রাজনীতিতে রণনীতি ও রণকৌশল প্রসঙ্গে
লেখক: মুজাহিদুল
ইসলাম সেলিম | সোমবার, ১৫ অক্টোবর ২০১২,
৩০
আশ্বিন ১৪১৯
রাজনীতিতে
চূড়ান্ত লক্ষ্য (ultimate goal), রণনীতি (strategy) ও রণকৌশল (tactics)
বলে
তিনটি ভিন্ন ভিন্নভাবে বিবেচনাযোগ্য বিষয় রয়েছে। রাজনৈতিক দল ও দলের নেতা-কর্মীরা
অনেক সময় সচেতনভাবে এগুলো নির্ধারণ করে অগ্রসর হয়ে থাকেন। কিন্তু আমাদের দেশে
বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এসব বিবেচনার বালাই না করেই রাজনীতি করা হয়। রাজনীতি চলে ‘এ্যাডহক’
অর্থাত্
‘যখনকারটা
তখনকার মতো’ দৃষ্টিভঙ্গির ভিত্তিতে।
দেশের কথিত ‘বড়’ দু’টি দল আওয়ামী
লীগ ও বিএনপি তো বটেই, এমনকি অধিকাংশ বুর্জোয়া রাজনৈতিক দল ও
নেতা-কর্মীদের ক্ষেত্রে, ‘ক্ষমতায় যাওয়াটাই’ বা ক্ষমতার ভাগ
পাওয়াটাই মোক্ষম লক্ষ্য বলে গণ্য করে, সেই অনুসারে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়।
সেখানে ‘নীতি-আদর্শ-কর্মসূচি’ ইত্যাদি বিষয়গুলো হলো নিতান্তই তুচ্ছ।
তাদের ক্ষেত্রে মূলমন্ত্র হলো অনেকটা “সবার উপরে ‘গদিই’ সত্য, তাহার উপরে নাই।”
গদির
বিবেচনার সামনে অন্য সবকিছুই হলো তাদের কাছে গৌণ। সেটা নীতি, আদর্শ, মানবিকতা,
দেশপ্রেম
ইত্যাদি যা হোক না কেন! এটাই হলো ‘গদির রাজনীতি’।
দেশে এখন দুই
কিছিমের রাজনীতি চালু রয়েছে। একটি হলো ‘গদির’ তথা ‘হালুয়া-রুটির’
রাজনীতি।
আর অন্যদিকে রয়েছে ‘আদর্শের’ তথা ‘দেশপ্রেম-আত্মত্যাগের’
রাজনীতি।
দেশের দুর্ভাগ্য হলো বর্তমানে ‘আদর্শের’ রাজনীতিকে
প্রান্তস্থিত অবস্থানে ঠেলে রাখা হয়েছে। হালুয়া-রুটি মার্কা ‘গদির’ রাজনীতিকে চলতি
ধারার প্রধান স্রোতে পরিণত করা হয়েছে।
‘গদির’ রাজনীতির
স্বতন্ত্র কতগুলো বৈশিষ্ট্য আছে। সেখানেও রয়েছে চূড়ান্ত লক্ষ্য, রণনীতি ও রণকৌশলের
বিষয়। এক্ষেত্রে রয়েছে দু’ধরনের রণনীতি বা strategy। অনেকে
‘নগদ
যা পাও হাত পেতে নাও, বাকির খাতা শূন্য থাক’—এরূপ
রণনীতি-রণকৌশল নিয়ে চলাটাই বুদ্ধিমানের কাজ বলে মনে করে। সবসময় গদির বা সরকারের
কাছাকাছি থাকাটাই হলো তাদের রণনীতি। সেজন্য হাওয়া বুঝে তারা নরম-গরম চালে পদক্ষেপ
নিয়ে থাকে। অবস্থা বুঝে তারা দলবদল করে ক্ষমতাসীন দলের সাথে থাকার ব্যবস্থা করে।
ঠিকঠাক মতো এই কাজটি করতে পারা নির্ভর করে সঠিক রণকৌশল অনুসরণ করতে পারার উপর।
ভাই-ব্রাদার ও মামা-চাচার গোষ্ঠীকে ভাগ-ভাগ করে এদলে-ওদলে ঢুকিয়ে রাখতে পারা,
রাজনীতির
হাওয়া কখন কোনিদকে উড়ছে তা ঠিক মতো অনুমান করার সক্ষমতা, নিজেকে প্রয়োজন
