Tuesday, October 16, 2012

সাংসদদের আমলনামা - প্রথম আলো


দলগত সংসদ বর্জন নিরোধ আইন আবশ্যক

সাংসদদের আমলনামা

তারিখ: ১৬-১০-২০১২
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) সমীক্ষায় জাতীয় সংসদের সাংসদদের আইন ও সংসদবহির্ভূত কার্যক্রমে ব্যাপকভাবে সম্পৃক্ত থাকার একটি দুঃখজনক চিত্র ফুটে উঠেছে। নির্বাচিত ব্যক্তিদের দ্বারা দেশের রাজনৈতিক প্রক্রিয়া নানাভাবে কলুষিত হয়ে চলেছে। এ জন্য প্রধানত সংসদের বিরোধী দলের গত দুই দশকের লাগাতার সংসদ বর্জনকে চিহ্নিত করা চলে। প্রবাদ আছে, নেই কাজ তো খই ভাজ। সংসদে আইন প্রণয়ন ও তার প্রয়োগ নিশ্চিত করা এবং রাষ্ট্রের নির্বাহী অঙ্গের দ্বারা উন্নয়ন কার্যক্রম তদারকি ও সার্বিকভাবে সরকারি কাজের জবাবদিহি নিশ্চিত করা সংসদের প্রধান কর্তব্য। কিন্তু বাংলাদেশে তাদের ‘উন্নয়ন’ কার্যক্রম বাস্তবায়নের তৎপরতা দেখে প্রতীয়মান হয়, এই কাজই তাদের জন্য মুখ্য, আর সবকিছুই গৌণ। ইদানীং অনেকে সরকারের সঙ্গে লাভজনক কাজ বা বাণিজ্যেও জড়াচ্ছেন।
৫৩ শতাংশ সাংসদের অপরাধবিষয়ক তৎপরতায় প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে সম্পৃক্ত হওয়া কিংবা তেমনটা প্রতীয়মান হওয়া প্রমাণ করে, সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ সংযোজনের উদ্দেশ্য মুখ থুবড়ে পড়ে আছে। দলীয় শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য ৭০ অনুচ্ছেদ যুক্ত করা হয়েছিল। কিন্তু এখন আমরা বলতে পারি, টিআইবির গবেষণা সঠিক হলে দলীয় শৃঙ্খলা বলতে আর সামান্যই অবশিষ্ট রয়েছে। সে কারণে টিআইবির তরফে ৭০ অনুচ্ছেদ সংশোধন, বিরোধী দল থেকে ডেপুটি স্পিকার নিয়োগ এবং স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকারকে নিজ নিজ দলের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার সুপারিশ বোধগম্য।
১৯৯৩-৯৪ থেকে সংসদে বিরোধী দলের ন্যূনতম উপস্থিতি যে তিক্ত অভিজ্ঞতা সৃষ্টি করেছে, তার আলোকে দলগত ও পদ্ধতিগতভাবে সংসদ বর্জনের চলতি ধারা অবশ্যই আইন করে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। এটা ক্ষমতাসীন দলের জন্য একটি নৈতিক চ্যালেঞ্জও সৃষ্টি করেছে। এর আগে আমরা দেখেছি, পঞ্চদশ সংবিধান সংশোধন বিল পাস উপলক্ষে গঠিত সংসদীয় বিশেষ কমিটি একাদিক্রমে ৯০ দিন সংসদে অনুপস্থিত থাকার বিধান সংশোধন করার প্রস্তাব দিয়েছিল। কিন্তু তা অস্বচ্ছ ও অদৃশ্য সিদ্ধান্তে প্রত্যাখ্যাত হয়েছে। অথচ গণতন্ত্রের ভিত্তি মজবুত করতে হলে সংসদকে সব রাজনৈতিক দলের মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হতে হবে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য বিরোধী দলের চলতি সংসদ বর্জন একটি বাজে অজুহাত। তার কারণ, তত্ত্বাবধায়ক সরকার সংবিধানে বহাল থাকা এবং তার অধীনে অনুষ্ঠিত অবাধ নির্বাচনের পরও বিরোধী দলকে সংসদমুখী হতে দেখা যায়নি। সুতরাং, তত্ত্বাবধায়ক সরকার শুধু সুষ্ঠু নির্বাচন এনে দিলেও সংসদীয় রাজনীতিকে শক্তিশালী করে না। আর সংসদীয় রাজনীতি ছাড়া দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার ধারাবাহিকতা বজায় রাখার হুমকি মোকাবিলা করা সম্ভব নয়।
সুতরাং, বিরোধী দলকে শায়েস্তা করার মনোভাব থেকে নয়, সরকারি দল যে নিজেরাই জাতীয় সংসদকে কার্যকর দেখতে চায়, নির্বাহী কার্যক্রমে অহেতুক বাগড়া দিতে চায় না, সেটা প্রমাণের জন্য তাদের দলগতভাবে সংসদ বর্জন নিরোধ আইন পাস করতে হবে।

No comments:

Post a Comment

Thanks for visiting.