Friday, June 22, 2012

অ্যাডলফ হিটলার


পৃথিবীজুড়ে একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠার দুঃস্বপ্নে আচ্ছন্ন হয়েছিলেন তিনি। কিন্তু তাতে সফল হতে পারেননি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের তিক্ত পরিসমাপ্তিতে ১৯৪৫ সালের ৩০ এপ্রিল জার্মানির বার্লিন শহরের এক গোপন বাংকারে আত্দহত্যা করে পুরো পৃথিবীকে এক ভয়ঙ্কর অভিশাপ থেকে মুক্ত করে দিয়ে যান হিটলার।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ সৃষ্টির পেছনের এই অন্যতম নায়ক অ্যাডলফ হিটলার ১৮৮৯ সালের ২০ এপ্রিল অস্ট্রিয়ার ব্রাউনাউ শহরে জন্মগ্রহণ করেন। জন্মসূত্রে একজন অস্ট্রিয়ান হওয়ার পরও ১৯৩৩ সাল থেকে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত সমগ্র জার্মানিকে শাসন করেছেন তিনি। জীবনের শুরু থেকেই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ বাধানোর স্বপ্নে মাতোয়ারা হননি তিনি; বরং ইচ্ছে ছিল নামকরা চিত্রশিল্পী হওয়ার। পড়াশোনায় তেমন একটা ভালো ছিলেন না। ১৯০৭ সালে তাঁর মা মারা যাওয়ার পর তিনি ভিয়েনাতে এসে একাডেমী অব ফাইন আর্টসে ভর্তি হওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু সে বছর আর ভর্তি হতে পারেননি। হতাশা আর ব্যর্থতা আঁকড়ে ধরতে শুরু করে তাঁকে।পরবর্তী বেশ কয়েক বছর তেমন আর কিছু করা হয়নি তাঁর। জীবন থেকে অনেকটা বিচ্ছিন্ন জীবনযাপনে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন। ১৯১৩ সালে হিটলার চলে আসেন মিউনিখ শহরে। এখানে আসার পরের বছর ১৯১৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে তিনি অস্ট্রিয়ান মিলিটারি সার্ভিসে যোগ দেওয়ার চেষ্টা করেন। সেনাবাহিনীতে কাজ করার মতো পরিপূর্ণ শারীরিক যোগ্যতা তাঁর ছিল না। কিন্তু প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ময়দানে জার্মান সেনাবাহিনী এত কিছু আর যাচাই-বাছাই করেনি। জার্মানির ১৬তম ব্যারাভিয়ান রিজার্ভ ইনফেন্ট্রি রেজিমেন্টের ভলান্টিয়ার সদস্য হিসেবে কাজ করার সুযোগ পেয়ে যান তিনি। ১৯১৬ সালের অক্টোবর মাসে যুদ্ধে গুরুতর আহত হন হিটলার। দুই বছর পর প্রথম বিশ্বযুদ্ধের যখন সমাপ্তি ঘটে তিনি তখন পর্যন্ত হাসপাতালেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় ছিলেন। যুদ্ধে বীরত্ব দেখানোর জন্য তাঁকে বিভিন্ন পদক ও সম্মাননা দেওয়া হয়। কিন্তু যুদ্ধে জার্মানির পরাজয় হিটলারকে বিক্ষুব্ধ ও ক্রুদ্ধ করে তোলে। ১৯১৯ সালে ৩০ বছর বয়সে হিটলার মিউনিখের ছোটখাটো একটি ডানপন্থী দলে যোগ দেন। কিছুদিন পরেই এই পার্টির নাম পাল্টে রাখা হয় ঘধঃরড়হধষ ঝড়পরধষরংঃ বেৎসধহ ডড়ৎশবৎং' চধৎঃু সংক্ষেপে নাৎসি। পার্টিতে যোগ দেওয়ার দুই বছরের মধ্যে হিটলার হয়ে উঠলেন এই নাৎসি পার্টির অবিসংবাদিত নেতা। জার্মান ভাষায় যাকে বলা হতো ফুয়েরার।
