বিসিএস লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতিঃ বাংলা -মাসরুফ হোসেন
১ লক্ষ ৬৩ হাজার পরীক্ষার্থীদের মধ্য থেকে যে দশ হাজার পরীক্ষার্থী প্রিলিমিনারী পরীক্ষার বাধা পার হতে সক্ষম হয়েছেন তাঁদেরকে প্রাণঢালা অভিনন্দন জানিয়ে শুরু করছি।আপনারা বিসিএস পরীক্ষার সবচাইতে কঠিন বাধা অতিক্রম করে ফেলেছেন-আশা করি সুনির্দিষ্ট প্রস্তুতির মাধ্যমে বাকি পথটুকু খুব সহজেই পার হতে পারবেন।
বাংলা পরীক্ষার জন্যে আমি কিভাবে প্রস্তুতি নিয়েছিলাম আজ আমি সে ব্যাপারে আপনাদেরকে জানাবো।পূর্বের লেখাগুলোর মত এখানেও আমি শুরুতেই স্বীকার করে নিচ্ছি যে আপনাদেরকে জ্ঞানদান করবার মত যোগ্যতা বা অভিপ্রায় কোনটিই আমার নেই-আমার উদ্দেশ্য শুধুমাত্র একজন সহযাত্রী হিসেবে নিজের সীমাবদ্ধ অভিজ্ঞতার মাধ্যমে আপনাদেরকে যৎকিঞ্চিত সাহায্য করা।আপনি যদি মনে করেন এ লেখায় যেসব “টিপস” বর্ণনা করা হয়েছে সেগুলো ছাড়াও আপনার চলবে তাহলে অবশ্যই তাই করবেন-আপনার বিবেচনাবোধ অন্য কারও চাইতে কম এমনটি ভাবার কোন কারণ নেই।
অনেক গৌরচন্দ্রিকা হল-চলুন শুরু করা যাক!
শুরুর আগের কথা(ব্যস্ত পাঠক চাইলে এ অংশটুকু বাদ দিতে পারেন)
প্রিয় পরীক্ষার্থীবৃন্দ, আমরা অনেকেই ধরে নিই বাংলা যেহেতু আমাদের মাতৃভাষা-একে নিয়ে যা-ইচ্ছে-তাই করবার অধিকার আমাদের রয়েছে।দুঃখজনক হলেও সত্য- অন্যান্য বিষয় নিয়ে আমরা যেরকম প্রস্তুতি নিই তার সিকিভাগও আমরা বাংলার পেছনে ব্যয় করিনা।আমরা ভুলে যাই যে বাংলাতে রয়েছে ২০০ নম্বর এবং একটি ভালো বাংলা জানা পরীক্ষার্থী এই বিষয়ে গড়পড়তা অন্যদের চাইতে এমনকী ২০-৫০ নম্বরও বেশি পেতে পারে।শুনতে অবিশ্বাস্য মনে হচ্ছে? একটু বিশ্লেষণ করলেই ব্যাপারটির সত্যতা টের পাবেন।বাংলা প্রথম পত্রে ব্যাকরণে ৩০ এর ভেতরে ৩০, সাহিত্যে ৩০ এর মধ্যে ২০-২৫, ভাব সম্প্রসারণে ২০ এর ভেতরে ১০ এবং সারমর্মে ২০ এর ভেতরে ১০,সব মিলিয়ে ১০০ তে প্রায় ৭০ নম্বর পাওয়া(একেবারে কম করে ধরে) খুবই সম্ভব যদি আপনি ঠিকভাবে প্রস্তুতি নিয়ে থাকেন।বাংলা দ্বিতীয় পত্রে ১০০ তে যদি খুব খারাপ করে আপনি মাত্র ৫০ পান,তাহলে দুই পত্র মিলিয়ে আপনার নম্বর আসবে (৭০+৫০) অর্থাৎ ১২০-গড়ে ৬০% নম্বর। বাংলা পরীক্ষায় ৬০% নম্বর একজন সাধারণ মানের পরীক্ষার্থীর পক্ষেও তোলা সম্ভব যদি সে সঠিকভাবে পরিশ্রম করে।আর ৬০% নিঃসন্দেহে বাংলা পরীক্ষায় খুবই ভালো নম্বর যা বিসিএস পরীক্ষায় গড় পরীক্ষার্থীদের চাইতে আপনাকে অন্ততঃ কম করে হলেও ১০ নম্বর এগিয়ে দেবে।বাংলা প্রথম পত্রে ৮০ নম্বর পাওয়া কোন আকাশ কুসুম স্বপ্ন নয়।
