Monday, December 31, 2012

Physiology Lecture

Power Point

The Study of Body Function
Chemical Composition of the Body
Cell Structure and Genetic Control
Enzymes and Energy
Cell Respiration and Metabolism
Interactions Between Cells and the Extracellular Environment
The Nervous System: Neurons and Synapses
The Central Nervous System
The Autonomic Nervous System
Sensory Physiology
Endocrine Glands: Secretion and Action of Hormones
Muscle: Mechanisms of Contraction and Neural Control
Heart and Circulation
Cardiac Output, Blood flow, and Blood Pressure
The Immune System
Respiratory Physiology
Physiology of the Kidneys
The Digestive System
Regulation of Metabolism
Reproduction


PDF

Chapter 1: Introduction to Physiology










Chapter 8: Neurons, Part 2
Chapter 10: Sensory Physiology, Part 1
Chapter 10: Sensory Physiology, Part 2
Chapter 11: Efferent Division
Chapter 12: Muscles
Chapter 13: Integrative Physiology (very short chapter)
Chapter 14: Cardiovascular Physiology, Part 1
Chapter 14: Cardiovascular Physiology, Part 2
Chapter 15: Blood Flow, Part 1
Chapter 15: Blood Flow, Part 2
Chapter 16: Blood
Chapter 17: Mechanics of Breathing
Chapter 18: Gas Exchange and Transport






