Tuesday, June 12, 2012

 ফোর-জি (4G-Fourth Generation)

মোবাইল টেলিকমিউনিকেশনের সর্বাধুনিক সংস্করন ফোর-জি (4G-Fourth Generation)। এটি সম্পূর্নরূপে ইন্টারনেট প্রটোকলভিত্তিক একটি টেলিকমিউনিকেশন সিস্টেম যা গ্রাহককে Ultra-broadband mobile internet access  প্রদান করে থাকে। ফোর-জি প্রযুক্তি হচ্ছে থ্রিজি মোবাইলের আধুনিকতর সংস্করন। এই প্রযুক্তি এখনও গ্রাহক পর্যায়ে সহজলভ্য হয়ে উঠেনি। ফোরজি মোবাইলের পুরোপুরি বাণিজ্যিক উৎপাদন ও বিপনন শুরু হলে তথ্যপ্রযুক্তি ও টেলিকমিউনিকেশন সিস্টেমে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে বলে ধারনা করা হচ্ছে।

ফোর-জি মোবাইলের বৈশিষ্ট্যসমূহ:
২০০৮ সালের মার্চ মাসে International Telecommunications Union Radio communication sector (ITU-R), ফোর-জি প্রযুক্তির ক্ষেত্রে কিছু নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য বাধ্যতামূলক হিসাবে নির্ধারণ করে দেয় যা International Mobile Telecommunications Advanced (IMT-Advanced) specification নামে পরিচিত। ফোর-জি মোবাইলের অপরিহার্য বৈশিষ্টগুলো নিম্নরুপ:
ডাটা ট্রান্সফারের গতি High mobility station (যেমন, ট্রেন, বাস ইত্যাদি) এবং Low mobility station (যেমন, পথচারী, indoor ইত্যাদি) এর ক্ষেত্রে যথাক্রমে ন্যূনতম ১০০ মেগাবাইট/সেকেন্ড এবং ১ গিগাবাইট/সেকেন্ড হতে হবে।
এই প্রযুক্তির ডাটা ট্রান্সফার পুরোপুরি ইন্টারনেট প্রটোকল প্যাকেট সুইচ নেটওয়ার্ক ভিত্তিক হতে হবে।
একই স্পেকট্রাম থেকে সর্বাধিক সংখ্যক গ্রাহককে সেবা দিতে হবে।
পরিমাপ যোগ্য Clannel Band width ন্যূনতম ৫-২০ মেগাহার্জ এবং ক্ষেত্রবিশেষ ৪০ মেগাহার্জ পর্যন্ত হবে।
Downlink এর ক্ষেত্রে link spectral Efficiency 15bit/s/Hz এবং Uplink এর ক্ষেত্রে 6.75 bit/s/Hz হতে হবে।
এই সবগুলো বৈশিষ্ট্যই শুধুমাত্র LTE Advanced (Standardized by 3GPP) এবং 802.16m (standardized by the IEEE) এই দুটি প্রযুক্তির মাধ্যমে কাজ করবে।

বর্তমানে যেসব ষ্ট্যান্ডার্ড কাজ করছে:
বর্তমানে দুটি ফোর-জি ষ্ট্যান্ডার্ড বাণিজ্যিকভাবে ফোরজি মোবাইলের সাথে যুক্ত আছে। এর মধ্যে Mobile Wimax ২০০৬ সনে দক্ষিণ কোরিয়ায় সর্বপ্রথম এবং Long Term Evolution (LTE) স্ক্যান্ডিনেভিয়ান অঞ্চলে ২০০৯ সাল থেকে অপারেশন শুরু করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে Sprint Nextel ২০০৮ সালে Mobile Wimax চালু করে এবং Metro PCS ২০১০ সালে LTE সার্ভিস শুরু করে। শুরু থেকেই ফোর-জি প্রযুক্তির USB Wireless Modem প্রচলিত ছিল তবে ২০১০ সালে সর্বপ্রথম ওয়াইম্যাক্স স্মার্টফোন এবং ২০১১ সালে LTE স্মার্টফোন বাজারে আসে। এখন পর্যন্ত ফোরজি মোবাইল গুগলের অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেমের উপর নির্ভরশীল।

ফোর জি মোবাইল ব্যবহারের সুবিধা:
ফোর জি মোবাইলে রয়েছে সর্বোচ্চ গতির ডাটা ট্রান্সফারের সুবিধা।
এই প্রযুক্তিতে গ্রাহক সর্বদাই মোবাইল অনলাইন ব্রডব্যান্ডের আওতায় থাকতে সমর্থ হবেন।
এতে হাই ডেফিনেশন টেলিভিশন এবং ভিডিও কনফারেন্সের সুবিধা পাওয়া যাবে।
এই প্রযুক্তিতে গ্রাহকের কথোপকথন ও ডাটা ট্রান্সফারের নিরাপত্তা অনেক বেশী শক্তিশালী হবে।
ফোর-জি মোবাইল গ্রাহককে ভয়েস মেসেজ, ফ্যাক্স, মাল্টিমিডিয়া মেসেজ, অডিও ভিডিও রেকর্ডিং ইত্যাদির সুবিধাও প্রদান করবে।

দক্ষিণ এশিয়ায় ফোর জি প্রযুক্তি:
দক্ষিণ এশিয়ায় শ্রীলংকা সর্বপ্রথম ফোর জি প্রযুক্তি ব্যবহারে তাদের সফলতার ঘোষণা দেয়। শ্রীলংকার Telecom Mobitel এবং Dialog Axiata যথাক্রমে ৬মে ও ৭মে ২০১১ ইং তারিখে এই ঘোষণা প্রদান করে। এছাড়া ভারত আশা করছে ২০১২ এর ৩১ ডিসেম্বরের মাঝে তারা ফোর জি প্রযুক্তিতে প্রবেশ করতে সমর্থ হবে।

বাংলাদেশে:
প্রকৃতপক্ষে বাংলাদেশ এখনও টু-জি যুগেই রয়েছে। সরকারী সিদ্ধান্তহীতার কারনে আমাদের দেশে এখনও থ্রি জি প্রযুক্তিই চালু করা সম্ভব হয় নি। সেক্ষেত্রে অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশে ফোর জি মোবাইল চালু করা প্রায় দূরূহ একটি ব্যাপার হয়ে দাড়াবে।