Monday, October 08, 2012

মার্কিন রাষ্ট্রপতি নির্বাচন প্রসঙ্গ মার্কিন রাষ্ট্রপতি নির্বাচন প্রসঙ্গ



লেখক: ড. মো. আবদুল্লাহ হেল কাফী  |  সোমবার, ৮ অক্টোবর ২০১২, ২৩ আশ্বিন ১৪১৯

আ গামী ৬ নভেম্বর ২০১২ আসন্ন মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দিন ধার্য করা হয়েছে। তাই সমগ্র আমেরিকা জুড়ে এখন বইছে নির্বাচনের হাওয়া। প্রার্থীদের মধ্যে নির্বাচনী প্রচারণার কাজও চলছে দুরন্ত গতিতে। প্রতি চার বছর অন্তর অন্তর অনুষ্ঠিত হওয়া এই নির্বাচনের কয়েক মাস আগে থেকেই আমেরিকার প্রেসিডেন্ট পদের জন্য নিজেদের যোগ্য প্রার্থী হিসাবে জনগণের সামনে উপস্থাপন করার চেষ্টা করে থাকেন। আর এরই লক্ষ্যে তারা কয়েকটা আনুষ্ঠানিক বিতর্কের আয়োজন করে থাকেন। উক্ত বিতর্কে আমেরিকার অভ্যন্তরীণ ইস্যু, জাতীয় স্বার্থ এবং আন্তর্জাতিক ইস্যুর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলো নিয়ে প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থীদের মধ্যে কাঠামোগত বিতর্ক চলতে থাকে। এমনি একটি বিতর্ক অনুষ্ঠিত হয়ে গেল গত ৩ রা অক্টোবর ডেনভার বিশ্ববিদ্যালয়ে। ধারণা করা হচ্ছে দ্বিতীয় এবং তৃতীয় পর্যায়ের বিতর্কগুলো অনুষ্ঠিত হবে যথাক্রমে ১৬ অক্টোবর এবং ২২শে অক্টোবর হফষ্ট্র বিশ্ববিদ্যালয় এবং নাইনন বিশ্ববিদ্যালয়ে। বারাক ওবামা এবং মিট রমনির মধ্যে অনুষ্ঠিত হওয়া প্রবল তর্ক যুদ্ধের পূর্বে আমেরিকায় এক জনমত জরিপে ওবামাকে রমনির চেয়ে কিছুটা এগিয়ে থাকতে দেখা গিয়েছে। ওয়াল ষ্ট্রিট জার্নাল এনবিসি নিউজের সাম্প্রতিক জরিপের ফলাফলের দোদুল্যমান ভোটারদের ৪৯ শতাংশ ওবামা ও ৪৬ শতাংশ রমনির সমর্থনে দেখানো হয়েছে। একই ধরনের এক জরিপে রিয়াল ক্লিয়ার পলিটিকস মত প্রকাশ করেন যে, ওবামা রমনির চেয়ে ৩ দশমিক ৫ শতাংশ ভোটে এগিয়ে আছেন। আর এ থেকেই ধারণা করা হয়েছিল যে, বারাক ওবামা ও মিট রমনির মধ্যে হয়তো একটা হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হতে যাচ্ছে। বাস্তবেই তাই ঘটলো।

প্রেসিডেন্ট পদের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা নিয়ে বারাক ওবামা এবং রমনির মধ্যে বেশ জোরালোভাবেই একটা তর্ক যুদ্ধ হয়ে গেল গত ৩ রা অক্টোবর । নির্বাচন পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতার পূর্বে এটি ছিল প্রথম তর্ক যুদ্ধ। উক্ত তর্ক যুদ্ধে দেশের নাজুক অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের প্রচেষ্টা নিয়ে ওবামা বিরোধী পদের কঠোর সমালোচনার সম্মুখীন হলেন। রমনি বলেন, চার বছর আগে ওবামার যে আর্থিক নীতি ছিল, এখনো তা-ই আছে। ব্যয় বেশি, আয় বেশি, কর বেশি, নিয়ন্ত্রণ অধিক - ওবামার এ নীতি যদি বহাল থাকে, তবে সরকারের অবস্থার আরো অবনতি ঘটবে । ওবামার সমালোচনা করে রমনি আরো বলেন, ২০০৮ সালে দেয়া প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী বাজেট অর্ধেক কমাতে ব্যর্থ হয়েছেন ওবামা।