হিটলারের নেতৃত্বে নাৎসি পার্টি দ্রুত শক্তি সঞ্চার করতে থাকে। ১৯২৩ সালের নভেম্বরে নাৎসিরা একটি ব্যর্থ অভ্যুথান প্রচেষ্টা চালায়। ইতিহাসে এটি ঞযব গঁহরপয ইববৎ ঐধষষ চঁঃংপয নামে খ্যাত। অভ্যুথান প্রচেষ্টা বরবাদ হয়ে গেলে হিটলার ধৃত ও কারারুদ্ধ হন। কিন্তু এক বছরেরও কম সময় জেল খাটার পর মুক্তি পেয়ে যান তিনি। ১৯২৮ সালেও নাৎসি পার্টির পরিসর অতটা চোখে পরার মতো ছিল না। কিন্তু তিরিশের দশকের শুরুতে অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দেওয়ার পর জার্মানির রাজনৈতিক অবস্থা পাল্টে যেতে শুরু করে।
জার্মানির পুরনো রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি জার্মানির সাধারণ মানুষ বীতশ্রাদ্ধ হয়ে পড়ে। এই সুযোগে ১৯৩৩ সালে জানুয়ারি মাসেই জার্মানির শাসন ক্ষমতায় চলে আসে নাৎসিরা। আর হিটলার হয়ে যান জার্মানির চ্যান্সেলর। তাঁর বয়স তখন ৪৪ বছর। চ্যান্সেলর হয়েই হিটলার খুব দ্রুত একনায়কত্ব কায়েম করতে শুরু করেন। বিরোধী মতামতের তোয়াক্কা না করেই নিজের মতো করে জার্মানিকে শাসন করতে শুরু করেন। হিটলার যখন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের নকশা আঁকতে শুরু করেছিলেন তখন কারো পক্ষেই তাঁকে বাধা দেয়া সম্ভব হয়নি। হিটলার যখন ভার্সাই চুক্তি অমান্য করেন তখন ব্রিটেন কিংবা ফ্রান্স কেউ কোনো প্রতিবাদ করার সময় পায়নি। নিজেদের অর্থনৈতিক সমস্যার সমাধান নিয়েই ক্রমাগত হিমশিম খেয়ে যাচ্ছিল তারা। আশপাশে সবাই এমন নিশ্চুপ থাকায় ১৯৩৬ সালের মার্চে রাইনল্যান্ড দখল করে নেন হিটলার। ১৯৩৮ সালের মার্চে অস্ট্রিয়াকে সংযুক্ত করলেন জার্মানির সঙ্গে। ওই বছরেরই সেপ্টেম্বরে হিটলার যখন চেকোস্লাভিয়ার সুরক্ষিত সীমান্ত পেরিয়ে সুডেটানল্যান্ড দখল করে নিলেন তখনো নিশ্চুপ ছিল ফ্রান্স এবং ব্রিটেন। চেকোস্লাভিয়ার সাহায্যে কোনো দেশ এগিয়ে না আসায় হিটলার কয়েক মাস পরেই সমগ্র দেশটাই কব্জা করে নিলেন।
কিন্তু হিটলারের পরবর্তী টার্গেট পোল্যান্ড রক্ষার্থে ব্রিটেন এবং ফ্রান্স বদ্ধপরিকর ছিল। হিটলার প্রথমত নিজের সুরক্ষার খাতিরে ১৯৩৯ সালের অগস্টে স্টালিনের সঙ্গে অনাক্রমণ চুক্তি স্বাক্ষর করেন। এই চুক্তির ৯ দিন পর জার্মানি পোল্যান্ড আক্রমণ করল। আর চুক্তির ষোল দিন পর সোভিয়েত ইউনিয়ন আক্রমণ চালাল পোল্যান্ডে। এদিকে ইংল্যান্ড ও ফ্রান্স জার্মানির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করল।
এভাবেই তার হিটলার একে একে জড়িয়ে ফেললেন অনেকগুলো দেশকে, আর লাগিয়ে দিয়েছিলেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ।