Monday, October 15, 2012

কেন এই স্ববিরোধিতা




সোমবার, ১৫ অক্টোবর ২০১২, ৩০ আশ্বিন ১৪১৯

গণতন্ত্রে যাহাদের ন্যূনতম বিশ্বাস আছে তাহাদের কেহ ওয়ান ইলেভেনের পুনরাবৃত্তি চাহেন না, চাহিতে পারেন না। আমাদের প্রধান দুইটি দলের নেতৃবৃন্দ হরহামেশাই সেই অগণতান্ত্রিক সরকারের বিপক্ষে বলিয়া আসিতেছেন। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন কি ধরনের সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত হইবে, তাহা লইয়া বিতর্ক থাকিলেও ওয়ান ইলেভেনের মত অগণতান্ত্রিক সরকারের পক্ষপাতী নহেন দৃশ্যত কেহই। চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বরং একপক্ষ আরেক পক্ষের দিকে এই বলিয়া আঙ্গুল তুলিতেছে যে, তাহারা ওয়ান ইলেভেন আনিবার চক্রান্তে লিপ্ত রহিয়াছে। জরুরি সেই দুঃশাসনের খলনায়কদের বিচারের দাবিও উচ্চারিত হইয়াছে বহুবার। প্রসংগত স্মরণযোগ্য যে, ২০০৭ সালে জগদ্দল পাথরের মত এই জাতির কাঁধে চাপিয়া বসিয়াছিল জরুরি অবস্থার এক কিম্ভূতকিমাকার সরকার। হরণ করা হইয়াছিল সকল মানবিক ও নাগরিক অধিকার। রুদ্ধ করিয়া দেওয়া হইয়াছিল স্বাভাবিক ন্যায়বিচারের পথ। মামলার পর মামলা দিয়া রাজনৈতিক নেতাদের চরিত্র হনন করিবার পদক্ষেপ নেওয়া হইয়াছিল। ক্যাঙ্গারু কোর্টে ক্যামেরা ট্রায়ালের মাধ্যমে বিচারের নামে করা হইয়াছে নির্লজ্জ প্রহসন। তথাকথিত সেই কোর্টে অস্ত্রের মুখে বিচারক রায় দিয়াছেন। বিবাদিগণের আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ ছিল না। ওয়ান ইলেভেনে অনেকের সাজা হইয়াছে, জেল-জরিমানা হইয়াছে। দুই প্রধান দলের শীর্ষ দুই নেতাকে কারান্তরীন করা হইয়াছিল। মামলা দেওয়া হইয়াছিল। টানা দুই বত্সর পর সাধারণ নির্বাচনের মাধ্যমে দেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হইবার পর স্বাভাবিক আদালতে সাজাপ্রাপ্তগণের অনেকেই বেকসুর খালাস পাইয়াছেন, অনেকের মামলা প্রত্যাহূত হইয়াছে।

কিন্তু বিস্ময়কর ব্যাপার এই যে, ওয়ান ইলেভেনের সরকারের বিপক্ষে সংগত কারণেই যাহারা উচ্চকণ্ঠ তাহাদেরই কেহ কেহ আবার প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করিবার জন্য ক্যাঙ্গারু কোর্টের দেওয়া সাজার কথা উল্লেখ করিয়া নিন্দামন্দ করেন, তাহাও আবার প্রকাশ্য সমাবেশে। গত ৬ অক্টোবর হবিগঞ্জের জনসভায় স্বনামখ্যাত একজন জাতীয় নেত্রী সরকারের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে নিয়োজিত আরেকজন রাজনৈতিক ব্যক্তির সমালোচনা করিতে গিয়া বলেন যে, দুর্নীতির দায়ে ঐ ব্যক্তির ১৭ বত্সর জেল হইয়াছিল। ওয়াকিফহাল মহল জানেন যে, উল্লিখিত ব্যক্তির জেল দিয়াছিল ওয়ান ইলেভেনের ক্যাঙ্গারু কোর্ট। এইদিকে গত শুক্রবার এক অনুষ্ঠানে বিরোধী দলের একজন নেতার দিকে ইঙ্গিত করিয়া প্রতারক ও দুর্নীতিবাজ বলিয়া তির্যক মন্তব্য করা হয়। পক্ষান্তরে ওয়ান ইলেভেনের মামলার কথা উল্লেখ করিয়া গত শনিবার পাল্টা মন্তব্য করেন ঐ নেতা। এইভাবে ওয়ান ইলেভেনের মামলা ও ক্যাঙ্গারু কোর্টের সাজার কথা উল্লেখ করিয়া যখন প্রতিপক্ষের নিন্দা করা হয়, তখন প্রকারান্তরে সেই সরকার ও সরকারের ক্যাঙ্গারু কোর্টকেই কি সমর্থন করা হয় না? প্রশ্ন হইল, যদি সমর্থনই করা হইবে, তাহা হইলে ওয়ান ইলেভেনের সমালোচনা করিবার কী মানে থাকিতে পারে! স্পষ্টতই ইহা অমার্জনীয় একটি স্ববিরোধিতা।

No comments:

Post a Comment

Thanks for visiting.