Thursday, October 18, 2012

দুর্যোগের ঝুঁকি ও ব্যবস্থাপনা


দুর্যোগের ঝুঁকি ও ব্যবস্থাপনা

বৃহস্পতিবার, ১৮ অক্টোবর ২০১২, ৩ কার্তিক ১৪১৯
বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসে গত বৃহস্পতিবার জাতিসংঘ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট ফর এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড হিউম্যান সিকিউরিটি, অ্যালায়েন্স ডেভেলপমেন্ট ওয়ার্কস এবং দি নেচার কনজারভেন্সি দুর্যোগ ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলির তালিকা প্রকাশ করিয়াছে। তালিকা অনুযায়ী দুর্যোগ ঝুঁকির দিক হইতে বিশ্বের ১৭৩টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান পঞ্চম স্থানে। বৈশ্বিক পর্যায়ে উষ্ণতা বৃদ্ধি ও পরিবেশগত বিপর্যয়ের কারণে ঝড়, বন্যা, খরা ও ভূমিকম্পের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের হার দিন দিন বাড়িতেছে। একই কারণে কমিতেছে দুর্যোগ মোকাবিলার সক্ষমতা। আর এই দুইয়ে মিলিয়া ক্রমে বাড়িয়া চলিয়াছে দুর্যোগে ক্ষয়ক্ষতির ঝুঁকি। কিন্তু, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা লইয়া চারিদিকে সভা, সেমিনার, প্রশিক্ষণ ইত্যাদি মিলিয়া যথেষ্ট তোড়জোড় চলিলেও এদেশের মানুষ এখনও প্রবল ঝুঁকির মধ্যে বাস করিতেছে বলিয়াই উক্ত প্রতিবেদন প্রতীয়মান করিতেছে।
অন্যদিকে, উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষজন নিয়মিতভাবে জানমাল খুয়াইয়া কাগজে প্রতিবেদনটির সত্যতা প্রমাণ করিতেছে। রিপোর্ট প্রকাশিত হইবার মাত্র একদিন আগেই গত বুধবার আকস্মিক টর্নেডোর আঘাতে নোয়াখালী, ভোলা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজারসহ উপকূল অঞ্চল লণ্ডভণ্ড হইয়া গিয়াছে। নারী-শিশুসহ কমপক্ষে ৪৫ জনের মৃত্যুর খবর পত্রিকাগুলিতে বাহির হইয়াছে। এখন পর্যন্ত সহস্রাধিক জেলে এবং দুই শতাধিক ট্রলার নিখোঁজ রহিয়াছে। এই ঘূর্ণিঝড়ে হাজার হাজার ঘরবাড়ি, গাছপালা এবং শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান বিধ্বস্ত হইয়াছে। সেই সঙ্গে ২৫ হাজার একরেরও বেশি ফসলি জমি ক্ষতিগ্রস্ত হইয়াছে। ঝড়ের তোড়ে ভাসিয়া গিয়াছে অসংখ্য ট্রলার ও জেলে নৌকা। আকস্মিক এই ঝড়ে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হইয়াছে নোয়াখালীর হাতিয়া। ভোলা, নোয়াখালী ও চট্টগ্রামের জেলা কর্তৃপক্ষ বলিয়াছে, যদিও সেখানে আগে হইতেই তিন নম্বর সতর্কবার্তা ছিল, কিন্তু একটি ঝড় আসিতে যাইতেছে এইরূপ কোনো তথ্য তাহাদের কাছে ছিল না। সতর্কীকরণের এই ব্যর্থতার কারণে অসংখ্য জেলে নৌকা নির্ভয়ে মাছ ধরিতে গিয়া এখনও নিখোঁজ হইয়া রহিয়াছে। কিন্তু, সেই নিখোঁজদের উদ্ধারে কিংবা দুর্গতদের কাছে ত্রাণ পৌঁছাইতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো তত্পরতা নাই বলিয়া অভিযোগ পাওয়া যাইতেছে। নদীর মোহনায় জেলেরা অনেকের লাশ ভাসিতে দেখিলেও উদ্ধার তত্পরতা না থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করিতেছে নিখোঁজ জেলেদের স্বজনরা।
প্রযুক্তির এই অভূতপূর্ব উন্নয়নের যুগে সতর্কবার্তা প্রদানের ব্যর্থতা ও গাফিলতি ঠিক মানিয়া লওয়া যায় না। একটু সতর্ক হইলেই অসংখ্য অমূল্য জীবন ও সম্পদ রক্ষা পাইতো। একইভাবে আমরা দেখিতেছি, দুর্যোগ পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণের ঢিমে তাল প্রত্যন্ত উপকূলীয় জনপদগুলির আক্রান্তদের জীবন দুর্বিষহ করিয়া তুলিয়াছে। সতর্কতা, সচেতনতা ও দায়বদ্ধতার চর্চা গড়িয়া তোলা দুর্যোগ ঝুঁকি মোকাবিলার জন্য অত্যন্ত জরুরি। কিন্তু সেইরূপ রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও প্রশাসনিক তত্পরতা আমরা দেখিতে পাইতেছি না। যদিও বাংলাদেশের মানুষ অত্যন্ত দুর্যোগ-সহনশীল ও লড়াকু ; তবু উষ্ণতা বৃদ্ধি ও পরিবেশগত পরিবর্তন তাহাদের জীবন ও জীবিকা প্রবলভাবে হুমকিগ্রস্ত করিয়া তুলিয়াছে। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পরিবেশ বিপর্যয়কারী দেশগুলির নিকট হইতে ইতোপূর্বে বাংলাদেশ তাহার হিস্যা আদায়ে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়াছে। কিন্তু, ক্ষতিপূরণ আদায়ের জন্য জোটবদ্ধভাবে তত্পরতা চালাইবার যোগ্য হইয়া উঠিবার বিকল্প নাই। একইভাবে, স্থানীয় পর্যায়ে দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাস করিতে উপকূল জুড়িয়া সবুজ বেষ্টনী নির্মাণসহ নানামুখী তত্পরতা গ্রহণে আর বিলম্ব করিলে বিপর্যয় এড়ানো যাইবে না।

No comments:

Post a Comment

Thanks for visiting.