সংসদীয় গণতন্ত্রের নামে ‘প্রধানমন্ত্রীর একনায়কত্ব’ নয় - প্রথম আলো


বাংলাদেশে আমরা এমন সংসদীয় সরকারব্যবস্থা প্রবর্তন করেছি, যার সঙ্গে অন্যান্য গণতান্ত্রিক দেশের তুলনা হয় না। সংসদীয় সরকারব্যবস্থায় প্রত্যেক মন্ত্রী স্বাধীনভাবে মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। খুব বড় মাপের কোনো সিদ্ধান্ত না হলে সাধারণত প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে ফাইল পাঠানো হয় না। কিন্তু বাংলাদেশে দুই বড় দলের দুই সরকারই প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন ছাড়া কোনো ছোট-বড় সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। সরকারের সব সমস্যার সমাধান যেন শেখ হাসিনা বা খালেদা জিয়ার হাতে। শেখ হাসিনা বা খালেদা জিয়ার মেঠো রাজনীতির অভিজ্ঞতা ছাড়া অন্য কোনো বিষয়ে কোনো বিশেষজ্ঞতা আছে বলে কেউ দাবি করেননি। দুজনই উত্তরাধিকারসূত্রে নেতা এবং পরে ভোটে জয়লাভ করে প্রধানমন্ত্রী। উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত নেতৃত্ব ও প্রতীকের জোরে নির্বাচিত হয়েই এই দুই নেত্রীকে তাঁদের দল ‘সব সমস্যার সমাধান’ হিসেবে দেখতে শুরু করেছে। এর ব্যতিক্রম কিছু কেউ করলে তাঁকে নেত্রীর প্রতি যথেষ্ট আনুগত্যের অভাব বলে বিবেচনা করা হয়। 
যাঁরা রাজনীতি করেন তাঁদের এক বিরাট অংশ স্বপ্ন দেখেন, একদিন এমপি ও মন্ত্রী হবেন। বলা বাহুল্য, সবার ভাগ্যে এই স্বপ্ন পূরণ হয় না। কিন্তু স্বপ্ন দেখতে দোষ কী! তাই বেশির ভাগ নেতা, পাতিনেতা বছরের পর বছর দলের প্রধানকে (দুই দলই) তুষ্ট করতে ব্যস্ত থাকেন। 
মন্ত্রী হওয়ার পরও তাঁরা নিজের জ্ঞান ও বুদ্ধি দিয়ে খুব বেশি সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না। ফাইল পাঠিয়ে দিতে হয় প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে। প্রধানমন্ত্রী তাঁর দপ্তরে কিছু বিশেষজ্ঞ বা অভিজ্ঞ আমলা রাখেন। অনুমান করি, প্রধানমন্ত্রী তাঁদের সঙ্গে পরামর্শ করে ফাইলে সিদ্ধান্তটি লিখে দেন। প্রধানমন্ত্রী কেন এত ব্যস্ততার মধ্যেও সব ফাইল দেখতে চান? কয়েকটি কারণ অনুমান করা যায়। ১) তিনি তাঁর মন্ত্রীদের দক্ষতার ওপর আস্থা রাখেন না। শুধু স্তাবক হিসেবে তাঁদের মন্ত্রী করা হয়েছে। ২) তিনি মন্ত্রীদের ওপর আস্থা রাখেন, তবু নিজে একবার বিষয়টি ঝালাই করে দেখে তারপর সিদ্ধান্ত নিতে চান, যাতে কোনো ভুলত্রুটি না থাকে। ৩) কোন খাতে কত টাকা ব্যয় হচ্ছে, কারা কাজ পাচ্ছে, এগুলো দেখাও একটা উদ্দেশ্য হতে পারে। 
তবে মন্ত্রণালয়ের অনেক সুপারিশ প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে গিয়ে আর আলোর মুখ দেখেনি, এমন নজিরও রয়েছে। 
ফাইল দেখা এবং সব ব্যাপারে সিদ্ধান্ত দিতে প্রধানমন্ত্রীর আগ্রহের কথা জানতে পেরে মন্ত্রীরা এখন আর নিজে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ঝুঁকি নেন না। কোনো সমস্যার সমাধান নিয়েও ভাবেন না। 
সরকার কয়েকজন উপদেষ্টা নিয়োগ দিয়ে কার্যত কয়েকজন মন্ত্রীর কাজে বা সিদ্ধান্ত গ্রহণে বড় ধরনের বাধা আরোপ করেছে। মন্ত্রীদের কাছে এই বার্তা স্পষ্ট যে ‘তুমি যা-ই করো না কেন, আসল পরামর্শ প্রধানমন্ত্রীকে দেবেন উপদেষ্টারাই।’ গত চার বছরে মন্ত্রী-উপদেষ্টা নানা বিরোধের কথা আমরা শুনেছি। 
এভাবে আমরা এমন একটি কৃত্রিম সংসদীয় পদ্ধতির সরকারব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত করেছি, যা দুজন নেত্রীকে এক অদু্ভত ধরনের কৃত্রিম ‘সুপার লিডার’ হিসেবে তৈরি করেছে। অথচ দুই দলের সরকারেই এমন অনেক মন্ত্রী রয়েছেন বা ছিলেন, যাঁরা খুবই পোড় খাওয়া রাজনীতিক বা অন্য কোনো পেশায় অভিজ্ঞ। 
বাংলাদেশে নব্বইয়ের পরও যে কোনো গণতান্ত্রিক সরকার সফল হতে পারেনি, তার অনেকগুলো কারণের মধ্যে এটাও একটা কারণ। ‘নেত্রী’ নির্ভরতা। 
আমাদের এই দূষিত রাজনৈতিক সংস্কৃতি বদলাবে কবে ও কীভাবে? নাকি আমরা এই ‘পদ্ধতি’ বহাল রাখতে চাই? নাকি এই দুই নেত্রীর পর যাঁরা নেতৃত্বে (ও প্রধানমন্ত্রিত্বে) আসবেন, তাঁদের সময় থেকে প্রকৃত সংসদীয় গণতন্ত্রের চর্চা করব। দুই নেত্রীর পর যদি তাঁদের উত্তরাধিকারীরা দলে বা সরকারের নেতৃত্বে আসেন, তাহলে কি বর্তমান রীতি পাল্টানো সম্ভব হবে? 
আমাদের আশঙ্কা, বড় দুই দলে যদি ভবিষ্যতে উত্তরাধিকারসূত্রে নেতৃত্ব (এবং প্রধানমন্ত্রিত্ব) কায়েম হয়, তাহলে পরিস্থিতির তেমন পরিবর্তন হবে না। কারণ, নতুন নেতৃত্ব আগের ভঙ্গিতেই দল ও সরকার পরিচালনা করতে চাইবেন। বড় দল দুটি তাদের মূল নেতার ক্যারিশমাকে ভাঙিয়ে রাজনীতি করে। ইতিমধ্যে দুই নেত্রীরও ইমেজ গড়ে উঠেছে। অনেক দিন দলের প্রধান থাকলে এবং প্রধানমন্ত্রিত্ব করলে দলে তো বটেই, দেশের মানুষের কাছেও একটা ভাবমূর্তি প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায়। ‘স্বৈরাচার’ বলে এরশাদকে যত সমালোচনা করা হোক না কেন, রাজনীতির মাঠে তাঁরও কিছুটা ইমেজ রয়েছে। 
বর্তমানে দুই নেত্রী প্রধানমন্ত্রীর পদটা যেভাবে ব্যবহার করছেন বা করেছেন, তাকে ‘সংসদীয় গণতন্ত্র’ বলা যায় না। এই পদ্ধতি অনেকটা ‘রাষ্ট্রপতি পদ্ধতির’ মতো। আমরা মুখে বলছি ‘সংসদীয় পদ্ধতি’ অথচ কাজে করছি ‘রাষ্ট্রপতি পদ্ধতি’। বড় দুই দলের প্রথম কাতারের নেতারাও দলপ্রধানের একনায়কতন্ত্র প্রায় বিনা প্রতিবাদে মেনে নিয়েছেন। যেহেতু দুই নেত্রীর ব্যক্তিগত ইচ্ছায় এমপি নমিনেশন, মন্ত্রিত্ব বা দলের হাইকমান্ডে স্থান পেতে হয়। 
বহুদিন যাবৎ রাজনৈতিক দলের সংস্কারের কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু নির্বাচন কমিশনের কিছু নির্দেশ (বিধি) ছাড়া রাজনৈতিক দলে কোনো সংস্কার হয়নি। প্রধান দুই দলের প্রধান ও দলে তাঁর ঘনিষ্ঠ চক্র কেউই সংস্কারে আগ্রহী নয়। উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত নেতৃত্ব যত দিন দলের মধ্যে থাকবে, তত দিন দলের ভেতরে কোনো তাৎপর্যময় সংস্কার করা সম্ভব হবে না। প্রথম কাতারের অন্তত ১০ জন নেতা ও জেলা পর্যায়ের কয়েকজন নেতা একসঙ্গে চাপ সৃষ্টি করলে হয়তো কোনো দিন সংস্কার সম্ভব হতে পারে। সেই সম্ভাবনা যদিও খুব ক্ষীণ। 
আমাদের সংবিধানেও ‘প্রধানমন্ত্রীকে’ (আপাতত দুই বড় দল যে পদ ভোগ করছে) অপরিসীম ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। ড. কামাল হোসেনরা ’৭২-৭৩ সালে যখন সংবিধান রচনা করেছিলেন, তখন ‘প্রধানমন্ত্রী’ পদে তাঁরা দেখেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। বঙ্গবন্ধুর চিন্তা মাথায় রেখে তাঁরা প্রধানমন্ত্রীকে যথেষ্ট ক্ষমতা দিয়েছিলেন। ‘প্রধানমন্ত্রী’ এখন যথেষ্ট ক্ষমতা ভোগ করছেন আইনানুগভাবেই। ১৫১ জন সংসদ সদস্যের সমর্থন পেলেই একজন এমপি রাষ্ট্রের ও সরকারের একচ্ছত্র অধিপতি হয়ে যেতে পারেন। মন্ত্রিসভা, মহিলা এমপি, আমলাতন্ত্র, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তে প্রভাব, বিচার বিভাগ, দলের নানা কমিটি, সরকারি নানা সংস্থার প্রধানকে নিয়োগ, বড় বড় ব্যবসার ঠিকাদারিতে প্রভাব, আত্মীয় তোষণ, রাষ্ট্রদূত নিয়োগ, নানা লোভনীয় ব্যবসার লাইসেন্স প্রদান, দল ও সরকারে স্তাবক পোষা, উপদেষ্টা নিয়োগ, একে ধরো, ওকে মারো, একে অবসর দাও, ওকে প্রমোশন দাও ইত্যাদি এক শ রকম সরকারি কাজে ‘প্রধানমন্ত্রী’ যা ইচ্ছা তা করতে পারেন। আমেরিকার প্রেসিডেন্টও তাঁর দেশে এত ক্ষমতাশালী নন। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট খুব কম ক্ষেত্রেই এককভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। 
আমাদের সংবিধানের এই দুর্বলতা দূর করবে কে? ক্ষমতাসীন দল? বিরোধী দল? জাতীয় সংসদের সরকারদলীয় সদস্যরা? মন্ত্রিসভা? সরকারি দলের এমপি ও বর্তমান বড় দুই দলের প্রথম কাতারের নেতাদের মুখের দিকে তাকিয়ে বলুন তো, এই উদ্যোগ নেওয়া তাঁদের পক্ষে সম্ভব কি না? 
অথচ এই দুর্বলতাগুলো আমাদের রাজনীতি ও গণতন্ত্রের পথে বড় বাধা। আমরা যে আজ একটি পিছিয়ে পড়া দেশ, তার জন্য আমাদের দুর্বল নেতৃত্বই দায়ী। কিন্তু দেশে জ্ঞানী, বিশেষজ্ঞ, অভিজ্ঞ ও মেধাবী লোকের অভাব নেই। এমনকি প্রবাসীদের মধ্যেও অনেক বিশেষজ্ঞ রয়েছেন। কিন্তু সরকারপ্রধান নিজ দল ছাড়া অন্য কারও বিশেষজ্ঞসহায়তা নিতে আগ্রহী হন না। আজ যদি দেশে প্রধানমন্ত্রীর একক কর্তৃত্বে বা শুধু দলীয় কর্তৃত্বে উন্নয়ন কর্মসূচি বা কৌশল গৃহীত না হতো, সম্ভাব্য সব মেধাবী ও বিশেষজ্ঞদের সম্পৃক্ত করা হতো, তাহলে দেশের অবস্থা আরও ভালো হতো। 
আমাদের সংসদীয় গণতন্ত্রের দুর্বলতাগুলো চিহ্নিত করে তার সমাধান নিয়ে জোরদার আলোচনা করা দরকার। দুঃখের বিষয়, সে রকম আলোচনা কমই হয়। সংসদীয় গণতন্ত্রে প্রত্যেক মন্ত্রীর যে ক্ষমতা ও স্বাধীনতা রয়েছে, তা প্রতিষ্ঠা করা দরকার। ‘মন্ত্রণালয়ের কাজে মন্ত্রীই শেষ কথা’—এই রীতি প্রতিষ্ঠা করতে হবে। দক্ষ ও অভিজ্ঞ এমপিদের মন্ত্রী করতে হবে। প্রকাশ্যে প্রধানমন্ত্রী, আর নেপথ্যে দলের হাই কমান্ড ‘মন্ত্রিসভা’ গঠন করার রীতি চালু করতে হবে। সংবিধান সংশোধন করে প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা কমাতে হবে। সেই সঙ্গে রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা বাড়াতে হবে। রাষ্ট্রপতি নিছক একজন হুকুমবরদার হতে পারেন না। দলের গঠনতন্ত্রে নানা পরিবর্তন আনতে হবে। ‘দলপ্রধান’ ও ‘সরকারপ্রধান’ কখনো এক ব্যক্তি হতে পারবেন না। কোনো নেতা দুবারের বেশি (পর পর বা বিরতি দিয়ে হলেও) প্রধানমন্ত্রী বা দলপ্রধান হতে পারবেন না। উপদেষ্টাদের অবস্থান মন্ত্রীর ওপরে হবে না। প্রধানমন্ত্রী বড় মাপের সিদ্ধান্তে মতামত দেবেন, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কাজে সমন্বয় ও বড় মাপের উন্নয়ন প্রকল্পগুলো মনিটরিং করবেন। মাধ্যমিক পরীক্ষার ফলাফল ঘোষণার মতো তুচ্ছ রুটিন কাজে শুধু প্রধানমন্ত্রী নয়, শিক্ষামন্ত্রীরও জড়িত হওয়া উচিত নয়। এটা বোর্ডের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব। বোর্ডের চেয়ারম্যানের কাজও আমরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে নিয়ে গেছি। ‘প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়’ বলে কোনো আলাদা ভবন থাকা উচিত নয়। সচিবালয়েই অন্য মন্ত্রীর মতো প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থাকবে। 
আমাদের রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও বিশেষজ্ঞরা ‘সংসদীয় গণতন্ত্রের বৈশিষ্ট্য’ নিয়ে আলোচনা করলে দুই দল কিছুটা শিখতে পারত। এগুলো আমাদের মূল ও বড় মাপের ত্রুটি। ছোট ত্রুটি দূর করার আগে বড় ত্রুটিগুলো সংশোধন করা দরকার। 
মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর: মিডিয়া ও উন্নয়নকর্মী।