মতো একপক্ষের স্বপক্ষে লাইম লাইটে দৃশ্যমান রেখেও অন্যপক্ষের সাথে একটা লাইন রেখে
চলতে পারা, দল বদল করার উপযুক্ত সময়টি সঠিকভাবে নির্ধারণ করতে পারা ইত্যাদি হলো ‘গদির’ রাজনীতিতে নগদ
প্রাপ্তির স্ট্র্যাটাজির ক্ষেত্রে উপযুক্ত ট্যাকটিক্সের উপাদান।
হালুয়া-রুটি
মার্কা ‘গদির’ রাজনীতির এই নগদপ্রাপ্তির রণনীতির ধ্রুপদি দৃষ্টান্ত হলো ঢাকা
মহানগরের উত্তর প্রান্তের বিখ্যাত গরুর হাট নিকটবর্তী স্থানে বসবাসরত এক এমপি
মহোদয়ের উদ্ধৃতিযোগ্য তারকা মার্কা সেই উক্তিটি। নব্বইয়ের দশকে তাকে সংসদ অধিবেশনে
প্রশ্ন করা হয়েছিল, “আওয়ামী লীগ সরকারের সময় আপনে আওয়ামী লীগ, বিএনপির সময়
বিএনপি, জাতীয় পার্টির সময় জাতীয় পার্টি। এখন বিএনপির শাসনামলে আপনাকে আবার
বিএনপির কাতারে দেখা যাচ্ছে। এভাবে বার বার আপনি দল বদল করেন কেন?” জবাবে তিনি
বলেছিলেন, “মাননীয় স্পিকার! আমি দল বদল করি বলে অভিযোগ করা হয়েছে। কিন্তু কবে
আমি দল বদল করলাম! আল্লাহর কসম, আমি জীবনে কখনো দল বদল করিনি। আমি সবসময় ‘সরকারি দল’
করি।
কিন্তু বার বার সরকার বদল হয়, তাহলে আমি কী করব?”। এসব বুর্জোয়া
দলের বিভিন্ন স্তরে তথাকথিত ‘জঙ্গি ক্যাডারদের’ একটি বড় অংশ এই
ধরনেরই রণনীতি ও রণকৌশল অনুসরণ করে থাকে। তাদের জোরেই আওয়ামী লীগ-বিএনপি আজ দেশের
দু’টি ‘বড়’ দলে পরিণত
হয়েছে। এসব অপশক্তিকে লালন-পালন করে ও তাদের অন্যায় কাজকর্মকে প্রশ্রয় দিয়েই
তাদেরকে তাদের ‘বড়ত্ব’ নিশ্চিত করতে হয়। জাতীয় পার্টি
বা অন্যান্য বুর্জোয়া দল তাদের পার্টি পরিচালনার ক্ষেত্রে একই পন্থা অনুসরণ করে
থাকে। কিন্তু দেশি-বিদেশি শাসক শ্রেণীর ‘রাজনৈতিক-ইঞ্জিনিয়ারিং’য়ের কারণে তারা ‘বড়’ হতে পারে না,
পারবেও
না। তাদের শক্তিকে নিয়ন্ত্রিত সীমার মধ্যে আবদ্ধ করে রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
কিন্তু দল পরিচালনার ক্ষেত্রে তাদের সকলের পদ্ধতি মূলত সেই একই রকম।
আওয়ামী লীগ ও
বিএনপি দল দু’টি আজ এসব ‘নগদ প্রাপ্তির কৌশলধারী’ দুর্বৃত্ত-ক্যাডারদের
হাতে বহুলাংশে জিম্মি হয়ে গেছে। আওয়ামী লীগের এখন আর সে মুরোদ নেই যে তার দলের এসব
দুর্বৃত্ত-ক্যাডারদেরকে সে লাত্থি মেরে বিতাড়িত করে। কারণ আওয়ামী লীগ তাদেরকে
বিতাড়িত করলে (কিম্বা তাদের অপকর্মের প্রতি প্রয়োজনীয় মাত্রায় সায় না দিলে) তারা
সোজা হেঁটে বিএনপিতে চলে যাবে। আর তাই যদি ঘটে, তবে আওয়ামী