বাংলা দ্বিতীয় পত্রে লেখালেখি অনেক বেশি বলে নম্বর কম ওঠার অভিযোগ করেন কেউ কেউ।আপনাদের জন্যে সুসংবাদ, ২৮তম বিসিএস পরীক্ষায় বাংলা দ্বিতীয় পত্রে সর্বোচ্চ নম্বর উঠেছিলো ৮৬ এবং তা পেয়েছিলো এই অধম লেখক।দুর্ভাগ্যক্রমে আমি আমার বাংলার নম্বর কোন কোন “শুভানুধ্যায়ীর(?!) কাছে প্রকাশ করেছিলাম।এর ফলে গেজেট পাবলিশ হবার আগে পেপারে দেখা গেল এ নিয়ে বিপুল লেখালেখি এবং রাতারাতি আমি পরিণত হলাম “ন্যাশনাল ফিগারে”।এ নিয়ে কথাবার্তা এখনও অবশ্য হয়-তবে ২৯তম বিসিএস পরীক্ষায় পুলিশ ক্যাডারে ৩য় স্থান অধিকার করার পর আমার সেইসব “শুভানুধ্যায়ীদের” মুখ কিছুটা হলেও বন্ধ হয়েছে।এই বেলা বলে রাখি কি হয়েছিলো- অর্থনীতির ছাত্র হিসেবে আমার শেষ বা তার আগের সেমিস্টারে বাংলাদেশের আমদানী-রপ্তানী বিষয়ক নিয়মকানুন এবং এনবিআর(জাতীয় রাজস্ব বোর্ড) সম্পর্কিত একটি কোর্স আমি করেছিলাম।২৮তম বিসিএস পরীক্ষায় ঠিক এরকম একটি দরখাস্ত এসেছিলো যেটি কিনা রাজস্ব বোর্ডের প্রতি উদ্দেশ্য করে লেখার কথা।যেহেতু এ ব্যাপারটির খুঁটিনাটি আমি আগেই পড়েছি, আমার দরখাস্তটি খুব ভালো হয়েছিলো এবং সেটিই আমি প্রথমে লিখেছিলাম।পরীক্ষক সম্ভবত আমার দরখাস্তটি পড়ে খুবই পছন্দ করেছিলেন এবং এর ফলশ্রুতিতে গোটা খাতায় আমাকে খুব ভালো নম্বর দিয়েছিলেন।যাঁরা আমার বাংলায় ৮৬ পাওয়া নিয়ে দুঃখে গা ভাসান তাঁরা কোন এক অজ্ঞাত কারণে উল্লেখ করতে ভুলে যান যে গোটা ২৮তম বিসিএসের সবচাইতে সহজ পরীক্ষা বাংলাদেশ প্রথম পত্রে(খেয়াল করবেন,বাংলাদেশ দ্বিতীয় পত্রে নয় যেখানে সংবিধান থেকে সব প্রশ্ন এসেছিলো)একশতে আমি পেয়েছিলাম মাত্র চল্লিশ!
প্রিয় পাঠকবৃন্দ,আমি আমার অন্তর থেকে বলতে পারি নিজেকে জাহির করার একবিন্দু ইচ্ছে আমার নেই।আমি উপরোক্ত কথাগুলো এ কারণেই আপনাদেরকে জানাচ্ছি যে আমার মত অতি সাধারণ,প্রাইভেট ভার্সিটি পড়ুয়া একজন ছাত্র যদি বাংলায় এরকম নম্বর পেতে পারে তাহলে আপনারা যাঁরা আমার চাইতে মেধা-বিদ্যা-মননে যোজন যোজন এগিয়ে আছেন,তাঁদের পক্ষে না জানি কি আকাশছোঁয়া উচ্চতা স্পর্শ করা সম্ভব!
সুপ্রিয় পাঠক,আপনার মধ্যেই লুকিয়ে আছে পরবর্তী বিসিএস পরীক্ষার পররাষ্ট্র,পুলিশ,প্রশাসন ইত্যাদি ক্যাডারের প্রথম স্থান অধিকারী ব্যক্তি।আর এ লক্ষ্য পূরণে বাংলা হতে পারে আপনার অতি বিশ্বস্ত এক হাতিয়ার।সুতরাং আর দেরী কেন,চলুন শুরু করা যাক!