জাতীয় রাজনীতির মঞ্চে সাপ!----দৈনিক ইত্তেফাক


জাতীয় রাজনীতির মঞ্চে সাপ!
চিররঞ্জন সরকার
আমাদের জাতীয় রাজনীতিতে আকস্মিকই সাপ নামের প্রাণীটি আলোচিত হয়ে উঠেছে। বছরের শেষে এসে প্রধান দুই নেত্রীর কাছে সাপ নামক প্রাণীটি বড় উপমা হিসেবে ধরা দিয়েছে। ২৬ ডিসেম্বর বিএনপি চেয়ারপার্সন ও বিরোধী দলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়া রাজধানীতে তার বিভিন্ন পথসভায় বলেছেন, 'সাপকে বিশ্বাস করা যায়, কিন্তু আওয়ামী লীগকে নয়। এর একদিন পরে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলনে খালেদা জিয়াকে উদ্দেশ করে বলেন, আওয়ামী লীগ নয়, বিএনপি নেত্রী সাপের ঝাঁপি মাথায় নিয়ে চলেছেন। তবে, বিরোধী দলীয় নেত্রী সাপের কথা বললেও ওঝার কথা বলেননি। এক্ষেত্রে একধাপ এগিয়ে আছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি দলের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে বলেন, সাপের বিষে অনেক সময় ওঝাও মারা যায়। বিরোধী দলীয় নেত্রী বিষধর সাপ নিয়ে চলেছেন। সাপের দংশনেই তিনি ধ্বংস হবেন। 

সংসদের উপনেতা সাজেদা চৌধুরী বলেছেন, 'খালেদা জিয়া সাপ চেনেন ভালো। কারণ জাতে জাত চিনে। আওয়ামী লীগ সাপ নয়। আমরা সাপ থেকে জাতিকে রক্ষা করেছি।' তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেছেন, খালেদা জিয়া মানুষকে বিশ্বাস না করে সাপের সঙ্গে বসবাসের ঘোষণা দিয়েছেন। যিনি সাপের সঙ্গে বসবাস করতে চান তিনি গণতন্ত্র ও রাজনীতির অনুপযুক্ত। এর আগে গত নভেম্বরে কক্সবাজারের বৌদ্ধপল্লী সফররত বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে 'সাপ হয়ে দংশনের পর ওঝা হয়ে ঝাড়ার' খেলা বন্ধ করতে বলেছিলেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। এর জবাবে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছিলেন, আওয়ামী লীগ দংশন করে জাতিকে নীল করে ফেলেছে। একই সঙ্গে 'ওঝা' ও 'সাপের' ভূমিকায় রয়েছে তারা । 

দেখা যাচ্ছে আমাদের প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের নেতানেত্রীরা একে অপরকে সাপের সঙ্গে তুলনা দিচ্ছেন এবং এর মাধ্যমে রাজনীতিতে সাপ এবং সাপের বিষ দুইয়েরই উত্পাত বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। 

অবশ্য আমাদের জাতীয় রাজনীতিতে একে-অপরকে সাপ হিসেবে চিহ্নিত করার এই প্রবণতা আকস্মিক নয়; নিরর্থক তো নয়ই। আমাদের রাজনীতি তো সাপের খেলাই বটে। এখানে সম্মিলিতভাবে এগিয়ে যাওয়ার আন্তরিক চেষ্টা যতটা না দেখা যায়, একে অপরকে মরণ কামড় দেয়ার প্রতিযোগিতা দেখা যায় তার চেয়ে বেশি। মরণ ছোবলে বংশ শুদ্ধ ধ্বংস করার আয়োজনও দেখা যায়। এর পরও এই সাপদের ক্ষয় নেই! 

অবশ্য আমাদের জীবনে সাপের প্রভাব অপরিসীম। আমাদের শিশুশিক্ষার শুরুই হয় অ-তে অজগরটি আসছে তেড়ে। আমরা গ্রাম বাংলায় এক সময় বাড়ির আনাচে-কানাচে সাপ দেখতাম, সাপের ভয়ে তটস্থ থাকতাম। এক-আধজনকে সাপে কাটেনি—এমন পরিবার তখন খুঁজে পাওয়া যেত না। তখন আমরা যেসব রূপকথার গল্প শুনতাম তার মধ্যে সাপ-ওঝার ব্যাপার থাকতোই। আর বাংলা সিনেমা মানেই তো ছিল নায়ক বা নায়িকার সাপের কামড়ে অজ্ঞান হওয়া, এরপর নায়ক বা নায়িকার চেষ্টায় বিষমুক্ত হওয়া, অতঃপর বিয়ে করে সুখে-শান্তিতে বসবাস করা। সাপের কাহিনী নিয়ে তৈরি বাজ্ঞারান কিংবা বেদের মেয়ে জোসনা আমাদের সিনেমা জগতে এখনও সুপারহিট।

সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কাছে মা মনসা হচ্ছেন সাপের দেবী, এই দেবীকে সবাই খুব সমীহ করে চলেন। আমরা চাঁদ সওদাগর নামে একজন ঘাড় ত্যাড়া বণিকের লোককাহিনী জানি যে মনসাকে মানেনি বলে অনেক মূল্য দিতে হয়েছে। আমরা হতভাগিনী বেহুলার কাহিনী শুনেছি যার স্বামী লক্ষীন্দরকে লোহার বাসরেও সাপে কেটেছিল। সেই সাপে কাটা স্বামীকে ভেলায় ভাসিয়ে বেহুলা তার স্বামীর জীবন ফিরে পাওয়ার অসম্ভব অভিযানে নেমেছিলেন। বিখ্যাত গণসঙ্গীত শিল্পী হেমাঙ্গ বিশ্বাস তার এক গানে 'আজি ভেলায় ভাসে বেহুলা বাংলারে' বলে তার ব্যাকুলতা প্রকাশ করেছিলেন। 

আমরা শৈশব-কৈশোরে লুডু নামের একটি অলস এবং ফালতু খেলা খেলতাম। এর মধ্যে একটি ছিল সাপ লুডু। উপরে উঠতে উঠতে হঠাত্-ই সাপের ফণার মুখে। তার পর সাপের শরীর বেয়ে নেমে যাওয়া। আবার উপরে উঠার চেষ্টা। তখন আনন্দ না পেলেও এখন মনে হয়, এই খেলাটা আমাদের জাতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রতীকী। সারাজীবন আমরা উপরে উঠার সাধনা করবো। কিন্তু সাপের মুখে পড়ে আবার নিচে নেমে যাব। এই প্রক্রিয়া যুগ যুগ ধরে চলছে তো চলছেই। 

আমরা কৈশোরে সুকুমার রায়ের একটি ছড়ায় এক অদ্ভুত সাপের বয়ান শুনেছিলাম, 'বাপুরাম সাপুড়ে/কোথা যাস বাপুরে/আয় বাবা দেখে যা/ দুটো সাপ রেখে যা/যেই সাপের চোখ নেই/শিং নেই...করে নাকো ফোঁস-ফাঁস মারে নাকো ঢুঁস-ঢাস...(আমাদের দেশের বুদ্ধিজীবীদের দিকে তাকিয়ে মহামহিম সুকুমার রায় এমন একটি আশ্চর্য সাপের ছবি এঁকেছিলেন কিনা কে জানে)!

আমাদের এক যৌবনদীপ্ত কবি রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ তার এক কবিতায় আকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত করে লিখেছিলেন, দেখা হলো যদি আমাদের দুর্দিনে/আমি চুম্বনে চাইবো না অমরতা/আমাদের প্রেম হোক বিষে জর্জর/ সর্পচূড়ায় আমরা তো বাঁধি বাসা। আমাদের নেতানেত্রীরা কবি রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহর মতো সবকিছুকে 'বিষে জর্জর' করার অভিযানে শামিল হয়েছেন বলেই মনে হচ্ছে। আমাদের সমাজে সুনীতি, সদাচার, সততা যেভাবে বিলুপ্তপ্রায় তেমনিভাবে সাপ এবং সাপ নিয়ে বিভিন্ন কাহিনী-কাব্যও বিলুপ্ত হতে বসেছে। এমন এক সন্ধিক্ষণে আমাদের নেতানেত্রীরা এই বিষধর প্রাণীটিকে সামনে তুলে আনার পেছনে নিশ্চয়ই গূঢ় কোনো উদ্দেশ্য রয়েছে! 

ছোটবেলায় আমরা কোনো কিছু না ভেবেই অ-তে অজগর আসছে তেড়ে পড়েছিলাম। পরবর্তী সময়ে মনে প্রশ্ন জেগেছে, অজগর শুধু শুধু কেন আসবে তেড়ে? সে কি আমাদের ভয় দেখানোর জন্য? যত সব ফালতু কথা। জীবনের শুরুতেই অজগরের তাড়া খেয়ে আমরা শিক্ষার পাঠ শুরু করেছি। এখন দেখছি সেই শিক্ষাও নিরর্থক ছিল না। পুরো জাতিকেই এখন তাড়া করছে অজগর। শুধু অজগরের কথাই বা বলি কেন, আরও অনেক অনেক বিষধর সাপ। এই সাপেরা রাজনীতির মঞ্চকে জঙ্গল বানিয়ে ফেলছেন। আর নিজেরা পরিণত হচ্ছেন ভয়ঙ্কর কালসাপে। তবে সাপ নিয়ে না খেলাই ভালো। সাপ কখনও কারো বন্ধু হয় না। এ প্রসঙ্গে স্মরণ করা যাক একটি প্রাচীন গল্প। দুই বন্ধু মিলে দেশ ভ্রমণে বের হলো। এদের একজন ছিল অন্ধ। হাঁটতে হাঁটতে ওরা এমন এক জায়গায় আসলো যেখানে রাতে খুব ঠাণ্ডা আর দিনে প্রচুর গরম। দুই বন্ধু এক গাছের নিচে ঘুমিয়ে পড়লো। সকালে যে বন্ধু চোখে দেখতে পায়, সে খাবারের খোঁজে বের হলো। অন্ধ বন্ধুটি আশপাশে যা আছে তা ছুঁয়ে ছুঁয়ে দেখতে লাগলো।

একটি সাপ বরফে জমে অবশ হয়ে এক পাশে মরার মত শুয়ে ছিল। অন্ধ বন্ধুটি সাপটিকে ধরে ভাবলো এটি একটি লাঠি। সে খুব খুশি হয়ে সেটা হাতে নিল, ভাবলো পথ চলতে এটা তার অনেক কাজে লাগবে। মৃতপ্রায় সাপকে হাতে নিয়ে সে নিজেকে খুব ভাগ্যবান মনে করলো।

অন্য বন্ধু খাবার নিয়ে ফিরে এসে সাপ দেখে ভয়ে চিত্কার করে উঠলো। বন্ধুকে বললো, তাড়াতাড়ি এটা হাত থেকে ফেলে দাও। অন্ধ বন্ধু কিছুতেই বিশ্বাস করলো না যে এটা লাঠি না; বরং সাপ।

সে ভাবলো তার কুড়িয়ে পাওয়া দামি লাঠি বন্ধু মনে হয় নিয়ে নিতে চাইছে। সে কিছুতেই বন্ধুর কথায় রাজি হলো না। তাই উপায় না দেখে দৃষ্টিমান বন্ধু আবারো অন্ধ বন্ধুকে সাথে নিয়ে পথ চলা শুরু করলো। দিনের বেলা রোদ উঠে তাপ বাড়তে লাগলো, সাপটি তার চেতনা ফিরে পেতে শুরু করলো। একটু পরে সে অন্ধ বন্ধুকে ছোবল দিল। বিষের যন্ত্রণায় ছটফট করতে করতে অন্ধ বন্ধুটি মারা গেল।

এই গল্প থেকে আমরা কী শিখলাম? শিখলাম, অন্ধরা সাপকে লাঠি মনে করে। তাদের সাবধান করে লাভ নেই। সাপের ছোবলে তাদের মৃত্যুটা যতটা সম্ভব দ্রুত এবং নির্বিঘ্ন হোক— এই কামনা করা ছাড়া আসলে কারোর কিছু করার নেই।

এক বিখ্যাত ব্যক্তি তাঁর এক অমর উপন্যাসে বলেছিলেন, কথার মধ্যে বিষ আছে। কথা কখনও ব্যর্থ হয় না। কথা কখনও ব্যর্থ হয় কিনা জানি না, তবে কথার মধ্যে যে বিষ আছে একথা মানতেই হবে। আমাদের দেশে সারাক্ষণই এই কথার বিষের চাষ হয়। কমবেশি সবাই প্রায় কথার বিষ উত্পাদনের চেষ্টায় সারাক্ষণ ব্যস্ত। কথার হুলে বিদ্ধ করার, কথা দিয়ে একে-ওকে-তাকে ঘায়েল করার বিদ্যা কমবেশি সবার মধ্যেই দেখা যায়। তবে আমাদের দেশে কথার বিষে জর্জরিত করার ক্ষমতা সম্ভবত রাজনীতিবিদদেরই বেশি। রাজনীতিবিদরা এমনিতেই উকিলদের মত বাকপটু হন এবং একটু বেশি কথা বলেন। বেশি কথা বলার কারণেই কিনা বিষাক্ত কথাও বেশি বলেন। এসব কথা শুনলে অনেক সময় মন খারাপ হয়ে যায়। সমস্ত শরীরটাই কেমন যেন বিষে জর্জর হয়ে যায়, মনটা বিষিয়ে উঠে। কেন বাবা, ভালো কাজ করার ক্ষমতা বা মুরদ বা ক্ষমতা তো আপনাদের নেই-ই, ভালো কথাটুকু পর্যন্ত বলতে পারেন না? আপনাদের কথা, কাজ, আচরণ—সবই যদি বিষাক্ত, বিরক্তিকর ও ক্ষতিকর হয়, তাহলে এর পরিণতি কী হবে তা একবারও ভেবে দেখেছেন? আপনারা যদি নিজেদের না পাল্টান, কথা-আচরণ-স্বভাব না বদলান, তাহলে ভবিষ্যতে কঠিন পরিণতির সম্মুখীন হতে পারেন। সাধারণ মানুষ বিরক্ত ও ক্ষুব্ধ হয়ে আপনাদের পেছনে লিখে দিতে পারে (যেমন ট্রাকের পেছনে লিখা থাকে), সাবধান, রাজনীতিবিদ! ১শ' গজ দূরে থাকুন!