লীগের চেয়ে ‘শক্তিতে’ বিএনপির পাল্লা ভারি হয়ে যাবে। আওয়ামী লীগ কি
দুর্বৃত্তদের বিতাড়িত করতে গিয়ে এভাবে নিজের পায়ে নিজে কুড়াল মারতে পারে! একইভাবে,
বিএনপিও
তার দলের দুর্বৃত্ত-ক্যাডারদের প্রশ্রয় না দিলে ‘বড়’ দলের ‘শক্তি’ নিয়ে টিকতে
পারবে না। অন্যরকম কিছু করার চেষ্টা করলে বিএনপির এসব ‘দুর্বৃত্ত
ক্যাডাররা’ দৌড়ে গিয়ে আওয়ামী লীগে ঢুকে পড়বে। এভাবে উভয় দলই আজ ‘নগদপ্রাপ্তির’
রণনীতি-রণকৌশল
অনুসরণকারী দুর্বৃত্ত-ক্যাডারদের হাতে বন্দী হয়ে পড়েছে।
‘গদির’ রাজনীতির ধারা
অনুসরণকারীদের মধ্যে অবশ্য দ্বিতীয় আরেক ধরনের রণনীতি বা স্ট্র্যাটাজির অনুসরণকারী
রয়েছে। তাদের হিসাব-নিকাশ আরেকটু প্রসারিত। তারা একবার এই নৌকা আর আকেরবার ওই
নৌকায় উঠার কৌশলের বদলে ধৈর্যের সাথে এক নৌকাতেই তাদের আনুগত্য বিসর্জন চলে থাকে।
তাদের দিয়ে সেই নৌকা ‘গদির-ঘাটে’ ভিড়তে পারার
জন্য তারা ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করে। তাদের রণনীতি হলো পর্যায়ক্রমে এদিক-ওদিক
আসা-যাওয়া করে সকলের কাছ থেকে ছিটেফোঁটা সুবিধা আদায়ের চেয়ে, এক-আধ মেয়াদ
ক্ষতি স্বীকার করে হলেও পালাক্রমে দলকে গদিতে এনে বড় ‘দাও মারা’। তাতে
অন্তর্বর্তীকালীন লোকসান তো দূর হবেই। বরঞ্চ সকলের কাছ থেকে ছিটেফোঁটা সুবিধার
চেয়ে বড় অর্জন সম্ভব হবে। সাম্রাজ্যবাদের সাথে দহরম-মহরম রক্ষা করে চলা, লুটেরা ধনিকদের
স্বার্থে সোচ্চার থাকা, যথাসম্ভব ক্ষতি এড়িয়ে বাগাড়ম্বরের মাধ্যমে ‘দলের স্বার্থের
রক্ষাকর্তার ভূমিকায়’ অভিনয় করা, দলের মধ্যে
কনুই-এর গুতায় নিজের অবস্থান এগিয়ে নেয়া, নিজেকে মূল নেতা
বা নেত্রীর সুনজরে রাখার ব্যবস্থা করা ইত্যাদি হলো এই রণনীতি অনুসরণের ক্ষেত্রে
রণকৌশলগত বা ট্যাকটিক্যাল বিভিন্ন উপাদান।
রাজনীতিকে যারা
নীতি-আদর্শের জায়গা থেকে বিবেচনা না করে নিছক ‘গদি’ দখলের
প্রতিযোগিতা হিসেবে গণ্য করে থাকে তারাই আদর্শগত লড়াই তথা পলেমিক্স (বিতর্ক)-এর
বদলে কূটচাল ও ষড়যন্ত্র-চক্রান্তের পথ অবলম্বনে প্রলুব্ধ হয়। তাদের মাথায়ই নানা
উদ্ভট প্রজেক্টের উদয় হয়ে থাকে। যেমন, যারা ক্ষমতায় আছে তারা ভাবে যে
প্রতিপক্ষকে আরেক মেয়াদ ক্ষমতার বাইরে রাখতে পারলেই সেই দলের কর্মী-ক্যাডাররা ‘গদির স্বাদ’
থেকে
দীর্ঘদিন বঞ্চিত থাকায় ধৈর্যহীন হয়ে সেই দল থেকে ঝরে পড়বে। কিম্বা যারা ক্ষমতার
বাইরে রয়েছে তাদের মাথায় এমন চিন্তার উদয় হয় যে, দল টিকিয়ে রাখতে
হলে যেন-তেন উপায়ে ক্ষমতায় যেতেই হবে। কিম্বা তা না করতেই পারলে প্রতিপক্ষ যেন
