Sunday, October 14, 2012

কূটনৈতিক দক্ষতার উপর প্রাপ্তি নির্ভর করে


কূটনৈতিক দক্ষতার উপর প্রাপ্তি নির্ভর করে

রবিবার, ১৪ অক্টোবর ২০১২, ২৯ আশ্বিন ১৪১৯

অধ্যাপক ড. দেলোয়ার হোসেন
চেয়ারম্যান, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
++সাক্ষাত্কার নিয়েছেন  মাহবুব রনি 

প্রশ্ন : ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের প্রতীক্ষিত সফর হতে যাচ্ছে- এ সফরকে আপনি কিভাবে মূল্যায়ন করছেন?
উত্তর : দুই দেশের মধ্যেই বেশ কিছু ইস্যু রয়েছে যা সম্পর্কে দুই দেশের শীর্ষ পর্যায়ের বৈঠক জরুরি ছিল। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর শীর্ষ পর্যায়ের যোগাযোগের সুযোগ বেড়েছে। তাই দুই দেশের সম্পর্ক উন্নয়নে মনমোহন সিংয়ের এ বাংলাদেশ সফর অনেক বেশী তাত্পর্যপূর্ণ।
প্রশ্ন : এ সফরে বাংলাদেশের প্রাপ্তি কী হবে বলে আপনি মনে করেন?
উত্তর : এ সফরে ঠিক কতগুলো বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা সম্ভব হবে, সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট করে কিছু বলা যাচ্ছে না। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতিতে অনেক বেশী গোপনীয়তা রক্ষা করা হয়। তাই কতগুলো বিষয়ে দ্বি-পক্ষীয় চুক্তি হবে তা বলা যাচ্ছে না। এ সফরের মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক যোগাযোগ ও সম্পর্ক আরো জোরদার হবে। দেশের স্বার্থ সংরক্ষণের জন্যই এ যোগাযোগ। তাই সরকার এ সফরে কতটুকু কূটনৈতিক দক্ষতা দেখাতে পারে  তার উপর বাংলাদেশের প্রাপ্তি নির্ভর করছে।
প্রশ্ন : এ সফরকে ঘিরে আপনার প্রত্যাশা কী?
উত্তর : ভারতের প্রধানমন্ত্রীর এ সফরে দুই দেশের বাণিজ্য ঘাটতি, ট্রানজিট-ট্রান্সশিপমেন্ট, সীমান্ত সমস্যা, সীমান্ত হত্যা, তিস্তা পানি বন্টন, ছিট মহল, সন্ত্রাস বিরোধী কার্যক্রম, বিরোধপূর্ণ ভূমি নিয়েও আলোচনা হবে বলে জানা গেছে। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ ভারতের চেয়ে বেশী আন্তরিকতা ও ছাড় দেয়ার মানসিকতা প্রমাণ করেছে। তাই এ সফরে ভারত বাংলাদেশের প্রতি কতটুকু আন্তরিক, তার প্রমাণ দিতে হবে। দুই দেশের মধ্যে অমীমাংসিত সবগুলো বিষয় নিয়ে শীর্ষ পর্যায়ের আলোচনা প্রয়োজন। তবে এ সফরেই যে সব বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে, তা নয়। তবে পরবর্তীতে কূটনৈতিক মীমাংসায় পৌঁছতে এ আলোচানা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
প্রশ্ন : এ সফরে দীর্ঘ দিনের সীমান্ত সমস্যা নিরসন হতে যাচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে, এ বিষয়ে আপনি কী মনে করেন?