পুনশ্চ: আমার এক বন্ধু রাজনীতিবিদদের সম্পর্কে বেশি ঘাঁটাঘাঁটি না করতে অনুরোধ করেছেন। তাদের নিয়ে বেশি ঘাঁটাঘাঁটি করলে অনেক অপ্রীতিকর তথ্য বের হয়ে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা ব্যক্ত করেছেন। এ প্রসঙ্গে বন্ধুবর আমাকে শুনিয়েছেন সেই পুরানো কৌতুকটি।

ছাত্র শিক্ষককে বলছেন, স্যার, আপনি সত্যিই, খুব চমত্কার পড়ান। এত ভালো পড়াতে আমি আর কাউকে দেখিনি। আব্বা সেদিন জিজ্ঞেস করলেন, তোমার স্যার কি পাস। আমি অনুমানেই বলে দিলাম, এমএ।

শিক্ষক: তা এক রকম এমএ-ও বলতে পার। আমি এমএ ক্লাসের ছাত্রদের অনায়াসে পড়াতে পারি। পড়িয়েছিও।

ছাত্র: আপনি তাহলে এমএ পাস করেননি? বিএ পাস বুঝি?

শিক্ষক: তা বিএ পাস করা এমন কি কঠিন ব্যাপার? সুযোগ পেলে আমি কি আর করতাম না? কলেজের প্রিন্সিপাল ব্যাটা অমন ব্যবহার না করলে কবে গ্রাজুয়েট হয়ে যেতাম। 

ছাত্র: সে কি বলছেন স্যার, আপনি মাত্র আইএ পাস?

শিক্ষক: তা আর হলো কই, ম্যাট্রিক পাস করিনি বলে আইএতে ভর্তিই নিল না! কলেজের যত্তসব অরাজক নীতি!

স্বৈরশাসকের হয়ে রাজনীতির মাঠে ফাউল খেলা --- দৈনিক ইত্তেফাক


স্বৈরশাসকের হয়ে রাজনীতির মাঠে ফাউল খেলা
ফারাজী আজমল হোসেন
'একটি শাসন ব্যবস্থা যদি গুটিকয়েক লোকের পরিবর্তে অনেক লোককে সুবিধা দেয় তার নাম গণতন্ত্র।'- ৪৬০ খৃষ্টপূর্বাব্দে গণতন্ত্রকে এভাবেই ব্যাখ্যা করতে চেয়েছেন এথেন্সের শাসক পেরিক্লেস। পেরিক্লেসকে সামনে রেখেই গরীব লোকেরা সেসময় এথেন্স-এর সরকারি অফিস দখল করেছিলো। এথেন্সবাসী প্রকৃতপক্ষে বাঁচার জায়গা খুঁজে পেয়েছিলো পেরিক্লেসকে পেয়ে। বলা হয়ে থাকে, এই পেরিক্লেসই সেসময়ে এথেন্সের সবচেয়ে চৌকষ গণতান্ত্রিক নেতা ছিলেন।

উপরের প্রসংগটি অবতারণা করার পেছনে বড় যুক্তি কি থাকতে পারে? বর্তমানে বিশ্বের অধিকাংশ দেশে গণতন্ত্রের যে জোয়ার বইছে সেসময় ৪৬০ খৃষ্টপূর্বাব্দের প্রসংগ টেনে আনা অবান্তর নয়কি? এইতো কিছুদিন আগে লিবিয়ায় যে ঘটনা ঘটে গেলো তা কি সেখানকার লৌহমানব গাদ্দাফী অনুমান করতে পেরেছিলেন? কি ছিলো না লিবিয়াবাসীর। বিনা খরচে পড়াশোনা, চিকিত্সা ব্যয়, পড়শোনা শেষে চাকরির নিশ্চয়তা, চাকরি দিতে না পারলে মাসিক ভাতা। সবই ছিলো। কিন্তু এত সুখও লিবিয়াবাসীর সইলো না। আরব বসন্তের জোয়ারে এক হ্যাঁচকায় পড়ে গেলেন সেই লৌহমানব গাদ্দাফী। লিবিয়াবাসীর মনে যে বিষয়টি সবসময় নাড়া দিয়েছিলো তা হলো এতটুকু গণতন্ত্র, কথা বলার সামান্য স্বাধীনতা। পরের পরিস্থিতি কি হয়েছে তা হয়তো সবার জানা। যে গণতন্ত্রের জন্য সারা বিশ্বের দেশগুলোর অগণিত সৈনিক লড়াই করছে, রক্ত দিচ্ছে, মৃত্যুকে আলিঙ্গন করছে সে গণতন্ত্রকে কিভাবে আমরা অবজ্ঞা করতে পারি?

আমাদের ৫৫ হাজার বর্গমাইলের এই ভূমি নিজেদের করে নিতে আমরা কম রক্ত ঝরাইনি। কত প্রাণ অকাতরে ঢেলে দিয়ে আমরা এই সুমিষ্ট শব্দ গণতন্ত্রকে নিজের করতে পেরেছি তা কারো অজানা নয়। এথেন্স এর মতো সেরকম অতীতে না গেলেও যদি ব্রিটিশ আমলকে মূল্যায়নে নিয়ে আসি তবে দেখা যাবে, সেই সূর্যসেন, ক্ষুদিরাম, প্রীতিলতাদের আত্মবলিদান আমাদের ব্রিটিশ শাসন থেকে মুক্তি দিয়েছে। এই উপমহাদেশের বাসিন্দাদের স্বাধীনতার স্বাদ দেখিয়েছিলেন কিন্তু রাজনীতিবিদরাই। হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বোস, মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ, মাওলানা ভাসানীসহ অনেক রাজনীতিবিদ ব্রিটিশের করতল থেকে এ উপমহাদেশকে মুক্ত করতে ঝুঁকি নিয়েছিলেন। ভারতীয়দের বাপু মহাত্মা গান্ধী তার অহিংস আন্দোলন দিয়ে সেই ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনকে এক ধাপ এগিয়ে দিয়েছিলেন। ১৯৭১ সালে 'একসাগর রক্তের বিনিময়ে' পাকিস্তানি শাসন থেকে পূর্ববাংলাকে আলাদা করতে হয়েছে আমাদের। পাকিস্তানের মিলিটারি জান্তা থেকে বাংলাকে মুক্ত করতে বাংলার মানুষকে ঝাঁপিয়ে পড়তে হয়েছিলো মুক্তিযুদ্ধে। অনেকে মনে করেন, পাকিস্তানের শাসন ক্ষমতায় অধিকাংশ সময় যদি বেসামরিক সরকার থাকতো তাহলে হয়তো বাংলার ওপর এত বৈষম্য থাকতো না। 

বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পরও যে এদেশে গণতন্ত্র মজবুত হয়েছে তা বলা যাবে না। বিভিন্ন সময়ে এদেশের শাসন ব্যবস্থায় জেঁকে বসা সামরিক শাসন কিংবা সামরিক সরকারের আদলে তথাকথিত গণতান্ত্রিক সরকার এদেশ শাসন করেছে। দীর্ঘ সময়ে স্বৈরতন্ত্র চেপে থাকার কারণে আমাদের অনেকের মানসিকতায়ও কিছুটা বিকৃতি ঘটেছে বলে মনে হয়। যে বিশ্বে গণতন্ত্রই শেষ কথা সেখানে বিশ্ব পরিষদের একজন সদস্য হিসেবে গণতন্ত্রকেও আমরা কেউ কেউ অবজ্ঞা করতে শিখেছি। হরহামেশা গণতন্ত্রের সাথে স্বৈরতন্ত্রকে গুলিয়ে ফেলছি। বলা হচ্ছে- সামরিক শাসকের চেয়ে গণতান্ত্রিক নেতারা খারাপ। হঠাত্ করে এ ধরনের কথার যারা অবতারণা করছেন তাদের উদ্দেশ্য কি- সে বিষয়ে আমরা হয়তো বিস্তারিত জানি না। কিন্তু জাতিকে যে বিষয়টি পীড়া দিচ্ছে তা হলো- গুটিকয়েক সুবিধাভোগী সমাজব্যবস্থার প্রশংসা করে দেয়া নানা বক্তৃতা। গত কয়েকদিন ধরে এ ধরনের বক্তব্য দেয়ার পেছনে নিশ্চয়ই উদ্দেশ্য আছে। 