কোনোভাবে পরপর দু’মেয়াদ গদিতে না থাকতে পারে, ছলেবলে-কৌশলে
তার ব্যবস্থা করা। এ ধরনের নীতিহীন চিন্তার ফলাফলই হলো মূল প্রতিদ্বন্দ্বীকে কায়দা
করে বাইরে রেখে ‘একতরফা নির্বাচন’ করে পুনর্বার ক্ষমতায় অধিষ্ঠান সুনিশ্চিত করা,
কিম্বা
আমি না আসতে পারলে প্রতিপক্ষের ক্ষমতায় আরোহণকে ঠেকানোর জন্য ‘ওয়ান ইলেভেন’
মার্কা
ষড়যন্ত্রকে মদদ দেয়া ইত্যাদি চিন্তাগুলো।
রাজনীতিতে যাদের
চূড়ান্ত লক্ষ্য হলো নিছকই ‘গদিতে যাওয়া’ এবং যে ক্ষেত্রে
নীতি-আদর্শ-কর্মসূচির বিষয়গুলো হলো নিতান্তই গৌণ ও ‘সুবিধামত গ্রহণ
করা না করার’ মতো বিষয় হিসেবে বিবেচিত, তারাও তাদের লক্ষ্য অর্জনের জন্য
রণনীতি ও রণকৌশলের তথা স্ট্র্যাটাজি ও ট্যাকটিক্স প্রয়োগ করে তাদের পদক্ষেপ রচনা
করে থাকে। তারই কিছু দৃষ্টান্তের আগে উল্লেখ করেছি। তবে সাধারণত তারা সচেতন
ভাবনা-চিন্তা দিয়ে তাদের পদক্ষেপসমূহের রণনীতি ও রণকৌশল প্রণয়ন করে না। তারা মূলত
চালিত হয় স্বতঃস্ফূর্ততার উপর ভিত্তি করে। অনেকটা জৈবিক তাড়নার মতো স্বাভাবিক
স্বার্থবুদ্ধির বিবেচনা থেকে করণীয় হিসেবে মনে যা উদয় হয়, তাই তারা করতে
প্রবৃত্ত হয়। কিন্তু এই স্বতঃস্ফূর্ততার মধ্যেও রয়েছে একটা যুক্তি ও কার্যকরণ
ধারার গাঁথুনী। সে নিজে হয়তো জানতে পারে না কিম্বা সচেতনভাবে বুঝতেও পারে না
কিন্তু তথাপি সে রণনীতি রণকৌশলের বিজ্ঞান অনুসরণ করেই পদেক্ষপ নিয়ে থাকে। বিশ্লেষণ
করলে তার স্বরূপ উপলব্ধি করা যায়।
এসব কথা থেকে এ
বিষয়টি বেশ স্পষ্ট যে রণনীতি-রণকৌশলের বিষয়টি মোটেই কেবল একটি একাডেমিক বিষয় নয়।
এগুলো বাস্তব প্রয়োগের বিষয়। কেউ তা সচেতনভাবে বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতিতে হিসাব-নিকাশ
করে ও বুঝে-শুনে প্রয়োগ করে। অনেকে নিজের অজান্তে ও অসচেতনভাবে তার চূড়ান্ত
লক্ষ্যের পথে রণনীতি-রণকৌশল প্রয়োগ করে অগ্রসর হয়।
অন্যান্য
প্রাণীর সাথে মানুষের পার্থক্য হলো এই যে, মানুষ
যুক্তিসঙ্গত চিন্তার ক্ষমতাধারী, অন্যরা যা নয়। সুতরাং শুধু তাত্ক্ষণিক জৈবিক
তাড়না নয়, দূরবর্তী কোনো বিষয়কে লক্ষ্য হিসেবে নির্ধারণ করা এবং বুদ্ধিবৃত্তিক
বিবেচনা ব্যবহার করে সেই লক্ষ্যে পৌঁছার পথ নির্ধারণ করা একমাত্র মানুষের পক্ষেই
সম্ভব। সেক্ষেত্রেই সচেতনভাবে চূড়ান্ত লক্ষ্যাভিমুখী রণনীতি ও রণকৌশল নির্ধারণের
বিষয়টি মানুষের একটি বৈশিষ্ট্য হিসেবে চিহ্নিত। জীবনের সব ক্ষেত্রেই এ ধরনের