উত্তর : বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে সবচেয়ে উদ্বেগজনক বিষয় হচ্ছে- নিয়মিত বিরতিতে বিএসএফের হাতে বাংলাদেশীদের হত্যা। এ বিষয়ে ভারত সরকারের ঊর্ধ্বতন পর্যায় থেকে বারবার বাংলাদেশকে আশ্বস্ত করা হলেও মাঠ পর্যায়ে তার বাস্তবায়ন নেই। ছিট মহল সমস্যা অনেক পুরনো। এছাড়া সীমান্তের সাড়ে ছয় কিলোমিটার সীমানা চিহ্নিত করা হয়নি। মনমোহন সিংয়ের সফরে এ বিষয়ে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে বলে আশা করছি। তবে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য ভারত সরকারকে আরো দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে।
প্রশ্ন : ট্রানজিট নিয়ে অনেক আলাপ-আলোচনা হচ্ছে। ট্রানজিট চুক্তি কি সম্ভব হবে? এতে বাংলাদেশের লাভ কতটুকু?
উত্তর : এ সফরে ট্রানজিট বিষয়ে চূড়ান্ত চুক্তি নাও হতে পারে। দুই দেশের কূটনৈতিক কৌশলের উপর তা নির্ভর করছে। তবে ট্রানজিট চুক্তির ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে অবশ্যই আর্থিক লাভ ও নিরাপত্তার বিষয়টি গুরুত্ব দিতে হবে। বাংলাদেশের অভ্যন্তরেই একটি সেতু পার হতে হলে দেশী যানগুলোকে মাশুল দিতে হয়। সেখানে ভারত বাংলাদেশের ভূমি ব্যবহার করে নিজ দেশের এক ভূখণ্ড থেকে অন্য ভূখণ্ডে যাবে। তাদের আর্থিক লাভ বেশী হবে। তাই বিনা মাশুলে কিংবা অল্প মাশুল নিয়ে ভারতকে ট্রানজিট সুবিধা দেয়া উচিত হবে না। এ বিষয়ে চুক্তি স্বাক্ষরিত হলে অবশ্যই প্রয়োজনীয় সব বিষয়ে স্পষ্টতা থাকতে হবে। সামরিক ব্যবহার নিষিদ্ধ করতে হবে। এছাড়া বিশ্বের কোথাও এ ধরনের ট্রানজিট সুবিধা দেয়া হয় বলে আমার জানা নেই। সাধারণত এক দেশ থেকে অন্য দেশের উপর দিয়ে তৃতীয় দেশে ট্রানজিট সুবিধার প্রচলন রয়েছে; কিন্তু এক দেশের ভূমি ব্যবহার করে অন্য দেশের দুইটি ভূখণ্ডে যাতায়াতের সুবিধা দেয়ার নজির নেই। সবমিলিয়ে চুক্তিটি দীর্ঘ মেয়াদী করা উচিত হবে না। যেহেতু ভূমি বাংলাদেশের তাই চুক্তিতে বাংলাদেশের আধিপত্যও থাকতে হবে।
প্রশ্ন : দুই দেশের মধ্যে বিশাল বাণিজ্য ঘাটতি রয়েছে। এ ঘাটতি কমাতে এ সফর কোনো ভূমিকা রাখবে কিনা?
উত্তর : এ সফরের মাধ্যমে দুই দেশের আস্থার সংকট অনেকটা কমবে। ইতিমধ্যে বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে দুই দেশের সরকারি ও ব্যবসায়ী পর্যায়ে একাধিক বৈঠক হয়েছে। তাই এ সফরের মাধ্যমে এ ঘাটতি কিছুটা হলেও কমবে বলে আশা করা যায়।
প্রশ্ন : ইতিমধ্যে ভারতের বিভিন্ন বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনের কয়েকজন নেতাকে হস্তান্তর করা হয়েছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে ভারতের মনোভাব আসলে কেমন?
উত্তর : ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদীরা বাংলাদেশে আশ্রয় পাচ্ছে, এজন্য দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশ সরকারকে দীর্ঘদিন ধরে দায়ী করেছে ভারত। বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতাদের আটক ও হস্তান্তর এ ক্ষেত্রে সম্পর্ক উন্নয়নে কাজ করেছে। এবার ভারত সরকারকে বাংলাদেশের স্বার্থের প্রতি সম্মান ও উদারতার পরিচয় দিতে হবে।

No comments:

Post a Comment

Thanks for visiting.