ওবামা-রমনির মধ্যপ্রাচ্য নীতি
লেখক: আনোয়ার সায়েম | সোমবার, ১৫ অক্টোবর ২০১২, ৩০ আশ্বিন ১৪১৯
বিশ্ব রাজনীতির অতি গুরুত্বপূর্ণ ও অবিচ্ছেদ্য একটি ইস্যুর নাম—‘মধ্যপ্রাচ্য’। জাতিসত্তা, ধর্মীয় বিশেষত, শিক্ষা-সংস্কৃতিসহ অনেক ক্ষেত্রেই পাশ্চাত্যবিমুখ এ অঞ্চলটি কৌশলগত কারণে বরাবরই বৈশ্বিক রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে অবস্থান করে। এর কারণ হিসেবে ভৌগোলিক অবস্থানের ভিত্তিতে মধ্যপ্রাচ্যের স্পর্শকাতর অবস্থান ও অপরিমেয় খনিজ সম্পদের ভাণ্ডারের দিকেই বিশেষজ্ঞরা বিশেষ ইঙ্গিত দিয়েছেন। যে কারণে দশকের পর দশকজুড়ে পাশ্চাত্য বিশ্বের পরোক্ষ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে মধ্যপ্রাচ্য। বিশ্ব নীতি-নির্ধারক হিসেবে পরিচিত যুক্তরাষ্ট্রেরও মধ্যপ্রাচ্যে নাক গলানোর কারণ হিসেবে এগুলোকেই শনাক্ত করেছেন বিশেষজ্ঞরা।
প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী মিট রমনির মধ্যপ্রাচ্যনীতি ওবামার চেয়ে অনেক বেশি কট্টর বলে মনে হচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে মধ্যপ্রাচ্য রাজনীতির হাওয়া গরম করা ইরান ইস্যুতে আক্রমণই একমাত্র পথ এবং এখনই তার প্রকৃত সময় বলে মন্তব্য করেছেন রমনি। সিরিয়া প্রসঙ্গেও রমনির অভিমত অভিন্ন। ওবামার মধ্যপ্রাচ্য নীতিকে বিপজ্জনক বলে মনে করেন রমনি।
মধ্যপ্রাচ্যে সাম্প্রতিক অস্বস্তিকর পরিস্থিতির ব্যাপারে দুই সপ্তাহ আগে ওয়াল স্ট্রিট জার্নালে এক নিবন্ধে রমনি লিখেছেন, অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র ‘পরিস্থিতি’র শিকার হচ্ছে। অথচ এসব ঘটনার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো হাত নেই। রমনি বলেন, আমাদের জনগণ বা মিত্রদের রক্ষায় আমরা কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছি না। এবং এটা বিপজ্জনক। তার মতে, মধ্যপ্রাচ্যে গোলযোগ ছড়িয়ে পড়লে, ইরান পরমাণু অর্জনের পথে এগিয়ে গেলে বা ইসরাইলের নিরাপত্তার সঙ্গে আপস করলে আমেরিকা বিশাল ঘূর্ণাবর্তে পড়তে পারে।
এ ব্যাপারে তিনি ওবামার মধ্যপ্রাচ্য নীতির সমালোচনা করে লিখেছিলেন, ‘সাফল্যের জন্য আমাদের একটি কৌশলের প্রয়োজন ছিল। কিন্ু্ত তিনি কারো সহায়তা চাননি।’
রমনি বলেন, নিছক শোরগোল আখ্যা দিয়ে ওবামা ইরানের পরমাণু কর্মসূচির ব্যাপারে ইসরাইলের উদ্বেগ নাকচ করে দিয়েছেন। সম্প্রতি মুসলিম বিশ্বে যুক্তরাষ্ট্র বিরোধী প্রতিবাদ-বিক্ষোভের ঝড় ওঠার পর ওবামার ওপর চাপ সৃষ্টি করতে তিনি এ ভূমিকা নেন।