লেখায় ঝরান মুক্তোর হাসিঃ
সতর্কতাঃ যাঁদের হাতের লেখা ইতোমধ্যেই মুক্তোর মত সুন্দর এ অংশটুকু তাঁরা বাদ দিতে পারেন।
বাংলা পরীক্ষায় হাতের লেখা এবং সার্বিক উপস্থাপনা অতি অতি গুরুত্বপূর্ণ- এ কথা আমরা সেই ছেলেবেলা থেকেই জানি।আমার নিজের বাংলা হাতের লেখা স্পষ্ট হলেও খুব একটা সুন্দর ছিলোনা এবং আমি খুব বেশি দ্রুতও লিখতে পারতামনা। এটি আমার জন্যে খুবই চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল যার ফলে আমি ফার্মগেটে একজন প্রফেশনাল হ্যান্ডরাইটিং টিচারের কাছ থেকে হাতের লেখা ঠিক করার জন্যে একটি কোর্স করেছিলাম।
আমার মত খারাপ অবস্থা নিশ্চয়ই আপনাদের নয়, তাই আশা করি আপনাদেরকে হাতের লেখা নিয়ে আমার মত ঝক্কি পোহাতে হচ্ছেনা।তবে যদি মনে করেন আপনার হাতের লেখার উন্নতি করা প্রয়োজন তাহলে সুন্দর লেখে এমন কারো সাহায্য নিয়ে এর পেছনে সময় দিতে বিন্দুমাত্র কার্পণ্য করবেননা।প্রতিদিন লাইন টানা খাতায় একপাতা বাংলা আর আরেকপাতা ইংরেজি হাতের লেখা অনুশীলন করাটা অনেকে বলবেন স্কুল-বালকের কাজ,কিন্তু দরকার পড়লে তাই করতে হবে।হাতের লেখা সুন্দর ও স্পষ্ট হওয়া যেমন জরুরী,তেমনই জরুরী কম সময়ে দ্রুত লিখতে পারা।আমাদের অনেককেরই গত ৪-৫ বছর টানা ৩ ঘন্টা বাংলা লেখার অভ্যাস নেই,কাজেই অভ্যাসটা যেন পরীক্ষার হলে গিয়ে করতে না হয় একটু খেয়াল রাখবেন।সপ্তাহে ১বার হলে খুবই ভাল,তা না হলে অন্ততঃ ১৫ দিনে একবার টানা তিন ঘন্টা যদি বসে বাংলা দ্বিতীয় পত্র “মক-টেস্ট” দিতে পারেন তাহলে পরীক্ষার কেন্দ্রে খুবই ফলপ্রসূ হবে।আর আপনার অনুশীলন করা রচনাই যদি পরীক্ষায় “কমন” পড়ে যায় তাহলে নিজেই টের পাবেন তা কতটা সহায়ক হচ্ছে।
মূল কথা হল, বাংলাকে দায়সারা ভাবে নেবেন না। কোন পরীক্ষায় ভালো নম্বর আপনার ভাগ্যকে কোথায় নিয়ে যেতে পারে তা আপনি-আমি কেউই জানিনা,কাজেই সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে ক্ষতি কি!
