Thursday, October 18, 2012

সমকাল :: নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা ::


নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা
 
রেটিং :
 
0%
 
গড় রেটিং:
 তানিম ইশতিয়াক
আধুনিক গণতন্ত্রে জনগণের প্রতিনিধিত্বশীল সরকার গঠনে সুষ্ঠু নির্বাচনের গুরুত্ব অপরিসীম। জনগণের পছন্দের সরকারকে ক্ষমতায় আসতে না দেওয়া এবং দীর্ঘদিনের শোষণ-বঞ্চনার কারণেই ১৯৭১ সালে পাকিস্তান ভেঙে বাংলাদেশ রাষ্ট্র গঠিত হয়। দুঃখজনক যে, গণতন্ত্রের জন্য স্বাধীন হওয়া এ দেশটিই অনেককাল থেকে গেছে গণতন্ত্রের বাইরে। গণতন্ত্রের জন্য যে নিরবচ্ছিন্ন অনুশীলন দরকার তা বাংলাদেশে দেখা যায়নি। দুর্নীতি, অনৈতিকতা, দলীয়করণ ও পরিবারতন্ত্রের কারণে এক অসুস্থ রাজনৈতিক সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে। বিদ্যমান রাজনৈতিক দলগুলোর পারস্পরিক অনাস্থা, অবিশ্বাস ও কোন্দলে রাজনীতি সবসময় সংঘাতময় থেকেছে। স্বাধীনতার পর আজ অবধি নয়টি সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে, যার পাঁচটিই ক্ষমতাসীন দলীয় সরকারের অধীনে। সেসব নির্বাচন কারচুপি, ভোট চুরি, ব্যালট বাক্স ছিনতাই, দলীয় প্রশাসনিক প্রভাবের অভিযোগে যথার্থ গ্রহণযোগ্যতা পায়নি। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন '৯০, '৯৬, ২০০১ এবং ২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত হয়। এ ব্যবস্থার কিছু নেতিবাচক প্রভাব বিচার বিভাগের ওপর পড়ে। বিচারপতিদের অবসরের বয়স ২ বছর বাড়ানো এবং কেএম হাসানের উপদেষ্টা হওয়ার পথ তৈরি হওয়া উদ্দেশ্যমূলক বলে বিরোধী দল আন্দোলন শুরু করে। দেশ সাংঘাতিক নৈরাজ্যের মধ্যে পড়ে। পরে ফখরুদ্দীনের নেতৃত্বে তত্ত্বাবধায়ক সরকার দুই বছর ক্ষমতায় থেকে যায়। অতঃপর সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে ২০১১ সালের ৩০ জুন জাতীয় সংসদে দীর্ঘ ১৫ বছরেরও বেশি সময় পর বহুল আলোচিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার বিলুপ্তি ঘটে। সম্প্রতি ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল করে আদালতের দেওয়া পূর্ণাঙ্গ রায়ের পর আগামী নির্বাচনের ভবিষ্যৎ এক অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে। প্রধান বিরোধী দল বিএনপিসহ কয়েকটি দল তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা ফিরিয়ে আনার জন্য আন্দোলন করছে। সরকারের অবস্থান অনমনীয়, তারা দলীয় নির্বাচিত সরকারের অধীনেই নির্বাচন করতে চায়। এখন প্রশ্ন হলো, বাংলাদেশে পাঁচটি নির্বাচন ক্ষমতাসীন সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত হওয়ার পরও কেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা এসেছিল? সেসব রাজনৈতিক বাস্তবতা কি এখন শেষ হয়ে গেছে? বলা হতে পারে, সেই সরকারগুলো নির্বাচিত ছিল না। এখন নির্বাচিত সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হওয়া সম্ভব। কিন্তু আমাদের সামনে '৯৬ সালের মাগুরা নির্বাচনের উদাহরণ রয়েছে। উপরন্তু নির্বাচন কমিশন স্বাধীনভাবে কাজ করতে সক্ষম নয়।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠিত হতে হলে সরকার এবং বিরোধী দল উভয়কে বাস্তবতা ও আদালতের নির্দেশনার আলোকে ভাবতে হবে। সে ক্ষেত্রে বিরোধী দল শুধু আন্দোলন করে কোনো সুফল পাবে বলে মনে হয় না। তারা সংসদে গিয়ে এ বিষয়ে কথা বলা ও পারস্পরিক আলোচনার পরিবেশ সৃষ্টিতে চেষ্টা করতে পারে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগকে ভাবতে হবে সব দলকে সঙ্গে নিয়ে নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা। যদি একতরফাভাবে নির্বাচনের আয়োজন করা হয় এবং প্রধান বিরোধী দলসহ কিছু দল নির্বাচনের বাইরে থেকে যায়, তবে সে নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে। এ ছাড়া সংঘাতময় ও নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি তৈরি হলে গণতান্ত্রিক ধারা ব্যাহত হতে পারে। এর দায়ভার আওয়ামী লীগের ঘাড়েই চাপবে। আদালতের রায়ে অবশ্য আগামী দুই মেয়াদে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হতে পারে বলে বলা হয়েছে। সে ক্ষেত্রে নতুনভাবে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের ভার সংসদের ওপর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। রায়ে বলা হয়েছে, 'সংবিধান (ত্রয়োদশ সংশোধন) আইন, ১৯৯৬, অসাংবিধানিক ও অবৈধ হইলেও জাতীয় সংসদ ইহার বিবেচনা এবং সিদ্ধান্ত অনুসারে উপরে বর্ণিত নির্দেশাবলী সাপেক্ষে দশম ও একাদশ সাধারণ নির্বাচনকালীন সময়ে প্রয়োজনমতো নূতনভাবে ও আঙ্গিকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের ব্যবস্থা গ্রহণ করিতে পারিবে।' সুতরাং এখন ভরসা জাতীয় সংসদ। নিজেদের দেশে কোন সরকার আসবে তা বাছাই করার 'মালিক' বা 'মাস্টার' হিসেবে কাজ করে ভোটাররাই, ভোট দিয়ে একটি সার্বভৌম ব্যবস্থাকে চালু রাখে জনসাধারণই। জনসাধারণের পছন্দমতো সরকার গঠনের জন্য সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি করা একান্ত জরুরি।
য় তানিম ইশতিয়াক :শিক্ষার্থী
রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
রেটিং দিন :
 

No comments:

Post a Comment

Thanks for visiting.