এদিকে গত সপ্তাহের সোমবার মিট রমনি এক ভাষণে বিশ্বব্যাপী নের্তৃত্ব প্রদানে আমেরিকার ব্যর্থতার জন্য প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সমালোচনা করেন। ভার্জিনিয়ায় বক্তৃতাকালে রমনি লিবিয়ায় মার্কিন রাষ্ট্রদূত হত্যা, সিরিয়ায় হত্যাযজ্ঞ ও ইরানের পরমাণু অস্ত্র পরিকল্পনা সব মিলিয়ে মধ্যপ্রাচ্য নীতিতে হোয়াইট হাউসকে একহাত নেন। ওবামার পররাষ্ট্র নীতিকে ‘শুধুই কথামালা’র নীতি হিসেবে অভিহিত করেন রমনি। তিনি বলেন, এ ব্যর্থতা, বিশেষত মধ্যপ্রাচ্যে সংঘাতের আশঙ্কা বাড়িয়ে তুলেছে। তিনি ওবামাকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির জন্য দায়ী করেন। তিনি বলেন, এর ফলে মধ্যপ্রাচ্যে শান্তির আশা খর্ব হয়েছে এবং বিশেষত ইরানের মতো আমাদের উভয় দেশের শত্রুরা আরো সাহস অর্জন করেছে।
ভার্জিনিয়া মিলিটারি ইনস্টিটিউটে এক নীতিনির্ধারণী বক্তব্যে সোমবার রমনি বলেন, ওবামা প্রশাসন যুক্তরাষ্ট্রকে আরো অপমানিত, আরো ক্ষমতাহীন করে তুলছেন। মিট রমনি আরো বলেন যে, তিনি ইরানের উপর নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে দ্বিধাগ্রস্ত হবেন না এবং পূর্ব ভূমধ্যসাগর ও পারস্য উপসাগরে এয়ার ক্যারিয়ার টাস্কফোর্স স্থায়ীভাবে মোতায়েন করবেন।
এছাড়া ইরাক থেকে ‘তড়িঘড়ি করে’ মার্কিন সৈন্য প্রত্যাহারের সমালোচনা করেন রমনি। তিনি বলেন, সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক অর্জনকে ক্রমবর্ধমান সহিংসতা এবং বিদ্রোহী আল-কায়েদা গণতন্ত্রের দুর্বলতা এবং ইরানী প্রভাব নস্যাত্ করে দিচ্ছে।
এদিকে প্রেসিডেন্ট ওবামা নিজের পররাষ্ট্র নীতি বিষয়ক মন্তব্যে তার সন্ত্রাস বিরোধী রেকর্ডকে তুলে ধরেন। সামনে আনেন আল-কায়েদা নেতা ওসামা বিন লাদেনকে হত্যার বিষয়টিও। ইরাক ও আফগানিস্তানে যুদ্ধ গুটিয়ে আনার ব্যাপারে তার সিদ্ধান্তের উপর জোর দেন ওবামা। ইরাক আক্রমণের অগ্রদূত মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশের পরেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন বারাক ওবামা। আফগানিস্তান, ইরাকসহ আরব মুল্লুকের কয়েকটি দেশে তখন দাউ দাউ করে জ্বলেছে বিক্ষোভের আগুন। ফিলিস্তিন-ইসরাইল ইস্যুতে উত্তাল মধ্যপ্রাচ্যের সে আগুনে পানি ঢালতে চেয়েছিলেন ওবামা। ফিলিস্তিন-ইসরাইল একটি শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানে আসুক, সে চেষ্টাও করেছিলেন তিনি। ২০০৯ সালের জুনে মিসরের কায়রো বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ভাষণে মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি ফিরিয়ে আনতে তিনি বদ্ধপরিকর বলেও জানিয়েছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা মীমাংসায় আনতে পারেননি ওবামা।
No comments:
Post a Comment
Thanks for visiting.