বাংলা প্রথম পত্রঃ
বাংলা প্রথম পত্রের নম্বর বন্টনে আমরা দেখতে পাই ৩০ নম্বর আসে সাহিত্য থেকে,৩০ নম্বর আসে ব্যাকরণ থেকে, ২০ নম্বর আসে ভাব-সম্প্রসারণে এবং ২০ নম্বর আসে সারমর্মে।২৮ এবং ২৯ বিসিএস পরীক্ষায় দুটো দুটো করে ভাবসম্প্রসারণ এবং সারাংশ/সারমর্ম লিখতে হয়েছিলো।নীচে উল্লেখিত বইগুলো আমাকে বেশ সহায়তা করেছিলোঃ
১) উচ্চ মাধ্যমিক বাংলা- হায়াৎ মামুদ (ব্যাকরণ অংশের জন্যে)
২) মাধ্যমিক বাংলা ব্যাকরণ (বোর্ডের পাঠ্যবই)
৩) সৌমিত্র শেখরের বাংলা(প্রিলিমিনারির-সাহিত্য অংশের জন্যে)
৪) সৌমিত্র শেখরের বাংলা দর্পণ (লিখিত-দরখাস্তের কাঠামো,সারাংশ,ভাবসম্প্রসারণ ইত্যাদির জন্যে)
৫) বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস-মাহবুবুল আলম (সাহিত্য অংশের জন্যে)
সাহিত্য-৩০ নম্বর
যদিও পিএসসি প্রদত্ত সিলেবাসে মাত্র অল্প কয়েকজন লেখক সম্পর্কে পড়তে বলা হয়েছে কিন্তু পরীক্ষার প্রশ্নে প্রায় প্রতিবারই দেখা গিয়েছে যে এই লেখকদের বাইরেও বাংলা সাহিত্যের নানা অংশ থেকে প্রশ্ন আসছে। এ কারণে লিখিত পরীক্ষায় সাহিত্য প্রস্তুতিতে আপনার পড়াশোনা ঠিক তেমনটিই হবে যেমনটি আপনি প্রিলিমিনারি পরীক্ষার সময় নিয়েছিলেন।সন,তারিখ,বিখ্যাত বই,প্রথম প্রকাশিত রচনা ইত্যাদি প্রশ্নের পাশাপাশি চিন্তাভিত্তিক ছোট ছোট প্রশ্ন আসতে দেখা গিয়েছে বিগত পরীক্ষাগুলোতে-তাই পূর্ববর্তী বছরের প্রশ্নগুলো অবশ্যই দেখে নেবেন।বাংলা সাহিত্য সম্পর্কে “কনসেপ্ট” পরিষ্কার করতে মাহবুবুল আলমের বইটির সম্ভবত বিকল্প নেই।আর বিভিন্ন লেখক সম্পর্কিত প্রশ্নের জন্যে সৌমিত্র শেখরের বইটি তো আছেই।প্রিলিমিনারিতে যেহেতু পড়েছেন,সাহিত্য অংশের প্রস্তুতি নিতে আপনার খুব বেশি কষ্ট হবার কথা না।
ব্যাকরণ-৩০ নম্বর
বাক্য পরিবর্তন, প্রবাদ-প্রবচন,পরিভাষা(যা যা পিএসসি প্রদত্ত সিলেবাসে আছে) ইত্যাদি সম্বলিত ব্যাকরণ অংশের জন্যে যে কোন ভালো ব্যাকরণ বই পড়তে পারেন।হায়াৎ মামুদের উচ্চ মাধ্যমিক বাংলা ব্যাকরণের বইটি আমার কাছে খুবই ভালো বলে মনে হয়েছে।নবম-দশম শ্রেনীর বাংলা ব্যাকরণ বইটিও জরুরী।পিএসসির সিলেবাসের বাইরে কারক-সমাস,সন্ধি ইত্যাদি বিষয়গুলো এই বই থেকে দেখে যাওয়া অনেকটাই নিরাপদ।
ভাব সম্প্রসারণঃ২০ নম্বর
বিসিএস পরীক্ষায় ভাব সম্প্রসারণ হিসেবে যা আসে তা আমরা নবম-দশম শ্রেনীতে ইতোমধ্যেই চর্চা করেছি।কিন্তু মুশকিল হচ্ছে,বিসিএস পরীক্ষাটা হয় স্নাতকদের মধ্যে সুতরাং নবম-দশম শ্রেনীর মানের খুব ভালো লেখা লিখলেও নম্বর খুব একটা তোলা সাধারণত কঠিন হয়ে পড়ে।আপনি একজন স্নাতক,কাজেই পরীক্ষক আপনার কাছে সেই মানের লেখাই প্রত্যাশা করবেন।
সৌমিত্র শেখরের বাংলা দর্পন বইটা প্রাথমিক ধারণার জন্যে বেশ ভালো-তবে হুবহু কোন বই থেকে না তুলে নিজের ভাষায় লেখাটাই সর্বোত্তম বলে আমি মনে করি।ভাব সম্প্রসারণ আমি তিনটি অংশে বিভক্ত করে লিখতামঃ মূলভাব(অল্প এক-দু লাইনের ভেতরে প্রদত্ত অংশের ব্যাখ্যা), সম্প্রসারিত ভাব এবং উপসংহার(নিজের ভাষায় অল্প-এক দুলাইন মন্তব্য)।এছাড়া সম্প্রসারিত অংশে প্রদত্ত কাব্য/গদ্যাংশের সাথে প্রাসঙ্গিক উদ্ধৃতি ব্যবহার করেও ভাল নম্বর তোলা যায়।যেমন, “পরিশ্রম সৌভাগ্যের প্রসূতি” এর সম্প্রসারিত ভাব লিখতে গিয়ে “Luck is not chance,its toil” অথবা মহাবিজ্ঞানী স্যার আইজ্যাক নিউটনের “ Whatever I have achieved is 99% hardwork and only 1% genius” উদ্ধৃতিগুলো নিশ্চিন্তে ব্যবহার করতে পারেন।