রমনি, ওবামার উপস্থাপিত কর পরিকল্পনাকে ভুল বলে অভিমত প্রকাশ করে বলেন যে, বাজেট ঘাটতি কমাতে তিনি ওবামার ২০১০ সালের স্বাস্থ্যসেবা আইন বাতিল এবং যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি টেলিভিশনে ভর্তুকি কাটছাঁট করবেন। আর প্রত্যুত্তরে ওবামা ও চুপ করে ছিলেন না। অনেকটাই হাস্যোজ্জ্বল ভাবে তিনিও তার রিপাবলিকান প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর কড়া সমালোচনা করলেন। ওবামা তার রিপাবলিকান প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী রমনির অর্থনৈতিক পরিকল্পনার কড়া সমালোচনা করে বলেছেন, রমনির বাজেট ঘাটতি কমানোর পরিকল্পনা ভারসাম্যহীন। বিতর্ক পরবর্তীকালে মার্কিন সংবাদ মাধ্যম সিএনএন পরিচালিত জরিপে বিতর্কে রমনির জয় হয়েছে বলে রায় দিয়েছেন ৬৭ শতাংশ ভোটার পক্ষান্তরে মাত্র ২৬ শতাংশ ভোটার ওবামা পরাজিত হয়েছেন বলে রায় দিয়েছে । অন্যদিকে সিবিএস এর জরিপের রায় ও রমনি জয়ী হয়েছেন বলে মন্তব্য করছেন ৪৬ শতাংশ ভোটার। ২২ শতাংশ ভোটারের রায় গেছে ওবামার পক্ষে। আর তাই ঠিক বিতর্কের পরদিনই ওবামা অভিযোগ করছেন যে রমনি ডেনভারে বিতর্ক মঞ্চে মিথ্যার আশ্রয় নিয়েছেন।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, ডেমোক্রেটরা ইতিমধ্যে ধনকুবের মিট রমনির কর সংক্রান্ত নীতি মধ্যবিত্ত মার্কিনীদের স্বার্থপরিপন্থি বলে তুলে ধরেছেন। আর এরই সূত্র ধরে গত বৃহস্পতিবার প্রচারণা সভায় ওবামা বলেন, বিতর্ক মঞ্চে উঠে প্রাণবন্ত যে ব্যক্তিকে আমি দেখি তিনি নিজেকে মিট রমনি বলে দাবি করেন। কিন্তু এই ব্যক্তি প্রকৃতপক্ষে রমনি হতে পারেন না। কারণ আসল রমনি গত বছর ৫ ট্রিলিয়ন ডলার কর হ্রাসের দাবিতে সারাদেশে প্রচারণা চালিয়েছিলেন। যে প্রচারণা ছিল ধনবানদের পক্ষে উকালতি করা। অথচ বিতর্কের মঞ্চে ওঠা এই ব্যক্তি রমনি বলেন, তিনি এই বিষয়ে কিছুই জানেন না। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের লক্ষ্যে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া প্রথম বিতর্ক যুদ্ধে রমনি মূলত আমেরিকার অর্থনীতির বিভিন্ন দিকগুলো তুলে ধরেন এবং এসব ইস্যুতে ওবামার সমালোচনা করেন। তর্ক যুদ্ধে রমনি অনেকটা আগ্রাসী ছিলেন আর ওবামা ছিলেন তার ঠিক উল্টো। যদিও বিশ্লেষকদের মতে রমনি তর্ক যুদ্ধে জয়ী হয়েছেন। কিন্তু তার পরও এখনো বলা যাচ্ছে না কে হবে আগামীর মার্কিন প্রেসিডেন্ট । জয়ের জন্য দু’জনই ব্যাপকভাবে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন । আমেরিকার সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক ভগ্ন অবস্থা তথা বারাক ওবামার করনীতি, স্বাস্থ্যসেবা নীতি ব্যাপকভাবে নির্বাচনকে প্রভাবিত করতে পারে বলে ধারণা করা যাচ্ছে । সাম্প্রতিক এই তর্ক যুদ্ধে রমনি ওবামার যে সমালোচনাগুলো করেছেন তার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, বারাক ওবামার নির্বাচনী অবস্থার সাথে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশের কিছুটা মিল রয়েছে । জর্জ বুশ যখন দ্বিতীয় মেয়াদে ২০০৪ সালে নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন তখন আমেরিকার অর্থনৈতিক অবস্থা উক্ত নির্বাচনকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করেছিল।

++লেখক:শিক্ষক, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ,

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

Email: kafi.juniv@yahoo.com

No comments:

Post a Comment

Thanks for visiting.