Thursday, September 27, 2012

The Daily Ittefaq | প্রকৃত কল্যাণরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় এগোচ্ছে এশিয়া | News




লেখক: প্রীতিকাব্য  |  বৃহস্পতিবার, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১২, ১২ আশ্বিন ১৪১৯
পশ্চিমাদের কাছ থেকেকল্যাণরাষ্ট্র ধারণা ধার করেছে এশিয়া তবে পশ্চিমারা কল্যাণরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে অগ্রজ হলেও অনুজ হিসেবে এশিয়া ক্ষেত্রে বেশি কার্যকর ভূমিকা রাখছে পশ্চিমা দেশগুলোতে কাগজে-কলমে কল্যাণরাষ্ট্রের সব সুবিধার কথা উল্লেখ রয়েছে বাস্তবে তা নামমাত্র চলছে তবে এশিয়ার যেসব দেশ ব্যবস্থা নিয়েছে তারা নামে নয়, কাজেই সে সব সুবিধা দিতে শুরু করেছে তাদের নাগরিকদের অঞ্চলেই প্রকৃত কল্যাণরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হবেএমনটাই আশা করছেন বিশেষজ্ঞরা
এশিয়ায় সাম্প্রতিক সময়ে অর্থনৈতিক উন্নয়নের জোয়ার সৃষ্টি হয়েছে অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে বর্তমানে এখানকার অর্থনীতির অবস্থা অনেক বেশি ভালো তাই বিভিন্ন দেশ তার নাগরিকদের কল্যাণরাষ্ট্রের যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে কাজ করতে গিয়ে তারা যাতে পা পিছলে না পড়ে, সে জন্য পশ্চিমাদের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে কাজে নেমেছে অঞ্চলের মানুষ আর্থিক দৈন্য-দশা কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হয়েছে নাগরিকদের আর্থিক অবস্থার উন্নয়ন মানে একটি দেশের অর্থনীতির অবস্থা ভালো অবস্থানে পৌঁছানো যখন কোনো দেশ অথনৈতিক দিক দিয়ে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়, তখন সরকারের কাছে নাগরিক সুযোগ-সুবিধা চাইতেই পারে দেশটির জনগণ কারণে এশিয়ায় দিন দিন অবসরভাতা, জাতীয় স্বাস্থ্য-বীমা, বেকারভাতা, সামাজিক নিরাপত্তাসহ নানা নাগরিক-সুবিধার চাহিদা বাড়ছে মূলত কল্যাণরাষ্ট্রের নাগরিকরা ধরনের সুবিধাদি পেয়ে থাকে সরকারের কাছ থেকে ফলে অঞ্চলের গতিশীল অর্থনীতির দেশগুলো সম্পদ গড়ার সঙ্গে সঙ্গে কল্যাণরাষ্ট্র গড়ার দিকেও মনোযোগ দিচ্ছে
গতবছর ইন্দোনেশিয়া সরকার অঙ্গীকার করেছে২০১৪ সাল থেকে নাগরিকদের জন্য স্বাস্থ্য-বীমা চালু করবে, যা দেশের স্বাস্থ্যসেবা খাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে গত দুই বছরে চীন তাদের অবসরভাতার আওতায় গ্রামীণ এলাকার ২৪ কোটি লোককে অন্তর্ভুক্ত করেছে, সংখ্যা যুক্তরাষ্ট্রের সামাজিক নিরাপত্তা অবসরভাতা কার্যক্রমের আওতায় থাকা মানুষের চেয়ে বেশি অথচ কয়েক বছর আগেও চীনের গ্রামীণ এলাকায় ৮০ শতাংশ মানুষের কোনো স্বাস্থ্য-বীমা ছিল না ভারত সরকার দেশটির প্রায় চার কোটি পরিবারকে বছরে অন্তত ১০০ দিন কাজের ব্যবস্থা করে দেবে ন্যূনতম///// বেতনে এবং ১১ কোটি দরিদ্র মানুষকে নতুন করে স্বাস্থ্য-বীমার অর্ন্তভুক্ত করেছে তারা এই সংখ্যা আমেরিকায় বীমার বাইরে থাকা মানুষের দ্বিগুণ
ধনী দেশগুলো যেখানে বাজেটের ঘাটতি দূর করতে ব্যর্থ হচ্ছে, সেখানে এশিয়ার দেশগুলোর অর্থনীতি এগিয়ে যাচ্ছে বীরদর্পে ক্ষেত্রে কী কী কাজ এড়িয়ে চলা উচিত, সে শিক্ষা এশিয়া নিয়েছে ইতিহাস থেকে মূলতমৌলিক নিরাপত্তার চাহিদা পূরণধারণা থেকে ইউরোপে কল্যাণরাষ্ট্রের যাত্রা শুরু হয়েছিল কিন্তু সময়ের আবর্তে এটা তাদের জন্যবোঝাবাফ্যাশনঅনুসঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়েছে যুদ্ধ আর হতাশার কারণে ইউরোপীয় সমাজের মধ্যে সম্পদের পুনর্বণ্টন করা হয়েছে এমন অবস্থায়ও এক শ্রেণীর লোক রাষ্ট্রের বাড়তি সুবিধা ভোগ করছে ফলে রাষ্ট্রের পক্ষে ব্যয় বহন করা কঠিন হয়ে গেছে যুক্তরাষ্ট্র প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছে তারা সামর্থ্যের বাইরে গিয়ে নাগরিকদের অবসরভাতা, স্বাস্থ্যসেবা স্বাস্থ্য-বীমা দেয়ার অঙ্গীকারসহ বেশ কয়েকটি ভুল পদক্ষেপ নিয়েছে কারণে পরিস্থিতি নাজুক হয়ে পড়েছে উন্নয়নশীল অর্থনীতির দেশ, বিশেষ করে লাতিন আমেরিকার দেশগুলোয় পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ জনগণকে দেয়া প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে প্রয়োজনীয় ব্যয়নির্বাহের জন্য পর্যাপ্ত রাজস্ব আদায়ে ব্যর্থ সরকার সামাজিক নিরাপত্তা কার্যক্রমে ব্যাপক বৈষম্য রয়েছে গরিবের জন্য অবসর স্বাস্থ্য ভাতার ব্যবস্থা না করে শহুরে শ্রমিকদের জন্য তা করা হয়েছে ব্রাজিলের সরকারি ব্যয় উন্নত দেশের ধাঁচে হলেও জনসেবা তৃতীয় বিশ্বের ধাঁচে
১৮৮০ সালে জার্মানি অবসর ভাতা চালু করে তবে ব্রিটেন জাতীয় স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম চালু করে ১৯৪৮ সালে অর্থাত্ ইউরোপে কল্যাণরাষ্ট্র প্রবর্তন হয়েছে অর্ধ শতাব্দীরও আগে এশিয়ার কিছু দেশে এই চর্চা শুরু হয়েছে মাত্র এক দশক আগে কাজ করতে গিয়ে যদি তারা কোনো ভুল করে, বিশেষ করে জনগণকে দেয়া প্রতিশ্রুতি পূরণের ক্ষেত্রে, তাহলে গতিশীল অর্থনীতির দেশগুলো ধসে পড়বে কিন্তু এশিয়ার দেশগুলো  জনগণের জন্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে পারলে শুধু  জীবনযাত্রার মানই উন্নত হবে না, নিজেদের অনুকরণীয় মডেল হিসেবে দাঁড় করাতেও পারবে তারা

No comments:

Post a Comment

Thanks for visiting.