অর্থনীতির স্বার্থে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির সফল বাস্তবায়ন দরকার
লেখক: প্রফেসর ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী | রবিবার, ৭ অক্টোবর ২০১২, ২২ আশ্বিন ১৪১৯
বাংলাদেশের স্বাধীনতা উত্তরকাল থেকে প্রণীত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির কোনটারই কোন আর্থিক বছরে সফল বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি। একটি দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির সফল বাস্তবায়ন দরকার। যদিও জাতীয় বাজেটের সাথে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির ঘোষণা করা হয়ে থাকে এবং বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি একটি দেশের এক বছরের সময়কালে কোন কোন উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয় তা বুঝায় তবে সচরাচর তা পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার অংশ হয়ে থাকে। মাঝে আমাদের দেশে পঞ্চম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার পর দীর্ঘদিন পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা ছিল না। এ সময়ে অবশ্য পিআরএসপি-১ ও ২ ব্যবহূত হয়েছে দরিদ্রতা হ্রাস করার জন্যে। আসলে দারিদ্র্যের হার তেমন না কমলেও বিত্তবানের সংখ্যা এ সময়ে ঈর্ষণীয়ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। অবশ্য এর কুফল হিসাবে সামাজিক অসাম্য ও বন্টন ব্যবস্থায় অসমতা এবং অন্যায্যতা দেখা দিয়েছে। বর্তমান সরকারের আমলে আবার ষষ্ঠ-পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে এটি আশার কথা। তবে সমস্যা হলো বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির সফল বাস্তবায়ন হয় না। আবার বিশাল বাজেটের তুলনায় বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির পরিধিও অনেক ছোট হয়ে এসেছে। সামাজিক উন্নয়নের অংশগ্রহণের তেমন সুযোগ থাকে না। পাশাপাশি নানামুখী চাপের কারণে বাস্তবায়নের যারা দায়িত্বে থাকেন তারা কার্যকরী ও দক্ষতার পরিচয় দিতে ব্যর্থ হচ্ছেন। উন্নয়ন পরিকল্পনার ক্ষেত্রে সম্প্রতি পরিকল্পনা কমিশন একটি সমীক্ষা চালিয়েছেন। তাদের এ সমীক্ষায় দেখা যায়- ষষ্ঠ-পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার ৩৫টি সূচককে ভিত্তি করে দেখানো হয়েছে যে, বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিকে বিবেচনা করলে এটি অদক্ষভাবে পরিচালিত হয় এবং অর্থ বরাদ্দের স্বল্পতার বিষয়টি প্রাধান্য পায়। তার উপর বরাদ্দকৃত অর্থ অন্য খাতেও স্থানান্তর করা হয়েছে বিভিন্ন সময়ে।
আসলে বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল দেশ। আমাদের আকাশছোঁয়ার স্বাদ থাকতে পারে কিন্তু বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে অর্থ যোগানের বিষয়টি গুরুত্ব পেয়ে থাকে। আসলে পুঁজি সংকট যেমন একটি মারাত্মক সমস্যা তেমনি পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং বাস্তবায়নও অত্যন্ত প্রকট সমস্যা। বৈশ্বিক মন্দা কেবল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নয় বরং ছড়িয়ে পড়েছে সমগ্র ইউরোপে। অন্যদিকে মধ্যপ্রাচ্যের এক ধরনের অস্থির পরিবেশের