বাংলাদেশের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, যখনই কোন সামরিক সরকার ক্ষমতায় এসেছে তারা বিভিন্ন খাত থেকে দক্ষ কিছু লোক নিয়ে সরকার চালিয়েছে। এদের প্রধান যোগ্যতা হলো বিদেশ থেকে লেখাপড়া করে দেশে ফিরে আসা। টাই-এর নটটা যুত্সইভাবে বাঁধতে শেখা। সামরিক এবং বেসামরিক সরকারের মধ্যে পার্থক্যটা তাদের কাছে স্পষ্ট হলেও তারা তা বলতে চান না। 

সাম্প্রতিককালে দেশের বর্তমান ও সাবেক প্রধানমন্ত্রীর সাথে সাবেক স্বৈরশাসক এইচ এম এরশাদের তুলনা করে একজন বিদগ্ধ শিক্ষক যে বক্তব্য দিয়েছেন তাতে আমাদের সমাজের সুবিধাবাদী শ্রেণীর চরিত্র স্পষ্ট হয়ে ধরা দিয়েছে। একটি সেমিনারে এমন বক্তব্য দেয়ার পর চারিদিকে সমালোচনার ঝড় উঠলে ওই শিক্ষক আত্মপক্ষ সমর্থন করতে মাঠে নেমেছেন। তিনি এখনো বলছেন, তার বক্তব্য ঠিক। বিভিন্ন গণমাধ্যমে তার নিবন্ধ ছাপা হচ্ছে-কেন হাসিনা এবং খালেদার চাইতে এরশাদ ভালো? একজন পতিত স্বৈরাচারের সাথে গণতান্ত্রিক দুটি শীর্ষ দলের নেত্রীকে মিলিয়ে দেখা কতটুকু যুক্তিযুক্ত তা দেশবাসী গভীরভাবে বিবেচনা করবে। তবে একথা বলা যায় যে, সোনা এবং পিতল, রুপা এবং লোহায় যেমন মিলে না, তেল এবং পানি যেমন মিশে না তেমনি স্বৈরতন্ত্র এবং গণতন্ত্রের মধ্যে তুলনা কিভাবে চলে? গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার অনেক দুর্বলতা থাকতে পারে, যারা গণতান্ত্রিক আন্দোলন করেন তারা ভালো প্রশাসক না হতে পারেন, কিন্তু তাই বলে স্বৈরশাসকের সাথে দুজন গণতান্ত্রিক নেত্রীর তুলনা একটি সভ্যসমাজে কিভাবে আসতে পারে?

বাংলাদেশের গত কয়েক বছরের অবস্থা পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে নানা প্রতিকূলতাকে সামনে রেখে দেশটি এগিয়ে যাচ্ছে। আমাদের অনেক দুর্বলতা আছে। কিন্তু এর মধ্যে যে সফলতাগুলো আছে তাকে খাটো করে দেখার সাহস আমাদের কিভাবে আসে? গত কয়েকটি সাধারণ নির্বাচনে মানুষ যে হারে ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছে তা পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। এমনকি শক্তিশালী গণতন্ত্রের দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও এ হারে ভোট পড়েনি গত নির্বাচনে। এখানে একেবারে স্থানীয় সরকারের দোরগোড়া থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ সংসদ সদস্য নির্বাচনেও মানুষ ভোটের দিনকে উত্সব মনে করে। নিজেদের কাজকর্ম বাদ দিয়ে প্রতিনিধি নির্বাচন করে নিজের পছন্দে। নির্বাচন ব্যবস্থায় নানা ত্রুটি-বিচ্যুতির পরও বর্তমান সরকারের আমলে অনুষ্ঠিত ৪৯ হাজারেরও বেশি স্থানীয় সরকার প্রতিনিধি নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে। অন্তত এ নির্বাচন নিয়ে কোন পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়নি। এখানে ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য, চেয়ারম্যান, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, মেয়র রয়েছেন। যে এলাকার আড়াই হাজার লোক তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করে একজনকে ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য নির্বাচন করেছেন সেই সদস্যকে অপমান করার মানেই হচ্ছে আড়াই হাজার ভোটারকে অপমান করা। 

অনেকে বলে থাকেন অমুক স্বৈরশাসক ভালো ছিলেন। অমুক স্বৈরশাসকের চেয়ে অমুক নেতানেত্রী ভালো নয়। তারা এটা কিসের বিচারে বলেন তা অনেকের কাছে বোধগম্য হয় না। কারণ যারা বলেন তারা কোন পরিসংখ্যানও দেন না, আবার শেষ পর্যন্ত তাদের কথাও ধরে রাখতে পারেন না। বলা যেতে পারে রাজনীতিকরা মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য সংগ্রাম করলেও প্রশাসন চালানোর ক্ষেত্রে তারা দুর্বল। এটা মেনে নেয়া যেতে পারে। কিন্তু যে পরিবর্তন বাংলাদেশের অর্থনীতি এবং সামাজিক খাতে হয়েছে তা কারো অস্বীকার করার উপায় নেই। কাথায় বিপ্লব হয়নি বাংলাদেশের। শিল্প, কৃষি, যোগাযোগ, নদী, অবকাঠামো, ব্যক্তিআয়, দক্ষ জনশক্তি সবদিক দিয়ে এগিয়ে গেছে বাংলাদেশ। এইতো ১৯৭১ সালে দেশ স্বাধীন হবার পর বাংলাদেশের বাজেট ছিলো মাত্র ৫০১ কোটি টাকা। এর মধ্যে আবার বিদেশ থেকে ধার করতে হয়েছিলো ৩৭৫ কোটি টাকা। সে বাজেট ক্রমাগতভাবে বেড়ে চলতি অর্থবছরে এক লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকায় ঠেকেছে। আমাদের ১৯ বিলিয়ন ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি আয়, বিশাল মধ্যবিত্ত শ্রেণী, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা সব মিলিয়ে বাংলাদেশকে ঊঁচু জায়গায় দেখছে বিশ্ববাসী। সে বিচারে বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থাকে খাটো করে দেখার দুঃসাহসের মধ্যে হয়তো অন্যকিছু লুকিয়ে থাকতে পারে। 

তর্কের খাতিরে অনেক কথা বলা যায়। স্বৈরশাসকরা ক্ষমতায় থাকতে কিছু দৃষ্টিনন্দন কাজ করতে পারেন। কেননা তারা কাজ করেন গুটিকয়েক লোকের স্বার্থে এবং তাদের বিদেশি মনিবদের খুশি করার জন্য। কিন্তু নির্বাচিত নেতাদের কাজ করতে হয় দেশের মানুষের বৃহত্তর স্বার্থে। কেননা নির্বাচন প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকলে তাদেরকে জনগণ তথা ভোটারদের কাছে ফিরে যেতে হয়। এখানে আরো একটি বিষয় উল্লেখযোগ্য যে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর দেড়শটিরও বেশি দেশ স্বাধীন হয়েছে। বিদেশি শাসন শোষণের কারণে এসব দেশ গরীব এবং পশ্চাদপদ। সীমিত সম্পদ দিয়ে বৃহত্তর জনগোষ্ঠীকে সন্তুষ্ট রেখে একটি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা চালু রাখা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। এরপরও বাংলাদেশের চার দশকের ইতিহাসে যে অর্থনৈতিক সংস্কার এবং বৃহত্ আকারের প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে তা নির্বাচিত রাজনীতিবিদদেরই অবদান। আমাদের সবার মনে রাখা দরকার, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ত্রুটিমুক্ত নয়। কিন্তু এর ব্যত্যয় যেসব ব্যবস্থার কথা স্যুট-টাই ও খদ্দরের পাজামা-পাঞ্জাবি পরা ব্যক্তিরা বলে থাকেন তারা কোনদিন ভেবেছেন যে, তাদের চেয়ে গুণী ও অভিজ্ঞ ব্যক্তিরাও দেশ পরিচালনা করেছেন। পাকিস্তান আমলে আইয়ুব খান, ইয়াহিয়া খান, টিক্কা খান এমনকি বাংলাদেশ হবার পরও অনেকে এরকম স্যুট-টাই পরে দেশ পরিচালনা করেছেন। তাদের পতনের পর দেশের সর্বক্ষেত্রে যে নৈরাজ্য হয়েছে তার সাক্ষী হয়ে আছেন অনেকে। এ সব ব্যক্তি যে ব্যবস্থার কথা বলেন বা প্রকারান্তরে যে ব্যবস্থা সমর্থন করতে চান, তারা যে দু-একটি চোখ ধাঁধানো কার্যকলাপ করেন না তাও সত্য নয়। কিন্তু তাদের পতনের পর তার মূল্য দেশের মানুষকে দিতে হয়। তাই নির্বাচনী ব্যবস্থা বা নির্বাচিত প্রতিনিধির কোন বিকল্প আজো বের হয়নি। 