চূড়ান্ত লক্ষ্য, লক্ষ্যে পৌঁছার মূল পথ ও সেই মূল পথ অতিক্রমের জন্য উপস্থিত মতো
তাত্ক্ষণিক যাবতীয় কৌশল নির্ধারণ— যেকোন
কাজের ক্ষেত্রেই মানুষ এভাবে তার চিন্তা প্রক্রিয়াকে সাজিয়ে নিয়ে কাজ করে
থাকে। অন্যান্য প্রাণীর ক্ষেত্রে এক ধরনের চূড়ান্ত লক্ষ্য, রণনীতি, রণকৌশলের মতো
একই ধরনের প্রক্রিয়ার অবস্থান লক্ষ্য করা যায়। তবে থাকলেও সেগুলো হলো অসচেতনভাবে
সৃষ্ট প্রক্রিয়া। অনেকটাই জৈবিক প্রতিক্রিয়া হিসেবে সেখানে ঘটনা পরম্পরায় কাজগুলো
সাধিত হয়। যেমন বাঘ কর্তৃক তার শিকার ধরার কাজ। সেখানেও বাঘ তার চূড়ান্ত লক্ষ্য
(শিকার ধরা), রণনীতি (শিকারের দলবল থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার জন্য ঘাপটি মেরে থাকা) ও
সেই অনুসারে পদে পদে রণকৌশল প্রয়োগ (ঘাপটি মারা, নিঃশব্দে
শিকারকে অনুসরণ করা, তীব্র গতিতে শিকারের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়া ইত্যাদি) হতে দেখা যায়। কিন্তু
মানুষের কাজের সাথে এক্ষেত্রে পার্থক্য হলো, মানুষ তার সচেতন
প্রজ্ঞা দিয়ে স্ট্র্যাটাজি ও ট্যাকটিক্স নির্ধারণ করার ক্ষমতা রাখে। আর বাঘের
ক্ষেত্রে তাহল মূলত একটি জৈবিক প্রতিক্রিয়া। সে কারণেই বাঘের শিকার ধরার প্রক্রিয়া
আদিকাল থেকেই জৈবিক প্রক্রিয়া। কিন্তু কেবল মানুষই তার সচেতন বিবেচনাবোধ দিয়ে
লক্ষ্যে পৌঁছার ভিন্ন ভিন্ন (এবং ক্রমান্বয়ে উন্নত) পথ উদ্ভাবন করতে সক্ষম। এভাবেই
ইতিহাস ক্রমান্বয়ে অগ্রসর হতে পারছে উন্নততর স্তরে। রাজনীতিতে স্বাভাবিক কারণেই
চূড়ান্ত লক্ষ্য, রণনীতি ও রণকৌশলের বিষয়গুলো রাজনৈতিক চরিত্র ও চেহারা ধারণ করে থাকে।
যদি বাস্তব জগতে
রাজনীতির কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয় চূড়ান্ত লক্ষ্য, রণনীতি ও
রণকৌশলের কাঠামোতে এবং মানুষের যদি সক্ষমতা থাকে এগুলোকে সচেতনভাবে নির্ধারণ ও
বিন্যস্ত করার, তাহলে কেন সে সচেতনভাবে সেগুলো নির্ধারণ করে চলার বদলে
স্বতঃস্ফূর্ততার উপর গা ভাসিয়ে দিয়ে পথ চলবে? চূড়ান্ত লক্ষ্য
এবং সেই লক্ষ্যে পৌঁছার উপযুক্ত রণনীতি ও রণকৌশল সম্পর্কে কি বিজ্ঞানসম্মত চর্চা
থাকা প্রয়োজন না? হ্যাঁ, তা প্রয়োজন। ইতিহাসের অমূল্য অভিজ্ঞতা সঞ্চিত সেরূপ বিজ্ঞানসম্মত
তত্ত্ব ভাণ্ডার মানব সমাজের সঞ্চয়ে রয়েছে। তা নিয়ে আগামীতে কিছু লেখার ইচ্ছা রইল।
++লেখক : সাধারণ
সম্পাদক, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি
No comments:
Post a Comment
Thanks for visiting.