পড়েছে। ইসরায়েলকে মদদ প্রদান এবং আরব দেশগুলোকে পদানত রাখার লক্ষ্যে ইরাকের সেক্যুলার সাদ্দাম সরকার এবং লিবিয়ার আধা সেক্যুলার গাদ্দাফি সরকারকে ধ্বংস করে সেখানে তালেবান, আল কায়দা তথা জিহাদিস্টদের রাজত্ব প্রতিষ্ঠার পথ সুগম করে দিয়েছে। রাশিয়া ও চীন সময় থাকতে সতর্ক হয়ে যাওয়ার জন্য সিরিয়ার সেক্যুলার আসাদ সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করা এখন পর্যন্ত সম্ভব হয়নি। কিন্তু সেখানেও পশ্চিমাদেরই মদদপুষ্ট তথাকথিত ইসলামী টেরোরিস্টদের সন্ত্রাস অব্যাহত রয়েছে।
কোনো কোনো মার্কিন পর্যবেক্ষকের মতেই, আমেরিকার সম্প্রসারণবাদী ও আধিপত্যবাদী নীতি এখনো পরিবর্তিত হয়নি। কিন্তু তার আড়ালে একটি "successful retreat" বা সাফল্যজনক পশ্চাত্পসরণের নীতির আভাস পাওয়া যায়। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধে জয়লাভের পরও যেমন ব্রিটিশ সাম্রাজ্য রক্ষা পায়নি, তেমনি বর্তমানে গোটা বিশ্বে আমেরিকা তার সামরিক থাবার বিস্তার অব্যাহত রেখেও সাম্রাজ্য রক্ষা করতে পারছে না। যুদ্ধাস্ত্র উত্পাদন ও বিক্রি এখন তার অর্থনীতির প্রধান নির্ভর। কিন্তু সেই যুদ্ধেরও তেমন বিস্তার ঘটানো যাচ্ছে না, যুদ্ধে দ্রুত সাফল্য দেখানো যাচ্ছে না ইরাক ও আফগান যুদ্ধের পর। এই দুই দেশেই আমেরিকার "রণ পা" মাটিতে আটকে গেছে। সর্বত্র ভিয়েতনাম সিনড্রম। ভিয়েতনাম থেকে আমেরিকা তবু পালাতে পেরেছিল। মধ্যপ্রাচ্য থেকে সে সসম্মানে পালাতেও পারছে না। পালাতে গেলে পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদের কবর এখনই মধ্যপ্রাচ্যের মাটিতেই তৈরি হয়ে যাবে।
মার্কিন বিদেশ নীতি এখন সর্বত্র হোঁচট খাচ্ছে। তাদের ইচ্ছে ছিল কয়েকটি মুসলিম দেশে জনসমর্থনহীন পুরনো কিছু ডিক্টেটরের বদলে তাদের পছন্দসই নতুন কিছু শাসক ক্ষমতায় বসানো এবং এজন্য আরব জনগণের অসন্তোষকে কাজে লাগিয়ে আরব বসন্ত তৈরি করা। বসন্ত তৈরি হয়েছে কিন্তু কোকিল ডাকেনি। আলজেরিয়া, তিউনিসিয়া ও মিসর, এমনকি দীর্ঘকালের সেক্যুলার তুরস্ক পর্যন্ত উগ্র ইসলামিস্টদের ঘাঁটি প্রসারিত হয়েছে। মিসরে সামরিক বাহিনীর সাহায্যে নির্বাচিত মুসলিম ব্রাদারহুড সরকারকে ক্ষমতা থেকে হটাতে হয়েছে। বন্দুকের জোরে সেনা প্রধান জেনারেল সিসি ক্ষমতায় বসেছেন এবং ইসলামিস্টদের দমনের জন্য অত্যাচারের স্টিম রোলার চালাচ্ছেন বটে, অনেকের ধারণা, এই সরকার বেশিদিন ক্ষমতায় থাকতে পারবে না। ভাগ্য অনুকূল না হলে সিসি সাদতের পরিণতি বরণ করতে পারেন।
মধ্যপ্রাচ্যে সেক্যুলারিজমের সবচাইতে বড় ঘাঁটি ছিলো তুরস্ক। কামাল আতাতুর্ক অটোমান সাম্রাজ্যের ধ্বংসাবশেষের উপর এমন একটি সেক্যুলার রাষ্ট্রের ভিত্তি তৈরি করেছিলেন যে, অনেকেই মনে করেছিলেন, এই সেক্যুলার রাষ্ট্রটি কখনো ধর্মীয় জাতীয়তা ও মৌলবাদের দিকে ফিরে যাবে না। এই প্রত্যাশা ব্যর্থ হয়েছে। আমেরিকা এই দেশটিতেও সেক্যুলারিজমকে বাঁচতে দেয়নি। তারা প্রথমে তুর্কি সেনাবাহিনীকে কব্জায় নেয়; তারপর কামালবাদ বা সেক্যুলারিজম রক্ষার নামে রাষ্ট্র পরিচালনায় সেনাবাহিনীর কর্তৃত্ব নিশ্চিত করে।
আমেরিকায় এই টার্কিস-পলিসিও তার জন্য বুমেরাং হয়েছে। তুরস্কের জনসাধারণের মধ্যে ক্রমবর্ধমান মার্কিন বিরোধী মনোভাব শেষ পর্যন্ত সেনাবাহিনী দ্বারা রক্ষিত কামালবাদ বা সেক্যুলারিজমের বিরুদ্ধেও চলে যায় এবং তুরস্কেও ইসলামপন্থিরা এখন রাষ্ট্রক্ষমতা দখলে সক্ষম হয়েছে। বাংলাদেশে একাত্তরের জামায়াতি যুদ্ধাপরাধীদের মৃত্যুদণ্ডাদেশ বাতিল করার জন্য সউদি আরবও প্রকাশ্যে চাপ সৃষ্টি করেনি; কিন্তু করেছে এককালের সেক্যুলার দেশ তুরস্ক।
পাকিস্তানেও নওয়াজ শরীফের নেতৃত্বে একটি নড়বড়ে গণতান্ত্রিক সরকার আমেরিকার আনুকূল্যে ক্ষমতায় আছে। কিন্তু দেশটিতে তালেবান ও আল কায়দার সন্ত্রাস বেড়ে যাওয়া ছাড়া কমেনি। সম্প্রতি করাচি বিমানবন্দরে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলা তার প্রমাণ। একটি স্বাধীন ও মিত্র দেশে (জনগণ আমেরিকার মিত্র নয়) ক্রমাগত ড্রোন হামলা চালিয়েও আমেরিকা পাকিস্তানকে তালেবানদের খপ্পরমুক্ত করতে পারেনি। পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশে নির্বাচনে জিতে সরকার গঠন করেছিল ইসলামপন্থি দলই। পাকিস্তান থেকে আমেরিকা সরে এলে এবং সেখানে একটি অবাধ নির্বাচন হলে তালেবানেরা তাতে জিতে মিসরের মত কেন্দ্রীয় ক্ষমতা দখল করতে পারবে না এই নিশ্চয়তা কেউ দিতে পারে না! এমনটা ঘটলে মিসরের মতো সেনাবাহিনীর সহায়তায় তালেবানদের ক্ষমতা থেকে হটানো যাবে এমন সম্ভাবনাও কম। কারণ, পাকিস্তানের সেনাবাহিনী, এমনকি সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইতেও তালেবান সমর্থকদের সংখ্যা এখনো বেশি। সাবেক প্রেসিডেন্ট পারভেজ মোশাররফের আমলে সেনাবাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থায় দারুণ 'পার্জ' চালিয়েও তালেবান ও আল কায়দা সমর্থকদের সংখ্যা কমানো যায়নি।
প্রথম মহাযুদ্ধে অটোমান সাম্রাজ্যের পতন ও মুসলিম খেলাফতের বিপর্যয়ের প্রথম কারণ, যুদ্ধে তাদের মিত্র জার্মানির পরাজয়। দ্বিতীয় কারণ, অটোমান খলিফাদের মধ্যযুগীয় রণনীতি ও সেকেলে যুদ্ধাস্ত্র ব্যবহার। পশ্চিমাদের আধুনিক যুদ্ধাস্ত্রের সামনে সেকেলে যুদ্ধাস্ত্র নিয়ে তাদের বিশাল বাহিনীও টেকেনি। বর্তমানে অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। সাবেক সোভিয়েট ইউনিয়নকে ধ্বংস করার জন্য তালেবান ও আল কায়দা বাহিনী গঠন এবং তাদের হাতে আধুনিক যুদ্ধাস্ত্র তুলে দিয়েছিল আমেরিকা। এমনকি আধুনিক যুদ্ধ কৌশলও শিক্ষা দিয়েছে। ফলে এখন রণক্ষেত্রে আল কায়দার গেরিলা কৌশলের সঙ্গে আমেরিকা অথবা ন্যাটোর সৈন্যও পেরে উঠছে না। আমেরিকার হাতে উন্নত মারণাস্ত্র থাকায় এবং আকাশযুদ্ধে একাধিপত্য থাকায় তালেবানেরা পশ্চিমাদের সঙ্গে এখনো যুদ্ধে পেরে উঠছে না। কিন্তু এই অবস্থা বেশিদিন অব্যাহত থাকবে তা মনে করার কারণ নেই। পরমাণুশক্তিধর পাকিস্তানে যদি তালেবানেরা ক্ষমতা দখল করতে পারে এবং আকাশযুদ্ধে লিপ্ত হওয়ার ক্ষমতা অর্জন করে তাহলে বর্তমান অবস্থার মোড় ঘুরে যাবে। একথা আমার নয়, কোনো কোনো মার্কিন সমর বিশেষজ্ঞেরই অভিমত।
একটি মার্কিন ম্যাগাজিনে প্রকাশিত একজন মার্কিন লেখকের ভবিষ্যতের তালেবান সাম্রাজ্য সম্পর্কিত ভবিষ্যদ্বাণীটি আমি তাই একেবারে উড়িয়ে দেই না। অদূর ভবিষ্যতে পশ্চিমাদের তথাকথিত ওয়ার অন টেরোরিজমকে সম্পূর্ণ ব্যর্থ করে দিয়ে যদি মধ্যপ্রাচ্য ও অন্য মুসলিম দেশগুলো নিয়ে একধরনের তালেবান সাম্রাজ্য বা তালেবান প্রভাবিত রাষ্ট্রজোট গড়ে ওঠে তাহলে বিস্মিত হওয়ার কিছু নেই। তবে এই সম্ভাবনা বা আশঙ্কার মুখেও আমি একটি ক্ষীণ আশা পোষণ করি। আশাটি হলো—ফতোয়া ও বন্দুকের সমন্বয়ে সাম্রাজ্য গড়ে তোলা যায়, আধুনিক যুদ্ধাস্ত্র ও প্রযুক্তিও সেই সাম্রাজ্য গড়ায় সাহায্য যোগাতে পারে, কিন্তু আধুনিক সমাজ-চেতনা ও বহুত্ববাদ (গণতন্ত্র) ছাড়া সেই সাম্রাজ্য রক্ষা করা যাবে না। এ যুগেতো নয়ই।
একটি ডকট্রিন (কম্যুনিস্ট ফতোয়া) এবং সামরিক দিক থেকে সুপার পাওয়ারের শক্তি নিয়েও সোভিয়েট ইউনিয়ন ৭০ বছরের বেশি টিকতে পারেনি। তালেবানেরা আধুনিক যুদ্ধাস্ত্রের অধিকারী, আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারও শিখেছে, কিন্তু সমাজ চেতনার দিক থেকে তারা মধ্যযুগে এবং তাদের রাষ্ট্রব্যবস্থাও ফতোয়া ও অস্ত্র নির্ভর ব্যবস্থা। এই ধরনের সাম্রাজ্য হুজুগের জোরে প্রতিষ্ঠা করা গেলেও সত্তর বছর কেন, সাত বছরও টিকবে না। এখানেই আমরা যারা গণতন্ত্র ও সেক্যুলারিজমে বিশ্বাস করি, তাদের শেষ ভরসা।
প্রথম মহাযুদ্ধের পর অবিভক্ত ভারতের মুসলমানেরা একটা ভুল করেছিলেন। তারা প্রত্যক্ষভাবে স্বাধীনতার আন্দোলনে না নেমে তুরস্কের মধ্যযুগীয় খেলাফত উদ্ধারের জন্য খেলাফত আন্দোলন শুরু করেছিলেন। মোহাম্মদ আলী জিন্না পর্যন্ত এই আন্দোলনের সমালোচনা করে বলেছিলেন, 'এই খেলাফত আন্দোলন মধ্যযুগের পচা অতীতে ফিরে যাওয়ার আন্দোলন। এই আন্দোলন সফল হতে পারে না। এই আন্দোলন এখন যতো বড় জোয়ারই সৃষ্টি করুক না কেন!'
জিন্নার এই বাণী স্মরণ করে এ যুগেও বলা চলে, বর্তমানের তালেবান আন্দোলন যতো শক্তিশালী হোক, এমনকি মধ্যপ্রাচ্যে যদি আবার তালেবান সাম্রাজ্যও গড়ে তুলতে পারে, তার আয়ু হবে খুবই স্বল্প। আধুনিক বহুত্ববাদী বিশ্ব-সমাজের চ্যালেঞ্জের সামনে তা টিকতে পারবে না। পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদী শক্তি পরাজিত হলেও নয়। কারণ, ফতোয়া (তা ধর্মীয় বা মার্কসবাদী যাই হোক) এবং বন্দুকের শক্তি কখনো কোনো সাম্রাজ্য ও রাষ্ট্র ব্যবস্থাকে স্থায়িত্ব দিতে পারে না।
No comments:
Post a Comment
Thanks for visiting.