এ লেখা শেষ করা যাক একটি গল্প দিয়ে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার পর একজন সাংবাদিককে বলেছিলেন, 'বুদ্ধিজীবীরা আমার বিরুদ্ধে কি লিখবে? আমি একটি দেশ এনে দিয়েছি। দেশের মানুষের জন্য আলাদা পরিচয়ের পাসপোর্ট দিয়েছি। আমার বিরুদ্ধে হয়তো বুদ্ধিজীবীরা লিখবে আমি ভালো প্রশাসক নই। এটা তারা লিখুক।'

এই গল্প এই কারণে যে, স্বৈরাচার আর গণতান্ত্রিক সরকারের মধ্যে সুস্পষ্ট পার্থক্য সবারই জানা আছে। যাদের জানা নেই তাদেরকে আবার স্মরণ করিয়ে দেয়া যেতে পারে। রাজনীতিকদের পেছনে থাকে জনগণ। জনগণ ছাড়া তারা একেবারে অচল। আর স্বৈরাচারী সরকারের কাছে জনগণের প্রয়োজন হয় না। কারণ তাদের হয়ে গুটিকয়েক খেলোয়াড় মাঠে ফাউল খেলে।

অভিনব ঘটনাই বটে!---দৈনিক ইত্তেফাক


অভিনব ঘটনাই বটে!
বাংলাদেশে নিত্যদিনই কোন না কোন অভিনব ঘটনা ঘটে! এ সকল অভিনব ঘটনা যদি কালে-ভদ্রে ঘটিত তাহা হইলেও লোকেরা মনকে খানিক প্রবোধ দিতে পারিত। কিন্তু এখানে ঘটনার অভিনবত্ব এমনই যে, উহা সংশ্লিষ্ট মহলকে বিচলিত না করিয়া পারে না। গত শনিবার এমনই একটি ঘটনার কথা প্রকাশিত হইয়াছে স্থানীয় একটি দৈনিকে। ঘটনার বিবরণে প্রকাশ, প্রভাবশালী ব্যক্তিরা পাবনার ফরিদপুরে সরকার কর্তৃক অনুমোদনপ্রাপ্ত একটি বেসরকারি বিদ্যালয় অবৈধভাবে দখল করিয়া লইয়াছে। শুধু দখল করিয়াই তাহারা ক্ষান্ত হয় নাই; বিদ্যালয়টিকে বন্ধ করিয়া দিয়া উহাকে গরুর গোয়ালে পরিণত করিয়াছে। অর্থাত্, রাতের আঁধারে বিদ্যালয়টি দখলের পর উন্নত জাতের এক ডজন গরু সেখানে বাঁধিয়া রাখিয়াছে। বিদ্যায়তনকে গরুর গোয়ালে পরিণত করিবার ঘটনা সম্ভবত: বিশ্বে ইহাই প্রথম। সুতরাং, এ জাতীয় অভিনবত্বের যাহারা প্রতিষ্ঠাতা, প্রণেতা বা উদ্যোক্তা তাহাদের নাম গিনিজ বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে স্থান পাইলে আশ্চর্যান্বিত হওয়ার কিছু থাকিবে না নিশ্চয়ই! ২০০৯ সালে সংশ্লিষ্ট এলাকার তিনজন উদ্যমী যুবক জমির মালিকের নিকট হইতে ২০ শতক জমি ভাড়া লইয়া যে বিদ্যালয়ের জন্ম দিয়াছিল উহা তাহাদের নিষ্ঠা ও একাগ্রতায় অল্পদিনে অত্যন্ত সুনাম অর্জনে সমর্থ হয়। দশজন শিক্ষকের নেতৃত্বে প্রায় তিনশত ছাত্র-ছাত্রী ঐ বিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত। এই সব শিক্ষার্থীর ভবিষ্যত্ সম্পর্কে সামান্যতম উত্কণ্ঠা বা চিন্তা-ভাবনা থাকিলে এ ধরনের বিবেকহীন কান্ড জমির মালিকেরা নিশ্চয়ই করিতে পারিতো না। কোথায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আর কোথায় গরুর গোয়াল! মানুষ্য তৈরির পথ পরিহার করিয়া গরু তৈরির এই উদ্ভট পন্থা বিবেকসম্পন্ন মানুষ মাত্রকেই ক্ষুব্ধ না করিয়া পারিবে না। তাই তাহাদের এই আচরণে সংশ্লিষ্ট এলাকায় ক্ষোভ দেখা দিয়াছে বৈকি!

অবশ্য, জমিজিরাত লইয়া নানাবিধ কাড়াকাড়ি-মারামারি আমাদের সমাজেতো লাগিয়াই রহিয়াছে। একের জমি বাহুবলে জবরদখল করিবার এক উদ্বেগজনক সংস্কৃতি চালু হইয়াছে এই দেশে। এ ক্ষেত্রে সরকারি জমি হইলেতো কোন কথাই নাই। খাস জমি অবৈধ উপায়ে দখল কিংবা জাল কাগজপত্র বা দলিলপত্র তৈরি করিয়া জমি বেদখলের মোচ্ছব চলিতে দেখা যায় তাই বিভিন্ন স্থানে। এই ধরনের হীন দুষ্কর্মে সরকারিভাবে দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের নানাবিধ ইন্ধনের কথা সকলেরই জানা। রক্ষকই অনেকাংশে ভক্ষক সাজিয়া সরকারি-বেসরকারি জমি বা দালান-কোঠা আত্মসাত্ করিতেছে। ফলে মানুষের ভোগান্তির সীমা-পরিসীমা থাকিতেছে না। জমি বা ফসলকে কেন্দ্র করিয়া খুনাখুনি, উত্খাত বা বাস্তচ্যুতি, হামলা-মামলা লাগিয়াই রহিয়াছে এই দেশে।

এমতাবস্থায়, এই ধরনের অপকর্ম রোধ করিতে দেশে আইন থাকিলেও কর্তার ইচ্ছায় উহার প্রয়োগ দুঃসাধ্য হইয়া পড়ে। জমি আত্মসাত্কারীরা ছলে-বলে-কলে-কৌশলে তাহাদের কর্তৃত্ব শুধু বজায়ই রাখে না বরং পর্যায়ক্রমে এলাকায় দোর্দন্ড প্রতাপে সকলকে রক্তচক্ষু দেখাইবার লাইসেন্সও যেন লাভ করে। যুগে যুগে এই অবস্থাই চলিতেছে। সরকারি জমি বরাদ্দে নানা প্রকার অসাধুতা, বৈধ জমির অধিকার লাভ করিতে গিয়া সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হাতে নানাভাবে লাঞ্ছিত-অপমানিত হওয়ার ঘটনা ইত্যাদি বিভিন্ন প্রকার দুর্ভোগ ডাকিয়া আনিতেছে। ইহার প্রতিকার প্রয়োজন। আইনের কঠোর প্রয়োগ ভিন্ন এই জাতীয় দুষ্কৃতির প্রতিবিধান অসম্ভব। মানুষের লোভ-লালসা যেহেতু সুযোগ পাইলেই সকল সীমা ছাড়াইয়া যায় সেহেতু অংকুরেই ইহার বিনাশ করিতে না পারিলে জমি আত্মসাত্ বা জবর-দখলের ঘটনা ভয়াবহ রূপ লইবে নিশ্চয়ই। আজ স্কুলঘরকে গোয়াল বানানো হইতেছে। আগামীতে তাই বিশ্ববিদ্যালয় গোচারণভূমি বা ভাগাড়ে পরিণত হওয়া বিচিত্র নহে! সুতরাং, সাধু সাবধান!

Friday, December 14, 2012

জলবায়ু সম্মেলন(দোহা): আমাদের প্রাপ্তি ও প্রত্যাশা


পরিবেশ নিয়ে বর্তমান বিশ্বের প্রায় সব দেশের নেতা ও জনগন বেশ চিন্তিত ও সচেতন । এ সচেতনতার আরম্ভ ১৯৯২ সালের রিও সম্মেলন থেকে শুরু এর পর থেকে সারা বিশ্বে গড়ে উঠেছে অনেক পরিবেশ বাদী সংগঠন ও জোট ।অবশ্যই গ্রীণ পিস আরো আগের সংগঠন । এর পর এক এক করে হয়ে গেলো অনেক সম্মেলন , হয়ে গেলো টেকসই সম্মেলন। ১৯৯৭ সালে পরিবেশ রক্ষার জন্য নেওয়া হয়েছিলো সবচেয়ে বড় পদক্ষেপ টি । জাপানের কিয়োটা চুক্তি সেই পদক্ষেপ যা সে সময় থেকে এখন অব্দি স্বাক্ষর করেছে ১৭৪ টি দেশ আর তা কার্যকর করার জন্য দরকার ছিলো ১৪৪ টি দেশের অনুমোদনের কিন্তু আজো তা হয়ে উঠেনি । অথচ এর মেয়াদ আছে আর মাত্র কয়েক মাস । যাদের কারণে আজ আমাদের পরিবেশ নিয়ে এত উৎকণ্ঠা এত টেনশন তারাই মূলত বাস্তবায়ন করতে দিচ্ছেনা এই কার্বন কমানোর চুক্তি । ভারত , চীন এতে স্বাক্ষর করেনি আর যুক্তরাষ্ট্র করেও তা ২০০৫ সালে প্রত্যাহার করে নেয়। এই সব কথা আমাদের সকলের কম বেশী জানা । আর এর মাধ্যমে আমরা একটি বিষয় পরিষ্কার আজ যে সব ধনী দেশ এর কারণে আমাদের কোটি কোটি লোক বাস্তুহারা হওয়ার পথে, আমরা ঝুঁকির তালিকায় এক নম্বরে, সেই দেশ গুলোর কোন মাথা ব্যাথা নেই আমাদেরকে নিয়ে। ২৬ নভেম্বর থেকে শুরু হয়েছে কোপ- ১৮ জলবায়ু সম্মেলন, কাতারের দোহায়। আর প্রত্যেকটি সম্মেলনে বাংলাদেশ থাকে প্রায় নেতৃত্ব স্হানে । কিন্তু এ থেকে আমাদের প্রাপ্তি কতটুকু ? গত বছর ডারবানে cop – 17 হয়েছিলো আর এ থেকে আমরার কি পেলাম তার একটা হিসাব দেখে নিই —— ধনী দেশ গুলো কোন অবস্থাতেই কোন সমঝোতায় আসতে পারেনি , কারণ তারা কোন ছাড় দিতে রাজী নয় , শেষ মেষ সম্মেলনের মেয়াদ এক দিন বাড়িয়ে আরো আলোচনার পর তারা কিছু সমঝোতায় আসে। সেগুলো হলো ১।২০১৫ সালের মধ্যে নতুন চুক্তি, এই চুক্তি নিয়ে ২০১৩ সালের মধ্যে আলোচনা শুরু হবে, অনুমোদিত হবে ২০১৫ সালের মেষ নাগাদ ।
২। ২০২০ সালের মধ্যে চুক্তিটি বাস্তবায়ন করা হবে ।
৩। কিয়োটা প্রটোকলের মেয়াদ ৫ বছর বৃদ্বি
৪। ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর জন্য ২০২০ সালের মধ্যে ১০০ বিলিয়ন ডলারের gcf fund গঠন ।
এবারই প্রথম চীন, ভারত, ব্রাজিল সহ বিশ্বের বড় co2 নি:সরণ কারী দেশহগুলোকে একত্রিত করা সম্ভব হয়েছে ।
প্রাপ্তি ১০০ বিলিয়ন ডলারের মধ্যে মাত্র ৩ মিলিয়ন ডলার জমা পড়েছে । আর বাকী গুলোর কোন খবর নেই । এ থেকেই বুঝা যায় এ ব্যাপারে ধনী দেশগুলো আন্তরিকতা।
এবারের সম্মেলনে ২০০টি দেশের প্রায় ৭০০০ প্রতিনিধি ও সাংবাদিক অংশগ্রহন করেছে । এখন কথা হচ্ছে এ থেকে আমরা কি পাবো ? আর আমাদের করণীয় কি হতে পারে? ক্ষতিগ্রস্থ দেশগুলোকে একত্রিত হয়ে জোটবদ্ধ ভাবে কাজ করতে হবে, ধনী দেশগুলোকে একত্রিত হয়ে চাপ দিতে হবে । এ জন্য আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কে আরো বেশী অগ্রণী ভুমিকা পালন করতে হবে। আমাদের দেশের জলবায়ু জনিত ক্ষয়ক্ষতি বিষয়ে ধনী দেশ গুলোকে ভালো ভাবে অবহিত করতে হবে এবং কূটনৈতিক তৎপরতা আরো বাড়াতে হবে ।ধনী দেশগুলোর উপর বিভিন্ন সংস্কার মাধ্যমে চাপ বাড়াতে হবে ।এ ছাড় আমাদের কে একক ভাবে বিভিন্ন দেশের নেতাদের সাথে বৈঠকে মিলিত হতে হবে । আমাদের কার্বন ডিপ্লোমেসি নিয়ে ধনী দেশগুলোকে আরো অবগত করতে হবে । আমাদের সুন্দর বনের যে carbon শোষণের যে ক্ষমতা রয়েছে এবং যে অপার সম্ভাবনা রয়েছে তা তাঁদের জানাতে হবে । এবং আমরা টাকার বিনিময়ে সুন্দর বনের মাধ্যমে তাঁদের গ্যাস শোষণে যে আগ্রহী তা শক্তি শালী কূটনৈতিক তৎপরতার মাধ্যমে জানাতে হবে । এবং একাজে আমাদের এই সম্ভাবনা কে ব্যবহার করতে হবে । আমাদের প্রত্যাশা বলে কিছুই থাকেনা যখন আমরা বিগত সম্মেলন এর চিত্র দেখি । তাঁর পারও আমরা এক বুক আমায় বুক বাঁধি । আমরা চাই সব দেশ কিয়োটা প্রক্টোরদের মেয়াদ বাড়াতে রাজী হবে এবং তার অনুমোদন দিবে। এবং কার্বন নি:সরণ কমাতে একমত হবে । ফান্ড গঠনে ধনী দেশগুলো এরা উদ্যোগী হবে । এবং এ ফান্ড ছাড়ের বিষয়ে একমত হবে । নতুন পৃথিবী গড়ার লক্ষে সবাই নতুন একটি চুক্তি নই ও বাস্তবায়নে একমত হবে । জলবায়ু উদ্বাস্তুদের আশ্রয়ের জন্য একটি নীতি মালা করা হবে। এবং ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোকে ধনী দেশ গুলো যাবতীয় কৃষি বিষয়ক সহায়তা দিতে রাজী হবে । এ সম্মেলন নিয়ে আমাদের প্রত্যাশা অনেক ,কিন্তু আমরা কতটুকু পাব তা নির্ভর করছে ক্ষতিগ্রস্থ দেশগুলোর প্রচেষ্টার উপর । তাই এ ব্যাপারে আমাদের সরকার কে সচেষ্ট থাকতে হবে ।