এছাড়া যে কোন শিরোনাম/ উদ্ধৃতি উজ্জ্বল নীল কালিতে এবং বাকি লেখা কালো কালিতে লিখলে পরীক্ষকের দৃষ্টি আকর্ষণ করা যায়-এ জাতীয় কৌশলগুলো তো আমরা সেই স্কুল থেকেই জানি।অতিরিক্ত খাতায় না হোক, মূল খাতায় অবশ্যই মার্জিন করবেন।একটি মার্জিন করা পরিচ্ছন্ন খাতা সাহিত্য জাতীয় পরীক্ষায় বেশ কিছু “ইমপ্রেশন মার্কস” অনায়াসেই বয়ে আনে। এই অল্প এক-দু নম্বরই কিন্তু দিনশেষে আপনার অবস্থান নির্ধারণ করে দিতে যথেষ্ট-এটা মাথায় রাখবেন।
সারাংশ/সারমর্মঃ২০ নম্বর
সারাংশ/সারমর্ম দুটোর মধ্যে একটি লিখতে হলে কাব্যাংশের সারমর্ম লেখাটাই ভালো কারণ সবাই সাধারণত গদ্যাংশের সারমর্ম লেখে,যেটি অপেক্ষাকৃত সহজ।অবশ্য কাব্যাংশের অর্থ যদি একেবারেই না বোঝেন তাহলে সহজটি উত্তর করাই যুক্তিযুক্ত।২৮ এবং ২৯ বিসিএস পরীক্ষায় অবশ্য দুটোই লিখতে হয়েছিল।সৌমিত্র শেখরের বাংলা দর্পন/হায়াৎ মামুদের উচ্চ মাধ্যমিক বাংলা অথবা যে কোন ভালো বাংলা ব্যাকরণ বইয়ে সারাংশ লেখার নিয়ম বিস্তারিতভাবে বর্ণিত আছে।যদি সংক্ষেপে বলতে যাই তাহলে হবে ১) কোন অবস্থাতেই সারাংশের দৈর্ঘ্য প্রদত্ত গদ্য/পদ্যাংশের ১/৩ ভাগের বেশি হবেনা ২)সম্পূর্ণ নিজের ভাষা ব্যবহার করতে হবে,কোনভাবেই প্রদত্ত অংশের কোন লাইন হুবহু তুলে দেয়া যাবেনা এবং ৩)কোন উপমা ব্যবহার করা যাবেনা, সহজ সরল ভাষায় মূলভাবটি অতি সংক্ষেপে তুলে ধরতে হবে।সারাংশ লেখার আগে অবশ্যই সময় নিয়ে ধীরে ধীরে পুরোটি বার বার পড়ে চিন্তা করার পর তবেই লিখবেন-মনে রাখবেন,লেখা অল্প হলেও নম্বর কিন্তু ২০-কাজেই লেখার মান অবশ্যই ভালো হতে হবে।
বাংলা দ্বিতীয় পত্রঃ
১) রচনাঃ ৪০+৪০=৮০
১০০ এর ভেতরে আশি নম্বর যেহেতু রচনায় কাজেই এটি কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা মনে হয় কাউকেই মনে করিয়ে দেবার প্রয়োজন পড়বেনা।বিগত বৎসরের প্রশ্নাবলী এবং বর্তমানের গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু নিয়ে আসতে পারে এরকম ১০-১৫টি রচনা এমনভাবে পড়ুন যেন এর যে কোন একটি এলে আপনি সারা বিসিএসে সর্বোচ্চ নম্বর পেতে পারেন।ম্যাপ, ছক, পরিসংখ্যান যত বেশি ব্যবহার করবেন তত বেশি নম্বর পাবেন এবং আপনার সময়ও কম লাগবে।সুযোগ থাকলে সাহিত্যমূলক না লিখে তথ্যমূলক রচনা লেখাই ভালো।পরিসংখ্যান মুখস্ত করা নিয়ে দুশ্চিন্তার কিছু নেই, একেবারে হুবহু পরিসংখ্যান আপনাকে মুখস্ত করতে হবেনা।যে পরিসংখ্যানটি পরিক্ষায় ব্যবহার করবেন সেটি ৪-৫ বার পড়ুন, মোটামুটি কাছাকাছি একটি ধারণা নিন এবং সেই কাছাকাছি ধারণার উপর ভিত্তি করে পরীক্ষার খাতায় সেটি তুলে দিন।প্রতিটি পরিসংখ্যানে অবশ্যই উৎস দেবেন,এমনকী বানিয়ে হলেও।বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষা,বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো, বাংলাদেশ ব্যাঙ্ক-ইত্যাদি বিসিএস পরীক্ষার্থীদের ব্যবহৃত বেশ “জনপ্রিয়” উৎস!