কারণে বৈরী অবস্থার সূচনা হয়েছে যা আমাদের অর্থনীতির গতিকে অস্থিতিশীল করে তুলেছে। সম্পদের সুষ্ঠু প্রয়োগে দক্ষ জনবলের অভাব না থাকলেও ভুল দিক-নির্দেশনা সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে সমস্যার সম্মুখীন করছে। পরনির্ভর অর্থনীতির সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসতে চেষ্টা করলেও দেশের ঘাটতি জাতীয় বাজেট কিভাবে মোকাবেলা করা হবে তার কোনো দিকনির্দেশনা নেই। ফলে ব্যাংকিং খাত থেকে ঋণ করে ধার-দেনা মেটানো হয়- মুদ্রা নীতি ব্যবহূত হচ্ছে রাজস্ব ক্ষেত্রে ব্যবধান ঘোচানোর উপায় হিসাবে। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি এমনভাবে প্রণীত হচ্ছে যাতে দেখা যায় যে, অর্থ বছরের শুরু থেকে প্রথম ৬/৭ মাস এর কোনো বাস্তবায়ন বিগত এক দশকে ঘটেনি। ফলে আর্থিক বরাদ্দ এক্ষেত্রে একেবারে নগণ্য। আবার শেষের দিকে এসে ধুম পড়ে যায় কত দ্রুত অর্থ ছাড় করা যাবে। এই অবস্থায় এসে বিশেষ করে এপ্রিল-জুন প্রান্তিকে সর্বোচ্চ ২০-৩০% ব্যয় হয় যেখানে আগের নয় মাসে হয় ২০-৪০%। গত অর্থ বছরেও বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির ক্ষেত্রে এর ব্যতিক্রম পরিলক্ষিত হয়নি। চলতি অর্থ বছরের প্রথম তিন মাসেও বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির ১০% এরও বাস্তবায়ন ঘটেনি। আসলে যত কষ্ট করেই মূল্যায়ন করা হোক না কেন, সিস্টেম এমন দাঁড়িয়ে গেছে অনেক ক্ষেত্রেই যোগ্য লোকের পক্ষেও যথাযথভাবে কাজ করা সম্ভব হয় না। জবাবদিহি ব্যবস্থা আমাদের দেশে কখনো ছিল না। আবার সুশাসন সম্পর্কে অনেক বড় বড় কথা বলা হলেও এর সঠিক বাস্তবায়ন ঘটেনি। কখনো যারা দেশের অর্থনীতি মারাত্মক ক্ষতের সৃষ্টি করছে তাদের বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। ফলে এক ধরনের অচলায়তনের সৃষ্টি হয়েছে। এই অচলায়তন ভাঙ্গতে হলে যে বিগ পুশের প্রয়োজন তা তখনই সম্ভব হয় যখন উন্নয়ন কর্মসূচিতে সাধারণ মানুষ সম্পৃক্ত থাকে; কিন্তু অধিকাংশ জনকল্যাণমুখী প্রকল্পই শেষ পর্যন্ত বাস্তবায়িত হয় না। একটি উদাহরণ দিচ্ছি- বাংলাদেশের অর্থনীতিতে সবচেয়ে বড় অবদান হচ্ছে প্রবাসী বাংলাদেশিদের। এই প্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যে যারা বিদেশে যান, তাদের প্রশিক্ষণের জন্য বিশেষ বরাদ্দ থাকে; কিন্তু কার্যত দেখা গেছে যে, তারা যখন বিদেশে যান তাদের জন্য সরকারিভাবে স্থাপিত প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলো যুগের সাথে তাল মেলাতে পারছে না, আবার উপযুক্ত প্রশিক্ষক নেই প্রশিক্ষণ দেয়ার জন্য। বাধ্য হয়ে নিজের গাটের পয়সা খরচ করে বেসরকারি খাতে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে হয়। বেসরকারি খাতে যে উন্নতমানের প্রশিক্ষণ দেয়া হয় তা কিন্তু নয়। গার্মেন্টস সেক্টরে যে সমস্ত নারী শ্রমিকেরা দিনের পর দিন হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রমের মাধ্যমে অর্থনীতিকে সচল রেখেছেন এবং বাংলাদেশের পোশাক শিল্প খাতের অবস্থান যেখানে চীনের পরই প্রতিযোগিতামূলক অবস্থায় দ্বিতীয় স্থান হিসাবে বিশ্ববাজারে অবস্থান গ্রহণ করতে সক্ষম হয়েছে— সেখানে এই নারী শ্রমিকরা চাকরি হারালে পর নতুন ধরনের কর্মসংস্থানের জন্যে প্রশিক্ষণের সরকারি ব্যবস্থা থাকার কথা থাকলেও বাস্তবে তারা পান না। অথচ বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত আমাদের সামষ্টিক অর্থনীতিতে সামষ্টিক চাহিদা ও সামষ্টিক যোগানের মধ্যে ভারসাম্য বজায় সৃষ্টি করা। দীর্ঘ একচল্লিশ বছরেও কোন সরকারের আমলেই ভারসাম্য অর্জন করা সম্ভব হয়নি। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির আওতায় জাহাজ নির্মাণ শিল্পে উদ্যোক্তাদের ১০% প্রণোদন দেয়া দরকার। আবার বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির আকার ইদানীং জাতীয় বাজেটের তুলনায় ছোট হওয়ার কারণ হচ্ছে অতিরিক্ত ভর্তুকি প্রদান যা ষষ্ঠ-পঞ্চ বার্ষিক পরিকল্পনার মূল্যায়নে শিকার করা হয়েছে। আসলে ভর্তুকি যে প্রদান করা হচ্ছে তা কিন্তু গরীব লোকের কোন কাজেই আসছে না। সর্বগ্রাসী দুর্নীতি আধিক্য মানুষকে কুরে কুরে খাচ্ছে- ফেলে দিচ্ছে ভর্তুকির বেড়াজালে। যারা এ ভর্তুকি থেকে উপকৃত হচ্ছেন তারা কিন্তু বিত্তবান। গত পৌনে চার বছরে আমরা কিন্তু কয়লানির্ভর বিদ্যুত্ উত্পাদনে তেমন সাফল্য লাভ করতে পারিনি। এক শ্রেণির বামপন্থিদের ভুল আন্দোলন সাথে সুবিধাভোগী শ্রেণি এবং দুর্নীতির দুর্বৃত্তায়ন এক্ষেত্রে তাত্পর্যপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। যদিও মাত্র ছয় দফা বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে এদেশে কিন্তু তার মাত্রা ছিল প্রায় আড়াইশ’ শতাংশ। অন্যদিকে ভারতে গত তিন বছরে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে ত্রিশবার কিন্তু তার মাত্রা একশ’ শতাংশ হয়নি। আসলে আমাদের অকার্যকর ও ভ্রান্ত নীতি এক্ষেত্রে দায়ী। যে সমস্ত
সরকারি খাতে বিদ্যুত্ উত্পাদন ব্যবস্থা বিভিন্ন কারণে ব্যাহত বা বন্ধ ছিল সেগুলো চালুর উদ্যোগ নেয়া দরকার ছিল। আবার কুইক রেন্টাল পদ্ধতি সাময়িক বিদ্যুত্ উত্পাদন ব্যবস্থা হিসাবে ঠিক থাকলেও দীর্ঘমেয়াদী ব্যবস্থার দরকার ছিল। পাশাপাশি সিস্টেম লস কমানোর ব্যবস্থা নেয়া উচিত ছিল।
এদিকে সরকার দীর্ঘদিন পর রেলওয়ের ভাড়া বৃদ্ধি করেছেন। এটি অবশ্য যুক্তিসঙ্গত কাজ হয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো এর ফলে কি সাধারণ যাত্রীর জন্যে রেলওয়ের সেবার মান বাড়বে? আবার যারা বিনা টিকেটে বিভিন্ন স্থান থেকে যাতায়াত করেন, তাদের বিরুদ্ধে কে ব্যবস্থা নিবেন? একটি সংঘবদ্ধ চক্র রেলওয়ে টিকেট না কাটার পক্ষে কেবল কাজ করে না বরং যারা এসি কিংবা প্রথম শ্রেণীর টিকেট কেটে যাত্রা করেন তারা সবসময়ে কোন না কোনভাবে টিকেট না কাটা যাত্রীদের দ্বারা ভোগান্তির শিকার হতে বাধ্য করেন। এ ক্ষেত্রে বেশকিছু যাত্রী অভিযোগ করেছেন কেবল রেলওয়ের টিটি, ইঞ্জিন ড্রাইভার কিংবা, রেলওয়ে পুলিশ নয়, এমন কিছু এ্যাডভেঞ্চারপ্রিয় যুবক-যুবতী আছেন যারা প্রকৃত টিকিট কেটে রেলওয়েতে যাত্রা করেছেন, তাদের হেনেস্তা করে থাকেন। এক্ষেত্রে লোকলজ্জার ভয়ে অনেকেই রেলপথে যাত্রাকে নিরাপদ মনে করেন না। যেখানে যাত্রীর নিরাপত্তা বিধান করা যায় না, সেখানে রেলওয়ের ভাড়া বৃদ্ধি করলেই কি কেবল রেলওয়ের লোকসান ঘোচানো যাবে? এজন্যে সমন্বিত কর্মসূচি কোথায়? বর্তমান রেলমন্ত্রী কতটুকু সফল হবেন কেবল ভবিতব্যই বলতে পারে। আসলে সর্ষের মধ্যে ভূত থাকলে কারোর পক্ষে কিছু করাই সম্ভব নয়।
ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় দেশের মূল্যস্ফীতি হ্রাস করে ৭.৫% করার আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছিল। এমনকি স্থিতিবছর ইতোমধ্যে পরিবর্তন করা হয়েছে। ফলে দাবি করা হচ্ছে মূল্যস্ফীতি নতুন স্থিতিবছর হিসাবে বেশ কমেছে। কিছুদিন আগে যদিও খাদ্যনির্ভর দ্রব্যের মূল্যস্ফীতির হার কম ছিল বলে দাবি করা হতো এবং খাদ্যনির্ভর নয় এমন দ্রব্যের মূল্যস্ফীতির হার বাড়ছিল বলে বলা হচ্ছিল বাস্তবতা হচ্ছে এখন কিন্তু খাদ্যনির্ভর দ্রব্যের মূল্যস্ফীতির হারও বাড়ছে। আমরা চাউল বিদেশে রপ্তানি করতে চাচ্ছি। সেখানে টিসিবিসহ সরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহ ধীরে ধীরে খাদ্যদ্রব্যের দাম বাড়ছে বলে বলা হলেও বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাবে মূল্যস্ফীতি কমছে বলে বলা হচ্ছে। আসলে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো অনেক আগেই বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়েছে? বিভিন্ন সময়ে রাজনৈতিক চাপের কারণে দক্ষ লোকের পেশাদারিত্ব নষ্ট হয়েছে।
বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক আইনজীবীদের সহায়তায় দেশের বৃহত্তর স্বার্থে মামলা দ্রুত করলে ভাল হয় বলে প্রতীয়মান হলেও ধীরলয়ে চলছেন। তবে শেষ পর্যন্ত দুদকই সোনালী ব্যাংকের হয়ে মামলা দায়ের করেছেন। একজন প্রাক্তন ব্যাংকার হিসেবে অভিজ্ঞতার আলোকে বলবো এ সমস্ত মামলা দীর্ঘদিন ধরে চলে এবং অভিজ্ঞ ব্যাংকাররা ক্ষেত্রে আইনজীবীদেরকে সহায়তা ও নির্দেশনা দিয়ে থাকে, দুদকের কিন্তু সে ধরনের দক্ষতা কিংবা সঙ্গত কারণে যোগ্যতা নেই। কেননা তারাতো ব্যাংক ঋণ সংক্রান্ত খুঁটিনাটি জানেন না। আসলে দীর্ঘ সময় ধরে এদেশে দেখা গেছে, কখনো কোন বড় ঋণ খেলাপী বিচারের সম্মুখীন হন না। পুঁজিবাজারের কেলেংকারির পরও একই অব্যবস্থা বিরাজমান ছিল। আর তাই ঋণ খেলাপী, শেয়ার কেলেংকারির নায়কেরা বহাল তবিয়তে বিদ্যমান থাকেন। সোনালী ব্যাংকে অবিলম্বে ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের ক্ষেত্রে যোগ্য ও দক্ষ এবং নৈতিক বলে বলীয়ান পেশাদার লোকদের নিয়োগ করতে হবে।
দেশে যে সমস্ত উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করা হয় সেগুলোর ক্ষেত্রে ধারাবাহিকতা থাকা বাঞ্ছনীয়। নচেত এই সমস্ত পরিকল্পনা কখনো সফল হতে পারে না। দারিদ্র্য একটি চলমান প্রক্রিয়া। জনসংখ্যা বৃদ্ধির হারও একটি চলমান প্রক্রিয়া। অথচ এই ক্ষেত্রে যে সমস্ত পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং বাস্তবায়ন করা হয় তা কতকগুলো বিচ্ছিন্ন ঘটনার সমাবেশ। সঞ্চয় বিনিয়োগকে কার্যকরী কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রভূমি হিসাবে তৈরি করা দরকার। কৃষিনির্ভর ও শিল্পনির্ভর উভয় খাতের মধ্যেই সমন্বয়হীনতার সৃষ্টি হচ্ছে—এই অব্যবস্থাপনা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। আমাদের দেশের অর্থনীতি ততখানি মুক্ত নয়। তারপরও সময়োচিত পদক্ষেপ গ্রহণ না করা গেলে তেমন ফলোদয় হবে না। কিন্তু দুর্ভাগ্য হলো বেড়ালের গলায় ঘণ্টা বাঁধবে কে?
সম্প্রতি দক্ষিণ আফ্রিকার কেপটাউনে অনুষ্ঠিত এফআই গ্লোবাল পলিসি ফোরাম ২০১২ তে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আতিউর রহমান মন্তব্য করেছেন যে, ফাইন্যান্সিয়াল ইনফ্লুুশান করা গেলে বৈশ্বিক মন্দা রোধ করা যাবে। আসলে তার বক্তব্যটি একদিক দিয়ে ঠিক। যতবেশি মানুষকে আর্থিক খাতের ব্যবস্থাপনায় আনা যাবে তত দেশের মানুষের মঙ্গল হবে। কিন্তু সমস্যা হলো যারা দুষ্টু ও ঋণ খেলাপী ঋণ দিয়ে ব্যাংকিং ব্যবস্থায় অচলায়তন সৃষ্টি করছে আবার শেয়ার কেলেংকারি করেও পার পেয়ে যাচ্ছে তারা আর্থিক খাতে মন্দা যে কোন সময়ে সমাধান নিয়ে আসতে সক্ষম। এ ক্ষেত্রে কেমেলস রেটিং হোক কিংবা স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট হোক— কোন লাভ নেই— যদি না আমরা ভেতর থেকে পরিশুদ্ধ হই। গত ৩০ সেপ্টেম্বর অর্থমন্ত্রী বলেছেন যে, বাংলাদেশ বিমান যদি এভাবে লোকসান করে তবে বিলুপ্তির যে ঘোষণা দিয়েছেন তাতে বুঝা যায় যে, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স কোনরূপ পরিকল্পনা ছাড়াই পরিচালিত হচ্ছে। বস্তুত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার অংশ হিসাবে সুস্পষ্ট উন্নয়নের দিক নির্দেশনা থাকবে যা প্রতি মাসে ছাড়কৃত অর্থের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে বাস্তবায়ন করতে হবে। এক্ষেত্রে দুর্নীতি এবং দুর্বৃত্তায়নকে সর্বনিম্ন করার উদ্যোগ নিতে হবে। বিশ্ব ব্যাংক, আইএমএফ কিংবা ইউনাইটেড নেশনসের সংস্কারের পূর্বে দেশের অভ্যন্তরীণ সংস্কারে উদ্যোগী হতে হবে। আসলে দেশের উন্নয়নের কোন স্বল্পমেয়াদী উপায় নেই। তবে দীর্ঘমেয়াদী পথ হলেও বল্গাহীন দুর্নীতি যেন প্রশ্রয় না পায়। অন্যদিকে খেয়াল রাখা দরকার যে, প্রতিমাসে যাতে যথাসময়ে অর্থ ছাড় দ্বারা বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির সঠিক বাস্তবায়ন করা যায়। এদিকে পদ্মার প্রমত্ত ঢেউ প্রকৃতির বৈরিতা এবং যথাসময়ে নদীর নাব্যতা হ্রাস করার উদ্যোগ না নেয়ায় সম্প্রতি ঢাকার সাথে মাওয়া দিয়ে বিভিন্ন অঞ্চলের যোগাযোগের যে সমস্যা হয়েছে তাতে মনে হয় সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ কমানোর কোন উদ্যোগ পরিকল্পিতভাবে নেই। আসলে ইতোপূর্বেকার বিএনপি জোটের মত বর্তমান সরকারকে কথা ও কাজে অমিল যাতে না হয়, সেদিকে বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে।
এদিকে বিশ্বব্যাংক সংস্কারের যে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন সংস্থাটির প্রধান, তা উন্নয়নশীল দেশসমূহ ৪০ বছর ধরে দাবি করে আসছেন।
++লেখক ম্যাক্রো ও ফিন্যান্সিয়াল ইকোনোমিস্ট, বিভাগীয় প্রধান, প্রেসিডেন্সী বিশ্ববিদ্যালয়
ই মেইল pipulbd@gmail.com
No comments:
Post a Comment
Thanks for visiting.