সাধারণত সাহিত্যমূলক একটি রচনা আপনাকে লিখতে হতে পারে-সেজন্যে আগে থেকেই বানিয়ে লেখার অভ্যাস করুন।যে কোন বিষয়ের উপর পৃষ্ঠাখানেক লিখে বাংলায় ভালো এমন কাউকে দেখিয়ে নিজের ভাষাগত দিকগুলো ঠিক করে নিন/আর উন্নত করুন।ভালো লেখার অন্যতম পূর্বশর্ত ভালো বই পড়া-কাজেই জোর করে হলেও প্রতিদিন ভালো কোন লেখকের বই পড়ুন।রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গল্পগুচ্ছ থেকে প্রতিদিন একটি করে ছোটগল্প পড়ে সেটি সম্পর্কে নিজের ভাষায় এক পৃষ্ঠা লিখলেও দেখবেন মাসখানেকের মধ্যেই আপনার লেখায় বৈপ্লবিক উন্নতি সাধিত হয়েছে। আপনার কাছে মনে হতে পারে- “আরে মাত্র এই কদিনের অনুশীলনে আর কি হবে”; বিশ্বাস করুন,মাসখানেকের অনুশীলনও আপনার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে।
২)মানপত্র/চিঠি/ব্যবসায়িক পত্র/মেমো/দাপ্তরিক পত্রঃ ২০
মানপত্র বা ব্যক্তিগত চিঠি উত্তর না করাটাই ভালো কেননা এতে খুব ভালো লিখলেও সাহিত্য বিচারে খুব বেশি নম্বর পাওয়া যায়না বললেই চলে।যে কোন ভালো বই থেকে( সৌমিত্র শেখরের বাংলা দর্পনে দেয়া পত্রগুলোর ছক মোটামুটি ভালো বলেই আমার মনে হয়েছে)আনুষ্ঠানিক চিঠিপত্রের “ফরম্যাট” দেখে নিন এবং পূর্ববর্তী বছরের প্রশ্নের উত্তর নিজের মত তৈরি করে অনুশীলন করুন।একটি ভালো আনুষ্ঠানিক পত্রে ২০ এ ১৬+ দেয়াটা এই গোল্ডেন জিপিএ এর যুগে অসম্বব নয় মোটেই।
বিঃদ্রঃ আমি যে বইগুলোর নাম উল্লেখ করেছি সেগুলো আমাকে সহায়তা করেছে,তবে এর মানে এই নয় যে এগুলোই একমাত্র ভাল বই।আপনি যে কোন ভালো বই থেকে আপনার বিবেচনা অনুযায়ী সহায়তা নিতে পারেন,আমার উল্লেখ করা বই থেকেই যে পড়তে হবে এমন কোনও বাধ্যবাধকতা নেই।আর লেখা বিষয়ক যে কোন প্রশ্ন/সমালোচনা নির্দ্বিধায় করার আমন্ত্রণ রইলো।
উপসংহারঃ
বাংলা আমাদের মাতৃভাষা এবং একটু যত্নবান হলে বাংলায় খুব ভালো নম্বর তোলা সম্ভব।আমি আশা করব আপনারা এই নূন্যতম যত্নটুকু নেবেন এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে সাফল্যের আলোয় নিজেকে উদ্ভাসিত করে তুলবেন।বিসিএস পরীক্ষায় আপনার প্রত্যাশিত ক্যাডারের শীর্ষস্থানটি এই আপনার জন্যেই অপেক্ষা করছে-এই বিশ্বাস বুকে রাখুন,জয় আপনার অবশ্যম্ভাবী।সবাইকে শুভ কামনা!
মাসরুফ হোসেন
বিসিএস পুলিশ(২৮তম ব্যাচ)
ক্যাডার মেধাক্রমঃ ৪র্থ(২৮তম),৩য়(২৯তম)